নিজস্ব প্রতিনিধি: ৫ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল সামনে চলে এসেছে। পঞ্জাব বাদে বাকি ৪ রাজ্যেই সরকার গড়তে চলেছে বিজেপি(BJP)। আর সেই ফলাফলের জেরে দুই হাত তুলে নাচানাচি শুরু করেছেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা। শুধু নাচানাচিই নয়, এখন থেকেই তাঁরা দাবি করতে শুরু করে দিয়েছেন যে ২০২৪ সালে বাংলা(Bengal) থেকে নাকি আরও বেশি আসন নিয়ে কেন্দ্রে ফের সরকার গড়বেন নরেন্দ্র মোদি। শুভেন্দু অধিকারী তো আবার বুক ঠুকে বলেছেন ২৪ এর ভোটে বাংলা থেকে ২৫ আসন নিয়ে তাঁরা দিল্লি যাবেন। এই সব দাবি কতটা সত্যি হবে আর কতটা বানের জলে ভেসে যাবে সেটা সময়ই বলবে। তবে উত্তরপ্রদেশ সহ দেশের ৪টি রাজ্যে বিজেপি সরকার গড়তে চলায় তার জোয়ারে বঙ্গ বিজেপিতে কতখানি অক্সিজেন জুটছে তা বোঝা যাবে রাজ্যে ৩টি উপনির্বাচনের ফলাফলে, যা সম্ভবত এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। কার্যত সেই ৩ আসনের উপনির্বাচনই এখন বঙ্গ বিজেপির কাছে অগ্নিপরীক্ষা হয়ে দাঁড়াতে চলেছে।
বাবুল সুপ্রিয় ইস্তফা দিয়েছেন আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র থেকে। সেই আসনে উপনির্বাচন(Bye Election) হবে। আবার রাজ্যের দুই প্রবীণ মন্ত্রী তথা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বেরও জীবনাবসান হয়েছে। এই দুই ব্যক্ত্বিত্ব হলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও সাধন পাণ্ডে। তাঁদের মৃত্যুতে ফাঁকা হয়েছে কলকাতার বালিগঞ্জ ও মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্র দুটি। ফলে এই দুই আসনেও উপনির্বাচন করাতে হবে। অর্থাৎ ১টি লোকসভা কেন্দ্র ও ২টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন হতে চলেছে খুব শীঘ্রই। সূত্রে জানা গিয়েছে সেই নির্বাচন হতে পারে আগামী এপ্রিল মাসে। জাতীয় নির্বাচন কমিশনই(Election Commission) সেই উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে। এই ৩টি কেন্দ্রের ভোটেই কার্যত প্রমাণ হবে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, মণিপুর ও গোয়ায় বিজেপির জয়ের জেরে বঙ্গ বিজেপি কোনও অক্সিজেন পেল কিনা। কেননা বিজেপির অভিযোগ, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আওতায় হয়ে যাওয়া সাম্প্রতিক কালের পুরনির্বাচনে সন্ত্রাসের জন্য নাকি তাঁরা জয়ের মুখ দেখতে পারেনি। যদিও তা নিয়ে বিজেপির অন্দরেই প্রশ্ন রয়েছে। কেননা উত্তরবঙ্গ(North Bengal) সহ পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুরসভাগুলিতে সন্ত্রাসের কোনও অভিযোগ ছিল না। ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের সময় বিজেপি ওই সব এলাকা থেকে মোট ১২টি আসনে জয়ী হয়েছিল। অথচ সাম্প্রতিক কালে হয়ে যাওয়া পুরনির্বাচনে দেখা গেল ওই এলাকাতেই থাকা একাধিক পুরসভায় খাতাই খুলতে পারেনি বিজেপি। সেই সঙ্গে সব পুরসভাতেই হারের মুখ দেখেছে তাঁরা।
কার্যত পুরনির্বাচনে এই হতাশাজনক ফলের জেরে এখন বঙ্গ বিজেপির অন্দরেই ‘আত্মসমীক্ষা’র ডাক দিয়েছেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। সেই দাবিকে সমর্থন করেছেন আবার বঙ্গ বিজেপির বহু আদি নেতারা। কার্যত বঙ্গ বিজেপিতে যে মুষলপর্ব শুরু হয়েছিল তা তো থামার কোনও লক্ষ্মণই নেই, উল্টে নিজেদের হতশ্রী দশা ঢাকার জন্য এখন ৪টি রাজ্যে বিজেপির জয়কেই দুই হাত ধরে তুলে ধরার চেষ্টা করছে বিজেপি। সন্দেহ নেই ৪ রাজ্যে বিজেপির জয় বাংলার মাটিতেও গেরুয়া শিবিরকে কিছুটা হলেও অক্সিজেন জুগিয়ে দেবে। কিন্তু সেই অক্সিজেনে বাংলার মাটি থেকে বিজেপি জয়ের মুখ দেখবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কেননা পুরনির্বাচনের ফল বলে দিচ্ছে বাংলায় এখন বিজেপির পক্ষ মাত্র ১৩ শতাংশ মানুষ রয়েছেন। বিজেপির দাবি, মানুষ ভোট দিতে পারেনি, ভোট লুঠ হয়েছে। আর এখানেই ৩টি কেন্দ্রের উপনির্বাচনের গুরুত্ব উঠে আসছে। কেননা সেই নির্বাচন হবে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে। সেখানে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথের মতোই। একই সঙ্গে সেই উপনির্বাচনে থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী, যা বিজেপি পুরনির্বাচনের জন্য হাজারবার দাবি তুলেও পায়নি। স্বাভাবিক ভাবেই ওই ৩ কেন্দ্রের স্বচ্ছ নির্বাচন নিয়ে কোনও সন্দেহ থাকার কথা নয়। আর সেখানেই বোঝা যাবে দেশের ৪ রাজ্যে বিজেপির জয়ে বঙ্গ বিজেপি আদৌ কোনও অক্সিজেন পেল কী পেল না! বোঝা যাবে ২০২৪-এ বিজেপি বাংলা থেকে আদৌ আগেকার আসনগুলি ধরে রাখতে পারবে কিনা।