এই মুহূর্তে




Rath Yatra 2025: পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের পবিত্রতম স্থান কোনটি, জানেন কী?




পৃথ্বীজিৎ চট্টোপাধ্যায় : জগন্নাথঃ স্বামী, নয়নপথগামী ভবতু মে। তিনিই সমগ্র মহাবিশ্বের নাথ। তিনি আদি, তিনিই অন্ত। তিনি একাধারে শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণব, বৌদ্ধ, জৈন, গাণপত্য, সকলের ইষ্ট। তাঁর এই ধাম হল এক আশ্চর্য্য ভক্তিক্ষেত্র। বছরের পর বছর যুগ-যুগ ধরে কোটি কোটি ভক্তের ভক্তিরসের ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে এই লীলাপুরুষোত্তমের মহিমা। শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু জগন্নাথ দেবের স্বরূপ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছিলেন,

মহাম্ভোবৈস্তীরে কনকরুচিরে নীল শিখরে

বসন প্রাসাদান্তঃ সহজবলভদ্রেণ বলি না

সুভদ্রামর্ধস্থঃ সকল সুরসেবাবসরদে

জগন্নাথঃ স্বামী, নয়নপথগামী ভবতু মে।।

কথিত আছে, পুরীর শ্রীজগন্নাথ মন্দিরের অন্তরতম ও পবিত্রতম স্থান হল রত্নসিংহাসন, যা রত্নবেদী নামেও পরিচিত। এটি কেবল একটি বেদি নয়, বরং বৈষ্ণব ভক্তির এক মহাত্ম্যপূর্ণ কেন্দ্র। এই সিংহাসনের মাহাত্ম্য, সৌন্দর্য ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য আজও কল্পনাতীত রহস্যে মোড়া।

জানা যায়, এই রত্নসিংহাসন নির্মিত হয়েছিল দুর্লভ ও দুর্মূল্য কালো মুগনি পাথর দিয়ে। দৈর্ঘ্যে প্রায় ২০ ফুট, প্রস্থে ৮ ফুট এবং মন্দিরের মেঝে থেকে এই বেদির উচ্চতা প্রায় ৪ ফুট। এটি শ্রীমন্দিরের গর্ভগৃহেই অবস্থিত এবং এই সিংহাসনের উপরেই অধিষ্ঠিত থাকেন পুরুষোত্তম শ্রী জগন্নাথ, বলভদ্র ও মা সুভদ্রার তিনটি দারুমূর্তি। জনশ্রুতি অনুযায়ী, রত্নসিংহাসনের নিচে প্রোথিত রয়েছে এক লক্ষ শালগ্রাম শিলা, যা হিন্দুধর্মে নারায়ণের শক্তির প্রতীক।

এই বেদীর উপরেই শ্রীযন্ত্র অঙ্কন করে ত্রিমূর্তিকে স্থাপন করা হয়েছে, যা তন্ত্র ও যোগ সাধনার দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। অনেক বৈষ্ণব কবি ও সাধক এই স্থানকে বলেছেন ‘নিত্য গোলকধাম’, অর্থাৎ যেখানে রাধা-কৃষ্ণের নিত্য লীলা অব্যাহত রয়েছে। তাঁদের মতে, এই রত্নসিংহাসনের উপরে বসেই মহাপ্রভু জগন্নাথ স্বয়ং বিশ্বচক্র পরিচালনা করেন।

সিংহাসনের তিনটি পাশ ঘিরে রয়েছে খোদাই করা দেবতা ও ঋষিদের মূর্তি, যা রত্নসিংহাসনের চারপাশে এক আধ্যাত্মিক মণ্ডল গঠন করে। রত্নসিংহাসন শুধু একটি স্থাপত্য নিদর্শন নয়, এটি এক আধ্যাত্মিক মহাকেন্দ্র – যেখানে ভক্তরা জগন্নাথের দর্শন পান, জীবাত্মায় সযত্নে আশ্রিত হয় পরমাত্মা।

একসময় গর্ভগৃহে প্রবেশ করে রত্নসিংহাসনের চারদিকে তিন বা সাতবার প্রদক্ষিণ করার প্রথা চালু ছিল। বিশ্বাস করা হয়, এই প্রদক্ষিণের ফলে ভক্ত ত্রিভুবনের (ভূর্লোক, ভুবর্লোক, স্বর্গলোক) পরিক্রমার পূণ্য লাভ করেন। আজও বহু ভক্ত এই বিশ্বাসকে হৃদয়ে ধারণ করে থাকেন।

সার্বিকভাবে, রত্নসিংহাসন শুধুমাত্র জগন্নাথদেবের আসন নয়, এটি আধ্যাত্মিকতার এক পীঠস্থান, যেখানে এক অনন্ত চেতনার মাধ্যমে পৃথিবী ও স্বর্গের সংযোগ ঘটে । তাই, রত্নসিংহাসন মানে শুধু এক বেদী নয়, বরং এক অসীম ভক্তির উৎস।




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

কালের ন্যায়চক্রে শ্রীরামের পূর্বপুরুষকে হত্যা করার ফলই পেতে হয়েছিল রাবণকে

ডাইনি অপবাদে পূর্ণিয়ায় একই পরিবারের ৫ জনকে জ্যান্ত পুড়িয়ে খুন

পরকীয়ায় বাধা! প্রেমিকের সঙ্গে মিলে প্রতিবন্ধী স্বামীকে গলা টিপে খুন করলেন তিন সন্তানের মা

৮৫৪ কোটি টাকা বেতনে Meta-য় যোগ আইআইটি কানপুরের প্রাক্তনী ত্রিপত বনশলের

চমক! প্রশান্ত কিশোরের জন সুরজ পার্টিতে যোগ দিলেন আলোচিত ইউটিউবার মনীশ কাশ্যপ

আইসিইউতে জনপ্রিয় গায়িকা ফরিদা পারভীন, ইউনূস সরকারের সাহায্য নিতে অস্বীকার

Advertisement




এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