নিজস্ব প্রতিনিধি: গত ২ নভেম্বর গুজরাতে বিজেপির প্রচার সভায় এসে বাঙালিদের একটি বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন, অভিনেতা তথা বিজেপি সাংসদ পরেশ রাওয়াল। তাঁর কথায়, গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে কী হবে? বাঙালিদের জন্য মাছ ভাজার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নাকি? বাক্যটি পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যাবে, বাঙালিদের মাছ ভাজার জন্যেই গ্যাসের ব্যবহার। আসলে বাঙালিদের নিয়ে অবাঙালিদের বরাবরই টোন টিটকিরি চলতেই থাকে। বাঙালিদের রসগোল্লাকে তাঁরা বলেন, ‘রসগুল্লা’, মাছকে বলে ‘মাচ্ছি’ ইত্যাদি। যদিও তাঁদের ভাষায় এই শব্দোচ্চারণ একেবারেই ভুল নয়। বাঙালি মানেই মাছে ভাতে বাঙালি।
বাঙালির খাদ্য রসিকতা আজকের নয়, যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। খাদ্যপ্রেমী বাঙালিদের খাবার-দাবার এবং শিল্পের প্রতি ভালোবাসা প্রতিটি জাতির কাছেই পরিচিত। কিন্তু এই মাছপ্রীতি বাঙালিদের নিয়েই পরেশ রাওয়ালের এহেন বেফাঁস মন্তব্য সমগ্র বাঙালি জাতির কাছেই অপমান। কিছুতেই মেনে নেবে না কেউই। এরপর থেকেই জনরোষের মুখে পরেশ, সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে তাঁকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা, প্রতিবাদ শুরু হতেই নড়েচড়ে বসেন বাংলা সরকার। ইতিমধ্যেই অভিনেতা তথা বিজেপি সংসদকে তলব করেছে কলকাতা পুলিশ। যদিও চাপে পড়ে অভিনেতা নিজেই ক্ষমা চেয়েছেন।
এমনকী আমজনতা থেকে সেলিব্রিটি সকলকেই এই বিষয়টি নিয়ে কম বেশি প্রতিবাদ করতে দেখা গিয়েছে। এবার সেই তালিকায় নাম জুড়লেন অভিনেতা ঋত্বিক, থুড়ি অভিনেতার কথা বলা পুতুল। আসলে আপাত দৃষ্টিতে দেখলে, পরেশের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে অভিনেতাকে কটাক্ষ করেছেন ঋত্বিক। নিজে থেকে কোনও রকম বাক্য ব্যয় না করে পুতুলের সাহায্যেই এই ব্যাপারটা ঘটালেন ঋত্বিক। আসলে ঋত্বিকের ভেন্ট্রিলিক্যুইজম এখন সমাজমাধ্যমে বেশ ভাইরাল। প্রায়শই একটা ‘বেলাগাম’ পুতুল নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় হাজির হচ্ছেন বাঙালি অভিনেতা। সেখানেই দেখা যাচ্ছে, অভিনেতার হাতের পুতুল যা খুশি তাই বলেছে।
এমনকী নায়কের কথায়, তাঁর পুতুলটি নাকি একেবারেই পরিস্থিতির বাইরে চলে যাচ্ছে যখন তখন। বড়দা হিসেবে ঋত্বিক ধমকানো-চমকানোও চলছে। এই পুতুল রাজনীতি থেকে সমাজ— সব বিষয়েই একেবারে ওয়াকিবহাল। এবারে তাঁর বিষয় পরেশ রাওয়াল। যদিও পুতুলের কথায় সেই নামটা হয়ে গিয়েছে পারশে বাওয়াল। কিন্তু অভিনেতা ভুল শেখায় নি তাঁর পুতুলকে। ভুল ধরিয়ে দিয়ে ঋত্বিক বোঝালেন, না ওটা পরেশ রাওয়াল। এরপর তাঁর কাছে ঋত্বিক জানতে চান, পারশে বাওয়াল নাকি বাঙালিদের অপমান করেছে! তখন পুতুলও বিজ্ঞদের মতো উত্তর দিয়ে বলে, ‘গাধার ডাকে কি তানসেন অপমানিত হয়?’
আসলে গত শুক্রবার গুজরাতে ভোট প্রচারে গিয়ে পরেশ একটি সভায় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “মুদ্রাস্ফীতি সহ্য করতে পারবেন গুজরাতের মানুষ। কিন্তু পাশের বাড়িতে যদি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু কিংবা বাংলাদেশিরা এসে ওঠেন, তখন গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে কী করবেন? বাঙালিদের জন্য মাছ ভাজবেন?” তা নিয়েই শুরু হয় যত্ত বিতর্ক। গোটা বাঙালি জাতিকেই অপমান করলেন তিনি এই মন্তব্যের মাধ্যমে।