এই মুহূর্তে




Durga Puja: দুর্গাপূজায় সন্ধিক্ষণ কী, সন্ধিপূজা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ ?  




পৃথ্বীজিৎ চট্টোপাধ্যায় :  “জটাজূটসমাযুক্তামর্ধেন্দুকৃতশেখরাম্‌

                                          লোচনত্রয়সংযুক্তাং পূর্ণেন্দুসদৃশাননাম্‌ ।।

                                          অতসীপুষ্পবর্ণাভাং সুপ্রতিষ্ঠাং সুলোচনাম্‌

                                           নবযৌবনসম্পন্নাং সর্বাভরণভূষিতাম্‌ ।।”

 

বাঙালির শ্রেষ্ঠতম উৎসব দুর্গাপুজোয় মূল পুজো হয়ে থাকে সন্ধিক্ষণে, যা সন্ধিপুজো নামে পরিচিত। লোকেদের বিশ্বাস, এই বিশেষ মুহূর্তে পরমাপ্রকৃতি দেবী দুর্গা জাগ্রত হয়ে ওঠেন। এমনকি, এই পূজা চলাকালীন মা’কে ভক্তিভরে মনোস্কামনা জানালে মা কখনো খালি হাতে ফেরাননা। তাহলে, একটা প্রশ্ন আসতে পারে, যে, এই “সন্ধিক্ষণ” কি ?

জানা যায়, মহাষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট ও মহানবমীর প্রথম ২৪ মিনিট, অর্থাৎ, মোট ৪৮ মিনিট হল সন্ধিমুহূর্ত বা সন্ধিক্ষণ। কথিত আছে, এই বিশেষ  মুহূর্তেই দেবী দুর্গা চামুণ্ডা রূপে প্রথমে নিধন করেছিলেন মহিষাসুরের দুই সাঙ্গ-পাঙ্গ চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই ভয়ঙ্কর অসুরকে। জানা সেই সময় চণ্ড-মুণ্ড রণনীতি ভঙ্গ করে দেবী দুর্গাকে পেছন থেকে আক্রমণ করেছিল ও দেবী ক্রোধে তাঁর তৃতীয় নেত্র উন্মীলিত করেছিলেন এবং চামুণ্ডা রূপ ধারণ করেছিলেন। তাই এই সময় দেবী পূজিতা হন চামুণ্ডা রূপে। এরপর, তিনি মহিষাসুরের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলেন আর, হয়ে উঠেছিলেন মহিষাসুরমর্দিনী। 

এই পুজোয় দেবীর চরণে ১০৮ পদ্ম অর্পণ করাহয়। বলা হয়ে থাকে, ১০৮ পদ্ম ছাড়া দেবীর সন্ধিপুজো হয় না। কিংবদন্তি অনুসারে, ১০৮ পদ্ম দেওয়ার সাথে দুটি পৌরাণিক কাহিনী জড়িয়ে আছে। পৌরাণিক কাহিনী মতে, অসুর নিধনকালে দেবী দুর্গার সারা অঙ্গে সৃষ্টি হয়েছিল ১০৮টি ক্ষত। ক্ষতগুলোর অসহনীয় জ্বালা জোড়ানোর জন্য দেবাদিদেব মহাদেব মা দুর্গাকে দেবীদহে স্নান করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। জানা যায়, দেবীদহে স্নান করার পর মায়ের শরীরের ১০৭টি ক্ষত থেকে ১০৭টি পদ্মের সৃষ্টি হয়েছিল । কিন্তু একটি গভীর ক্ষত তখনো অবশিষ্ট ছিল। তখন দেবী দুর্গাকে ১০৮তম ক্ষতের জ্বালায় কষ্ট পেতে দেখে মহাদেবের চোখ থেকে নির্গত অশ্রুবিন্দু সেই ক্ষতস্থানে পড়েছিল ও তৎক্ষণাৎ মিলিয়ে গিয়েছিল মায়ের শরীরের অবশিষ্ট ক্ষতটি। দেবীদহে থেকে গিয়েছিল ১০৭টি পদ্ম।  

