নিজস্ব প্রতিনিধি: দিন কে দিন দেশে চিকিৎসার খরচ হু হু করে বেড়ে চলেছে। সেই খরচা সব সময় যে মানুষের সাধ্যের মধ্যে থাকে তেমনটাও নয়। বরঞ্চ অনেক সময়েই দেখা যায় কিছু কঠিন রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেকেই কার্যত নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। সেই অবস্থা যাতে না হয় তার জন্য অনেকেই নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য Mediclaim করাচ্ছেন। কিন্তু তারপরেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, চিকিৎসার পর সেই বিমার টাকা পেতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। নানা শর্ত এবং নিয়মের গেরোয় অনেক সময়ই দাবিমতো পুরো টাকা মিলছে না। আর হাসপাতালে ভর্তি হতে না হলে তো ‘ক্লেম’-এর কোনও বালাই নেই। অধিকাংশ স্বাস্থ্যবিমাতেই বাড়িতে চিকিৎসা বা ২৪ ঘণ্টার কম সময় হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে ‘ক্লেম’ পাওয়া যায় না। অবশেষে সেই সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ করল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) নিজ রাজ্য গুজরাতের(Gujrat) এক ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। গুজরাতের ভদোদরার Consumar Forum একটি মামলায় সাফ জানিয়ে দিয়েছে, Mediclaim’র টাকা পেতে হাসপাতালে ভর্তি জরুরি নয়। বাড়িতে চিকিৎসার ক্ষেত্রেও ‘ক্লেম’ করা যাবে স্বাস্থ্যবিমার টাকা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কোনওভাবে বঞ্চিত করতে পারবে না বিমা সংস্থা।
আরও পড়ুন মধ্যপ্রদেশে ৩ বছরে কর্মসংস্থান কেন্দ্র থেকে চাকরি মাত্র ২১ জনের!
ঠিক কী হয়েছে? জানা গিয়েছে, ভদোদরার বাসিন্দা রমেশচন্দ্র যোশি। তাঁর স্ত্রী চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে আমেদাবাদের একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরদিনই চিকিৎসা শেষে তাঁকে ছুটি দিয়ে দেন ডাক্তাররা। হাসপাতালের খরচ বাবদ ৪৪ হাজার ৪৬৮ টাকা মেটানোর দাবি জানিয়ে বিমা সংস্থার কাছে যাবতীয় বিল জমা দিয়েছিলেন রমেশবাবু। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ সেই আর্জি খারিজ করে দেয়। সংস্থাটির যুক্তি ছিল, টানা ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালে ভর্তি না থাকলে ক্লেম পাওয়া যাবে না। বিমার চুক্তিপত্রেও এই শর্তটি উল্লেখ করা ছিল। এরপরই রমেশবাবু Consumar Forum’র দ্বারস্থ হন। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে National Insurance Company’র বিরুদ্ধে সেই মামলায় দায়ের হয়েছিল। রমেশবাবু আদালতে নথি পেশ করে দেখান যে, ২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর বিকেল ৫টা ৩৮ মিনিটে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী। আর পরদিন ২৫ নভেম্বর সন্ধে সাড়ে ছ’টায় তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়। অর্থাৎ, ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় হাসপাতালে ছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন ইস্তফা ফেরাচ্ছেন বিগ বাজারের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর বিয়ানি
ওই মামলার রায়ে ভদোদরার ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারকের সাফ বক্তব্য, ‘আধুনিক যুগে বাজারে নতুন নতুন চিকিৎসা ব্যবস্থা ও ওষুধপত্র আসছে। ফলে রোগীরা আগের থেকে অনেক দ্রুত এবং অনেক সময় হাসপাতালে ভর্তি না হয়েই সেরে উঠছেন। আর এসব ক্ষেত্রে বিমা কোম্পানি কখনওই সংশ্লিষ্ট রোগীর ক্লেম নাকচ করতে পারে না।’ অভিযোগকারীকে প্রাপ্য অর্থ অবিলম্বে মিটিয়ে দিতে বিমা সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। শুধু তাই নয়, মানসিক হয়রানি এবং আইনি খরচ বাবদ অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকাও তাদের কাছ থেকে পাবেন রমেশবাবু। বিচারক এটাও জানিয়েছেন যে, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৌলতে কেউ তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠলে, সেটা তার স্বাস্থ্য বিমার পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে না।