নিজস্ব প্রতিনিধি: শুক্রবার রাতের বিভীষিকাময় ভূমিকম্প(Nepal Earthquake) শতাধিক মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে নেপালের বুকে। সেই বিভীষিকা কাটিয়ে ওঠার আগে রবি ভোরে ফের কেঁপে উঠল নেপালের মাটি। তবে রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা তেমন বেশি ছিল না। এদিন ভোর ৪টে ৩৮ মিনিটে ৩.৬ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়েছে নেপালে। কাঠমান্ডুর(Kathmandu) জাতীয় ভূকম্পনকেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, এই কম্পনের উৎসস্থল(Epic Center) ছিল কাঠমান্ডু থেকে ১৬৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে, মাটি থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে। একইসঙ্গে জানা গিয়েছে, শনিবার গভীর রাতে ভূমিকম্প হয়েছে ভারতের(India) আরেক প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তানের(Afghanistan) বুকেও। সেখানকার ফয়জ়াবাদে প্রদেশে ভূমিকম্প হয়। রিখটার স্কেলে তার মাত্রা ছিল ৪.৫। তবে এই দুটি ভূমিকম্পেরই কোনও প্রভাব ভারতে পড়েনি।
নেপাল সরকারের রবি সকালে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে এদিনের ভোরের ভূমিকম্পে সেখানে নতুন করে কোন ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা না ঘটলেও শুক্র রাতের বিধ্বংসী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৬২। শুক্র রাতের ৬.৪ মাত্রার জোরালো কম্পনে পাহাড়ের কোলে নেপালের সাজানো গোছানো গ্রাম থেকে শহর এখন কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। মৃতের সংখ্যা কোথায় গিয়ে থামবে সেটা কেউই বলতে পারছে না। সরকারি হিসাবেই এখনও নিখোঁজের সংখ্যা ৩০০’র বেশি। তাই ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই এখন জোর কদমে উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে। তার মাঝেই এদিন ভোরে আবার ভূমিকম্প হওয়ায় নেপালের বাসিন্দারা চূড়ান্ত আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। আতঙ্কে মানুষ নিজের বাড়িতেই এখন আর ঢুকতে চাইছেন না। রাস্তায় বা খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে বসে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।
শুক্র রাতের ভূমিকম্পের উৎসভূমি ছিল নেপালের জাজারকোট এলাকা যা কাঠমান্ডু থেকে ২৫০ মাইল দূরে। সুউচ্চ পাহাড়ঘেরা জাজারকোটক জেলায় প্রায় ২ লক্ষ মানুষের বাস। গ্রামগুলো পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এবং ভূমিকম্পের উৎসস্থল ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১১ মাইল নীচে হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞ মহল। পাথর-কাঠ দিয়ে বানানো বাড়িগুলো প্রায় মিশে গিয়েছে। সেই সব ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে জোরকদমে চলছে উদ্ধারকাজ। প্রত্যন্ত অনেক এলাকায় পৌঁছনোর ক্ষেত্রে পায়ে হাঁটা পথই ভরসা। তার থেকেও বড় বিষয় শুক্রবার রাতের ভূমিকম্পের পর অন্তত ১৫৯টি আফটারশক অনুভূত হয়েছে, আর তাতে ধস নেমে বন্ধ অধিকাংশ রাস্তা। প্রত্যন্ত এলাকা বলেই তথ্য পেতে অসুবিধা হচ্ছে। কিছু এলাকায় যোগাযোগের রাস্তা ধসে বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তবে অন্য পথে সেখানে পৌঁছনোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিধ্বস্ত এলাকায় আকাশথে খাবার, তাঁবু, ওষুধ পৌঁছনোর ব্যবস্থা করছে নেপাল প্রশাসন।
উদ্ধারকাজের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে নেপালের সব হেলি-অপারেটরকে। নেপালের যাত্রিবাহী বিমান চলাচল সেই কারণে সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখাও হয়েছে। বিপর্যস্ত এলাকা থেকে আহতদের উদ্ধার করে আকাশপথে নেপালগঞ্জে আনার কাজ চলছে। সেখানের হাসপাতালের ১০০টি বেড আহতদের চিকিৎসার জন্য তৈরি রাখা হয়েছে। চিকিৎসকদের টিমও রেডি। ঘটনাস্থলের যে সব ছবি, ভিডিয়ো সামনে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে- পাথর, কাঠে বানানো বাড়িগুলো তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে আছে। সেগুলি সরিয়েই এখন প্রাণের খোঁজ চলছে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে। যাঁরা কোনও ক্রমে বেঁচেছেন, তাঁরা এখন রীতিমত ট্রমায় আছেন। প্রশাসন সূত্রে খবর, জাজারকোটের মতো কৃষিভিত্তিক জেলাতেই সবচেয়ে বেশি দেহ উদ্ধার হয়েছে। সংখ্যায় তা ১০৫, বাকি দেহ উদ্ধার হয়েছে রুকুম জেলায়।