 এদিকে ত্রেতা যুগে লঙ্কেশ্বর রাবণকে বধ করার জন্য সন্ধিপূজার শেষে শ্রীরামচন্দ্র দেবীর পায়ে মোট ১০৮টি পদ্ম উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, দেবীদহে ১০৭ টি পদ্ম থাকায় সেই ক’টি পদ্ম নিয়েই ফিরে এসেছিলেন পবনপুত্র হনুমান। সুতরাং মায়ের পায়ে দেওয়ার জন্য একটি পদ্ম কম পড়েছিল। সন্ধিক্ষণ চলে যাওয়ার উপক্রম হলে শ্রীরামচন্দ্র ধনুর্বাণ দিয়ে নিজের নীল পদ্মের ন্যায় চক্ষুদুটির মধ্যে একটি উৎপাটন করে মায়ের পায়ে অর্পণ করতে চেয়েছিলেন ১০৮তম পদ্ম হিসেবে। চক্ষু উৎপাটনের মুহূর্তে দেবী দুর্গা স্বয়ং অবতীর্ণ হয়ে রামচন্দ্র কে সেই কাজ করায় বাধা দিয়েছিলেন ও তিনি নিজেই রঘুপতিকে একটি পদ্ম দিয়েছিলেন তাঁকে অর্পণ করার জন্য। সেই থেকেই সন্ধিপূজায় ১০৮টি পদ্ম মায়ের পায়ে নিবেদন করা হয় ও মায়ের সামনে জ্বালানো হয় মাটির ১০৮টি প্রদীপ।

অনেক পূজা মণ্ডপে এই সন্ধিপূজার সময় বলি দেওয়ার প্রথা রয়েছে। কোথাও পাঠা বলি হয়, আবার কোথাও কলা, আঁখ, চালকুমড়ো ইত্যাদিও বলি দেওয়া প্রথা রয়েছে। সন্ধিপুজোর এই বলি দান অষ্টমী তিথিতে হয় না, তা হয় সন্ধি পুজোর প্রথম দণ্ড অর্থাৎ প্রথম ২৪ মিনিট পার হওয়ার পরেই। শাস্ত্র মতে, সংযমী হয়ে সন্ধিব্রত পালন করলে নাকি যমের থেকেও মুক্তি মেলে। অর্থাৎ, হঠাৎ মৃত্যু আসন্ন হলে মায়ের কৃপা লাভে যম স্পর্শ করতে পারে না। এমনকী বলা হয়ে থাকে, সন্ধিপুজোয় ভক্তিভরে  মা’কে ডাকলে সারা বছর দুর্গাপূজা না করেই সেই ফল লাভ করা যায়। আর, এই পুজোয় সকলেরই যোগ দেওয়ার অধিকার রয়েছে। তবে মঙ্গল লাভ করতে হলে উপবাস প্রয়োজন। “উপ-বাস” অর্থাৎ দেবীর সমীপে বাস করতে হবে। এই সন্ধিপুজোয় দেবীর পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া শ্রেয়। তাতেই প্রসন্নবদনা দেবী ভক্তের মঙ্গল করবেন।

 

                                                                                             

” ওঁ মহিষাগ্নি, মহামায়ে, চামুন্ডে, মুন্ডমালীনি

আয়ুরারোগ্য বিজয়ং দেহি দেবি নমোহস্তু তে

                   এষ সচন্দন গন্ধ পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ ওঁ হ্রীং দুর্গায়ৈ নমঃ॥”

 

 




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

দশমীতে ইছামতীর তীরে জমজমাট এক দিনের বউ মেলা, তবে নিষিদ্ধ পুরুষ ক্রেতা

ফরিদপুরে একই মণ্ডপে ২৫১ দুর্গা প্রতিমা দেখতে উপচে পড়ছে ভিড়

পুজো শেষে দুপুরে জমিয়ে খান ওল-চিংড়ি: সহজ রেসিপিতে রসনা তৃপ্তি করুন ঘরেই

মুম্বইতে দুর্গার বিদায় পর্বে জমিয়ে সিঁদুর খেললেন রানি-কাজলরা

৩০০ বছর ধরে সিংহবাহিনী দেবী রূপে পুজিতা হয়ে আসছেন এই রাজবাড়িতে

পান্তা ভাত-কচু শাক খেয়ে কৈলাসে পাড়ি দেন এই বনেদি বাড়ির উমা

Advertisement

এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর