এই মুহূর্তে

রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রাই বদলে দিল মোদি-মমতার রসায়ন

কৌশিক দে সরকার: বিরোধিতা শুরু হয়েছিল উনিশের লোকসভা নির্বাচনেরও বহু আগে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের কালে তা চরমে ওঠে। অনেকেই ভেবেছিলেন ভোট মিটলে বিরোধের আঁচও কমবে। কিন্তু তা তো কমেনি, উল্টে তা আরও চড়েছিল। ঠিক ততটাই খারাপও হচ্ছিল কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক। বঞ্চিত হচ্ছিল বাংলা। ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছিল কেন্দ্রেরও। কিন্তু কোনও পক্ষের কাছেই ছিল না এই সমস্যা ও বিরোধ থেকে বেড়িয়ে আসার পথ। হুট করে সেই বিবাদের ঘনঘটা সরিয়ে, সঙ্ঘাতের আবহ ঘুচিয়ে, নৈকট্য ও সৌজন্যতার বাতাবরণ তৈরি করে দিলেন দেশেরই এক নেতা, যাকে বিরোধী কোনও দলই পাত্তা দেন না খুব একটা। বরঞ্চ কিছুটা হেয় করেন, খাটো করেন, ব্যাঙ্গ করেন। কিন্তু তাঁর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ই বদলে দিল বাংলার সঙ্গে কেন্দ্রের সম্পর্ক। তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক। সর্বোপরি দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) সঙ্গে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সম্পর্ক। দেশের রাজনীতিবিদরা এখন অবাক চোখে দেখছেন রাজীবতনয়কে। দেখছেন তাঁর ভারত জোড়ো যাত্রা(Bharat Joro Yatra) কীভাবে বিরোধী শিবিরকেও জুড়ে দিচ্ছে। নজরে রাহুল গান্ধি(Rahul Gandhi)।  

আরও পড়ুন আধার ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক, রাজ্যকে নয়া নির্দেশ কেন্দ্রের

দেশকে একসূত্রে বাঁধতে কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর ভারত জোড়ো যাত্রা শুরু করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি। সেই পদযাত্রা নজর কেড়ে নিয়েছে দেশের সব সংবাদমাধ্যমের। নজর কেড়ে নিয়েছে সব রাজনৈতিক দলের। নজর কেড়েছে দেশের সব ধরনের মহলের। নজর কেড়েছে আমজনতারও। ইন্দিরার নাতি তথা রাজীবের ছেলেকে দেখতে, তাঁকে একটু ছুঁতে, তাঁর কথা শুনতে, তাঁর সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে একটু হাঁটতে দলে দলে মানুষ এগিয়ে আসছেন। কংগ্রেস সমর্থক থেকে সাধারণ মানুষ মায় সেলিব্রিটিরাও রাহুলের এই পদযাত্রায় পা মিলিয়েছেন। আর এখানেই ঘুম ছুটেছে গেরুয়া শিবিরের। গত ৮ সেপ্টেম্বর তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারিকা থেকে শুরু হয়েছে রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রা। প্রথমদিকে এই মানুষের ঢল কিন্তু দেখা যায়নি রাহুলের সঙ্গে। কিন্তু সময় যতই গড়িয়েছে রাহুলের পদযাত্রায় মানুষের ভিড় ততই বেড়ে চলেছে। কন্যাকুমারিকা থেকে কোচিন হয়ে কেরলের মাটি ছেড়ে পদযাত্রা প্রবেশ করেছে কর্ণাটকের মাটিতে। মাইসুরু ও বেল্লারি ছুঁয়ে তা প্রবেশ করেছে তেলেঙ্গানার বুকে। সেখানকার ভিকরাবাদ ছুঁয়ে তা পা রেখেছে মহারাষ্ট্রের নানদেদে। তারপর জলগাঁও ছুঁয়ে সেই পদযাত্রা এখন রয়েছে মধ্যপ্রদেশে। এরপর রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, পঞ্জাব, জম্মু হয়ে তা পৌঁছাবে কাশ্মীরের শ্রীনগরে। মোট ৩ হাজার ৫৭০কিমি পথ। ছুঁয়ে যাবে ১২টি রাজ্যকে। একসূত্রে বাঁধা পড়বে কেরল, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, পঞ্জাব, জম্মু এবং কাশ্মীর।

