এই মুহূর্তে




পুজোর ভ্রমণ: বাংলার ‘হানিমুন ডেস্টিনেশন’ লেপচাজগৎ




নিজস্ব প্রতিনিধি: আমরা যারা কংক্রিটের জঙ্গলে বাস করি তাঁদের মন মাঝেমধ্যেই হাঁপিয়ে ওঠে। একটু খোলামেলা জায়গা, বিশুদ্ধ বাতাস বা প্রকৃতির সবুজ যেন টানে আমাদের। তাই তো অনেকেই একটু সুযোগ পেলে বা ছুটি পেলেই ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ি। কিন্তু এই করোনাকালে যাব কোথায়? করোনা সংক্রমণ এবং বিধিনিষেধ আমাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে সর্বত্র। এবার বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো আসন্ন, আর এই সময় বাঙালিদের একটা বড় অংশ কোথাও না কোথাও ঘুরতে যান।

তবে এই করোনা সংক্রমণের মধ্য়ে কেউ কেউ খুঁজছেন একটু নিরালা-নির্জন স্থান, যেখানে দিন-দুয়েক একটু প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেওয়া যাবে। আজ বলব লেপচাজগৎ সম্পর্কে। দার্জিলিংয়ের ভিড়ভাট্টায় না গিয়ে মেঘের মধ্যে গুটিকয়েক হোম স্টে নিয়ে গড়ে ওঠা এই গ্রামে নিশ্চিন্তে ঘুরে আসতে পারেন। এনজেপি থেকে ঘুম হয়ে যেতে হয় লেপচাজগৎ। গাড়ি ভাড়া করলে ভালো, না হলে প্রচুর শেয়ার গাড়ি পাওয়া যায় এই পথে। দার্জিলিং থেকে দূরত্ব মাত্র ১৯ কিমি।

লেপচাজগৎ-কে এক কথায় বর্ণনা করতে গেলে একে আমরা “মেঘের রাজ্য” বলতেই পারি। অনেকেই আবার আদর করে বলেন বাংলার হানিমুন ডেস্টিনেশন। এখানে সর্বদাই মেঘের আনাগোনা, চারিদিকে মেঘের মধ্যে গুটিকতক হোমস্টে নিয়ে এই গ্রাম। সে এক দারুণ অভিজ্ঞতা, কখনও হঠাৎ করে মেঘের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামটি, আবার পরক্ষণেই মেঘ কেঁটে উকি মারছে আংশিক লেপচাজগৎ।

দুপুর দুপুর পৌঁছে যাওয়া যায় লেপচাজগৎ। তাই দুপুরের খাবার পরেই বেরিয়ে পড়ুন গ্রামটি ঘুরে দেখতে। কুয়াশায় মোড়া পাইন বনের মধ্য দিয়েই চলে আসুন লেপচাজগৎ ভিউ পয়েন্ট দেখতে। শোনা যায় আকাশ পরিষ্কার থাকলে এখান থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘার পুরো রেঞ্জ দেখা যায়। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই কুয়াশায় ঢাকা থাকে। তাই কাঞ্চন দাদার দেখা পেতে হলে কপালের প্রয়োজন হয়। কাঞ্চন দাদার দেখা না পাওয়া গেলেও একটু নিরিবিলিতে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারবেন মুখের মাস্ক খুলে রেখে। কারণ কলকাতায় সর্বক্ষণ মাস্ক মুখে নিয়ে ধুয়ো-দূষণে আটকে থেকে জীবন অতিষ্ট হয়ে পড়েছিল। নির্জন দূষণহীন লেপচাজগৎ তাই প্রথম দর্শনেই মনে ধরবে।

কিছুটা সময় ভিউ পয়েন্টে বসে নেমে আসুন হোম স্টে-র দিকে। বা পাইন বনের মধ্যে দিয়েই কিছুটা এগিয়ে সুখিয়ার পথ ধরা যায়। পড়ন্ত বিকেলে পাখির ঘরে ফেরা, তাঁদের কিচিরমিচির শুনতে শুনতে কিছুটা এগিয়ে বুঝলাম সন্ধ্যে নামার আগে হোম স্টে চলে আসতে পারেন। হোম স্টে-তে ফিরে মুচমুচে আলুর পকড়ার সাথে কফি বা গরম পানীয়। একটানা ঝিঝি জাতীয় কোনও পোকার ডাক শুনতে শুনতে জমিয়ে আড্ডা মারতে পারেন। পুজোর সময় এই এলাকায় ঠান্ডা জাঁকিয়ে পড়ে রাত যত বাড়ে, তাই হোম স্টের কিচেনে উনুনের পাশে গিয়ে বসতে পারেন। রাতের খাবার খেয়ে কম্বলের তলায় ঢুকে লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ুন।

পরদিন ভোরে বাইরে বেরিয়ে দেখবেন মেঘ কেঁটে গিয়েছে। বেশ ঝকঝকে চকচকে পরিবেশ। তাই জলদি ফ্রেশ হয়ে ভিউ পয়েন্টের উদ্দেশ্যে ছুটুন। কপাল ভালো থাকলে, ভিউ পয়েন্টে পৌঁছে কাঞ্চন দাদার দেখা পেয়ে যাবেন। আসলে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে যতবার দেখা যায় ততবারই যেন তাঁকে কাছে পাওয়ার তৃষ্ণা আরও বেড়ে যায়। কিছুক্ষণ কাটিয়ে নেমে আসুন ভিউ পয়েন্ট থেকে। লেপচাজগতের পিচ রাস্তা ধরে ঘুম শহরের দিকে হাঁটা দিতে পারেন।

ঘুমের রাস্তা ধরে কিছুটা এগিয়ে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে উপর দিকে উঠে গিয়েছে একটি সংকীর্ণ ট্রেকিং পথ। খানিকটা উঠলেই সেখান থেকে পুরো দার্জিলিং শহরটা পাখির চোখে দেখা যায়। কোনও স্থানীয় বাসিন্দার সাহায্যে পথটি খুজে নিতে হবে। তবে সাবধান জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এই পথে জোঁকের উপদ্রপ আছে। তাই সাবধানে যেতে হবে। অগত্যা কপাল ঠুকে উপরে উঠতে শুরু করে দিন। দেখে দেখে সাবধানে পা ফেলে অনেকটা পথ উপরে উঠলেই ঝকঝকে আকাশে চোখের সামনে ডানা মেলবে পুরো দার্জিলিং শহর। দার্জিলিংয়ের ভিড়ভাট্টায় না গিয়েও দার্জিলিং দর্শন করে তৃপ্ত হবেন,কথা দিলাম। এক কথায় কোনও কিছু না করেই অবশ্য লেপচাজগতে দিন দুয়েক কাটিয়ে দেওয়া যায়।

সেই ব্রিটিশ আমলেই পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়েছিল এই আদিবাসী গ্রামটি। বর্তমানে তা হয়ে উঠেছে নবদম্পতিদের কাছে হানিমুন ডেস্টিনেশন। ওক, পাইন ও রডোডেনড্রোনে ঘেরা গ্রাম। যত্রতত্র পাহাড়ি ফুল ও অর্কিড আর রয়েছে অসংখ্য পাখি। জঙ্গলের ভিতর হাঁটতে হাঁটতে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ান নির্বিঘ্নে। সাথে অবশ্যই ক্যামেরা রাখবেন। বিরল প্রজাতির পাখি এবং অর্কিড যখন তখন ধরা দেবে ক্যামেরার লেন্সে। কিছু দূরেই দেখা যায় চা বাগান। আর যদি হাতে আরও দু-এক দিন সময় থাকে, তবে ঘুরে আসতে পারেন মিরিক, মানেভঞ্জন, ঘুম, বাতাসিয়া লুপ। এখান থেকে কালিম্পং বা কার্শিয়াং খুব বেশি দূরে নয়।

কীভাবে যাবেন?

হাওড়া, শিয়ালদা ও কলকাতা থেকে ছাড়া যেকোনও উত্তরবঙ্গগামী ট্রেন ধরে চলে আসুন নিউ জলপাইগুড়ি। এখান থেকেই দার্জিলিং ও ঘুম যাওয়ার শেয়ার গাড়ি পেয়ে যাবেন। ঘুম থেকে লেপচাজগতের গাড়ি পাওয়া যাবে। তবে নিজেরাও গাড়ি ভাড়া করে সরাসরি লেপচাজগৎ আসতে পারেন। গাড়িভাড়া দরদাম করে নিতে হবে। এই ছোট্ট গ্রামে বেশ কয়েকটি হোম স্টে রয়েছে। আগে থেকে ইন্টারনেটে খোঁজ-খবর নিয়ে বুক করে নেবেন। এখানে দু-দিন কাটিয়ে দার্জিলিং বা কালিম্পং হয়ে বাড়ি ফিরে আসতে পারেন।




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

লক্ষ্মীর আট অবতারের কথা জানেন ?

ঘুম থেকে উঠেই হাতে স্মার্টফোন, নিজের বড় ক্ষতি করছেন না তো ?

চাঁদের আলোয় নেমে আসছে দেবী,জানুন কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো কবে ?

শুরু হয়ে গিয়েছে নবপত্রিকা স্নান, জানুন কলাবউ আসলে কে ?

দুর্গার এই মন্ত্র জপুন, কেটে যাবে সব বিপদ-বাধা

কেউ শেখাবে না, মহিষাসুরমর্দিনীর কাছ থেকে শিখে নিন মূলব্যান এই শিক্ষাগুলো

Advertisement

এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর