নিজস্ব প্রতিনিধি: আর মাত্র কয়েকদিন। এরপরেই ঢাকে কাঠি। আমাদের বাংলায় দুর্গাপুজোর প্রচুর ইতিহাস। গল্প বলে হয়তো শেষ করা যাবেনা। আজ জানাবো দক্ষিণেশ্বরের বাচস্পতি বাড়ির ইতিহাস। তাঁদের বাড়ির দুর্গাপুজো চলে আসছে ৪৫০ বছর ধরে। ঐতিহ্যবাহী এই পুজোর মূর্তি তৈরির কাজ চলে ঠাকুর দালানে। তবে গত দুই বছর করোনার প্রভাবে তেমন জাঁকজমকপূর্ন ভাবে পুজো না হলেও, এই বছর পুরনো জৌলুস ফিরবে বলেই আশা করছেন বাচস্পতি বাড়ির সদস্যরা। কিন্তু জানেন কী, এই পুজোর প্রচলন শুরু করেন প্রতাপাদিত্যের প্রধান সেনাপতি শঙ্কর নাথ চট্টোপাধ্যায়। শুরুতে এই পুজো হত বারাসতের শিবের কোটায়, কিন্তু এখন দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গা তীরবর্তী এলাকাতেই এই পুজো হয়।
ইতিহাস বলছে, প্রতাপাদিত্যের সঙ্গে বন্দি থাকাকালীনই পিতৃ তর্পণের ইচ্ছাপ্রকাশ করেন শঙ্করনাথ। বন্দি থাকা অবস্থাতেই তাঁকে অনুমতি দেন রানী যোধাবাই। তাঁর কন্ঠে যমুনাতে পিতৃ তর্পণের মন্ত্র উচ্চারণ শুনে, রানী যোধাবাইও চমকে যান, তিনিও হিন্দুত্বে জাগরিত হয়। পরবর্তী সময়ে, রানী নিজেই বন্দি শঙ্করনাথ চট্টোপাধ্যায়কে প্রাসাদে ডেকে দুর্গাপূজা করার নির্দেশ দেন। এরপর থেকেই চলে আসছে এই পুজো। পরবর্তী সময়ে এই পুজোর হাল ধরেন তাঁরই বংশধর প্রাণবল্লভ। প্রাণবল্লভ চট্টোপাধ্যায়েরই উপাধি পাওয়া পদবি বাচস্পতি। পরবর্তী সময়ে, তিনি স্বল্প মূল্যে জমি কিনে ওই এলাকায় বসবাস শুরু করতে শুরু করেন। প্রাণবল্লভ বাচস্পতিরাদের গৃহ দেবতা হল মা দুর্গা। তখন থেকেই দক্ষিণেশ্বরের ওই পাড়ার নাম বাচস্পতি। প্রতি বছর বাচস্পতি পাড়ার বড় বাড়ির পুজোকে কেন্দ্র করেই মেতে থাকে পুরো পাড়া।
তাঁদের পুজো শুরু হয় মহলায়ার দিন থেকে, এমনকি তাঁদের বাড়ির পুজোর দারুণ রীতি নিয়ম। দশমীতে মা দুর্গাকে নৌকা করে গঙ্গার মাঝখানে নিয়ে গিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়। এবং সেই কাঠামো নিয়ে আসা হয়, কারণ পরের বছর সেই কাঠামোতে প্রতিমা নির্মাণ হবে। তবে এই পুজোর বিশেষ আকর্ষণ সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীতে বংশের কোনও মেয়েকেই প্রতিমা রূপে পুজো করা হয়। পুজোর যাবতীয় নিয়ম পণ্ডিত রত্ন মেলবলী নামের একটি পুস্তকে তোলা রয়েছে। সেই নিয়মেই পুজো হয়। জানা যায়, একসময় ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব এই পুজো দেখতে আসতেন। সুতরাং প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে চলে আসা পুজো এখনো দক্ষিণেশ্বরের ইতিহাসকে প্রসারিত করছে।