আরও পড়ুন তিক্ততা কাটিয়ে উঠতে চায় শান্তিকুঞ্জ, যেতে পারেন মমতাও

ইত্রিমধ্যেই এই পদযাত্রা ২১৭৪কিমি পথ অতিক্রম করে ফেলেছে। ৭টি রাজ্যের ৩৪টি জেলাকে ছুঁয়ে গিয়েছে এই পদযাত্রা। সেই পদযাত্রা কার্যত বুঝিয়ে দিচ্ছে প্রতি পদে পদে ২০২৪ এর লড়াই বেশ কঠিন হতে চলেছে বিজেপির কাছে। আরএসএস অনেক আগেই বিপদের ইঙ্গিত পাঠিয়েছিল মোদির কাছে। অন্তত সূত্রে তেমনটাই জানা গিয়েছিল। সেই সঙ্গে তাঁরা এটাও জানা গিয়েছিল, ২৪ এর লড়াই শেষে বিজেপি একক ক্ষমতায় কেন্দ্রের ক্ষমতায় নাও ফিরতে পারে। সেক্ষেত্রে মোদির প্রয়োজন হবে আঞ্চলিক দলগুলিকে। যার অন্যতম হলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কার্যত সঙ্ঘের তরফে মোদিকে বার্তা দিয়েই দেওয়া হয়েছে এনডিএ-কে ফের চাঙ্গা করতে। মমতার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে। মমতার লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রী পদ। কিন্তু কংগ্রেস কোনওদিনই তাঁকে সমর্থন জানাবে না। আবার মোদিকে বেশ কিছু আঞ্চলিক দল সমর্থন নাও জানাতে পারেন। কিন্তু মমতাকে প্রধানমন্ত্রী পদে সমর্থন জানাতে তাঁদের আপত্তি নেই। এই তালিকায় থাকবে সমাজবাদী পার্টি, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, ডিএমকে, আপ, শিবসেনা, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার মতো দলগুলি।

আরও পড়ুন রাজনীতির লড়াই থাকবে, কিন্তু ব্যক্তিগত বিরোধ নয় : ফিরহাদ

রাহুল তথা কংগ্রেসকে ঠেকাতে সম্ভবত মোদি ও সঙ্ঘ সেই গেমপ্ল্যান শুরু করে দিয়েছে। মোদি নিজে চান তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হতে। কিন্তু কোনও কারণে তা না হলে তখন তিনি মমতাকেই এগিয়ে দিতে পারেন এনডিএ’র প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য। সম্ভবত ডিসেম্বরে মোদি-মমতা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর তরফেই তৃণমূলনেত্রীর কাছে প্রস্তাব দেওয়া হবে এনডিএ-তে যোগ দেওয়ার জন্য। হয়তো মমতা এখন তাতে সায় দেবেন না। কিন্তু ২৪ এর ভোটের পরেও যে তিনি একই মত নিয়ে চলবেন তা নাও হতে পারে। রাজনীতি চিরকালই সম্ভাবনার খেলা। পাটিগণিতের খেলা। রাহুলের পদযাত্রা সেই অঙ্কের হিসাবনিকেষটাই শুরু করিয়ে দিয়েছে বিরোধী শিবিরে। কাছাকাছি আসছে তৃণমূল-বিজেপি, কেন্দ্র-রাজ্য, মোদি-মমতা। বাকিটার উত্তর দেবে ভবিষ্যতকাল। আপাতত শুধুই অপেক্ষা।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

কংগ্রেসকে ১৭০০ কোটি টাকা শোধের নোটিশ আয়কর দফতরের

নিজস্বীর দৌলতেই রহস্যভেদ রেল যাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর

কেজরির ফোনে আড়ি পাতার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি, অভিযোগ আপ নেত্রীর

কেজরিওয়ালের গ্রেফতারি নিয়ে মুখ খুললেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব

রাস্তা থেকে ছিটকে খাদে পড়ল গাড়ি, জম্মু-কাশ্মীরে নিহত ১০

কেজরির গ্রেফতারির বিরুদ্ধে সরব অমর্ত্য

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর