নিজস্ব প্রতিনিধি, বালুরঘাট: খড়, মাটি দিয়ে তৈরি দেবী দুর্গার মৃণ্ময়ী রূপ দেখতে আমরা সকলেই অভ্যস্ত। কিন্তু লোহা, বালি, সিমেন্ট দিয়ে তৈরি দুর্গামূর্তি! শুনতে অবাক লাগলেও এমনটাই করে দেখালেন বালুরঘাটের ডাঙ্গি এলাকার বাসিন্দা নিতাই দাস। পেশায় রাজমিস্ত্রি হলেও ছোট থেকেই আঁকার হাত ভাল। যে কোনও শিল্পকলায় পারদর্শী নিতাই এবার সিমেন্টের দুর্গা বানিয়ে তাক লাগালেন। তবে একাধারে যেমন প্রচুর প্রশংসা কুড়োচ্ছেন, অন্যদিকে আবার এই মূর্তির কারণেই মহাফ্যাসাদে পড়েছেন শিল্পী।
ডাঙ্গি এলাকার একটি অসম্পূর্ণ পাকা বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন নিতাই। মেধা থাকা সত্ত্বেও আর্থিক অনটনে বেশিদূর পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। ছেলেবেলা থেকেই পড়ার ফাঁকে আঁকিবুকি করতে ভালবাসতেন নিতাই। একসময় হাতের কাজ নিয়েই এগোতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সংসারের হাল ধরতে অনেক কম বয়সে বেরিয়ে পড়তে হয়েছিল কাজের সন্ধানে। প্রথমে রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজে যোগ দেন। কিন্তু শিল্পকলায় আগ্রহ থাকায় খুব তাড়াতাড়ি রাজমিস্ত্রির কাজও শুরু করেছিলেন। নিতাই দাস জানান, ‘একদিন পাড়ার এক ব্যক্তি তাঁকে সিমেন্টের একটি হনুমান তৈরি করতে বলেছিল। কোনও কিছু না দেখে নিজেই সেটা বানাই। হনুমানটি বানানোর পর আমার মনে একটা আত্মবিশ্বাস জন্মায়। এবছর দুর্গা বানানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন একজন। সারাদিন কাজ করার পর রাতে এসে এটি বানিয়েছি। ১২ দিনের মতো সময় লেগেছে। একটানা করলে, ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে এইধরনের দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করতে পারব।’
স্ত্রী মিনি দাস জানালেন, তিনিও সাহায্য করেছেন স্বামীকে। তাঁর কথায়, ‘রাতে ও এসে এই মূর্তিটি বানাতে বসত। আমি ওর চাহিদা মতো সিমেন্ট, জল হাতের কাছে এগিয়ে দিতাম। চোখের সামনে এমন মূর্তি গড়ে উঠতে দেখলাম। এখনও নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছে না। এখন সবাই এই মূর্তিটি কিনতে চাইছে দেখে আমার খুবই ভাল লাগছে। গর্বও হচ্ছে।’ একটাই মূর্তি, একসঙ্গে একাধিক ব্য়ক্তিকে বিক্রি করা সম্ভব নয়। তাই নিতাই দাস ঠিক করেছেন, যিনি তাঁকে বেশি দাম দেবেন তাঁকেই বিক্রি করবেন মূর্তিটি। আগামী দিনে চাহিদা অনুযায়ী আবারও এই ধরনের মূর্তি তৈরি করবেন।