নিজস্ব প্রতিনিধি, হায়দরাবাদ: দেশে ধর্মের বিষ কতটা ছড়িয়েছে তার জলজ্যান্ত প্রমাণ মিলল হায়দরাবাদে। এক মুসলিম তরুণীকে বিয়ে করায় বুধবার রাতে প্রকাশ্য রাস্তায় খুন করা হল এক হিন্দু যুবককে। ঘটনার ভিডিয়ো সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। মর্মান্তিক ঘটনায় সাম্প্রদায়িক রং লাগাতে আসরে নেমেছেন বিজেপি নেতারা। হিন্দু-মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিতে লাগাতার প্রচার চালিয়ে চলেছে গেরুয়া শিবির। যদিও ঘটনার পিছনে সাম্প্রদায়িক কোনও রং নেই বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন হায়দরাবাদের এসিপি শ্রীধর রেড্ডি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কলেজে পড়ার সময় থেকেই প্রেমে পড়েছিলেন হায়দরাবাদের সারুরনগরের বাসিন্দা বিল্লাপুরাম নাগরাজু ও আসরিন সুলতানা। দুজনেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু ভিন ধর্মে ছেলে ও মেয়ের বিয়ে মেনে নিতে পারেনি দুই পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের সেই আপত্তিকে অগ্রাহ্য করে গত জানুয়ারি মাসে একটি মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করেন নাগরাজু এবং আসরিন সুলতানা। বিয়ের পরে আসরিন নিজের নাম বদলে পল্লবী রাখেন। গত তিন মাস ধরে সুখেই সংসার করছিলেন।
কিন্তু বিপত্তি ঘটে বুধবার রাতে। স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাইকে করে অন্যত্র যাচ্ছিলেন নাগারাজু। আচমকাই তাদের পথ আটকায় দুই ব্যক্তি। তার পরে কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারতে থাকে নাগারাজুকে। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে নাগারাজু। চোখের সামনেই এক নিরস্ত্রকে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করতে দেখলেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত পথচারিদের কেউ এগিয়ে আসেননি। উল্টে ঘটনার ভিডিও রেকর্ডিং করতেই ব্যস্ত ছিলেন। স্বামীকে বাঁচানোর জন্য আকুল আর্তি জানান নাগারাজুর স্ত্রী আসরিন। কিন্তু নিস্ফল থেকে যায় সেই আবেদন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে লুটিয়ে পড়ে নাগারাজু।
ঘটনার তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে আসরিনের পরিবারের কয়েকজন সদস্য যেমন রয়েছে, তেমনই নাগারাজুর ভাইয়ের স্ত্রীও রয়েছে। ঘটনাকে অনার কিলিং হিসেবে মানতে রাজি হননি হায়দরাবাদের এসিপি শ্রীধর রেড্ডি। তাঁর কথায়, ‘তদন্ত সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা সম্ভব নয়।’