নিজস্ব প্রতিনিধি: আন্দোলনের(DA Movement?) ঝাঁঝ যে কমছে সেটা বেশ ভালই বোঝা যাচ্ছিল। এবার সেই আন্দোলনে একটা দাঁড়ি টেনে দিতে একটা সম্মানজনক রাস্তা খুলে দিল কলকাতা হাইকোর্ট(Calcutta High Court)। বকেয়া মহার্ঘ্যভাতা ও কেন্দ্রের হারে মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান, মূলত এই দুই দাবিকে সামনে রেখে গত আড়াই মাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের(West Bengal State Government Employees) একাংশ। শুধু আন্দোলনই নয়, মার্চ মাসে তাঁরা একদিনের জন্য কর্মবিরতি পালন করেন। এদিন অর্থাৎ বৃহষ্পতিবারও তাঁরা কর্মবিরতির(Lay Up Strike) ডাক দিয়েছিলেন। যদিও সেই ডাকে সেভাবে সাড়া পড়তে দেখা যাচ্ছে না এদিন। বরঞ্চ এই আন্দোলন নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে যে মামলা দায়ের হয়েছিল সেই মামলার শুনানিতেই কলকাতা হাইকোর্ট রাস্তা খুলে দিল এই আন্দোলনে ইতি টানার জন্য। আদালতের পরামর্শ রাজ্য সরকার আন্দোলকারীদের সঙ্গে আগামী ১৭ এপ্রিলের মধ্যে আলোচনায় বসুক।
আরও পড়ুন IPL’র জন্য মধ্যরাতেও মেট্রো, কাল কম চলবে
এক একদিনের কর্মবিরতিতে রাজ্যের ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা করে। সেই তথ্য তুলে ধরেই কলকাতা হাইকোর্টে মহার্ঘ্য ভাতার দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন আইনজীবী রমাপ্রসাদ সরকার। সেই মামলার শুনানিতেই এদিন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, আগামী ১৭ এপ্রিল কর্মচারী সংগঠনের তিন সদস্যের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে রাজ্যকে। রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং অর্থসচিবের উপস্থিতিতে আলোচনায় বসবেন সরকারি কর্মচারী সংগঠনের তিনজন সদস্য। আলোচনায় যাতে কোনও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সে দিকে নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এ প্রসঙ্গে ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, ডিএ সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন।
আরও পড়ুন দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠা দিবস, এদিকে দেওয়াল লেখার কর্মী নেই
হাইকোর্টে এদিন মামলার শুনানি চলাকালীন সরকারি কর্মচারীরা দফতরে যাচ্ছেন কি না, জানতে চান ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। উত্তরে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) জানান, তাঁরা অফিসে গিয়েছেন। কিন্তু অনেকে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর পর জরুরি পরিষেবা সচল রয়েছে কি না, জানতে চান ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। হাসপাতালগুলির অবস্থা নিয়েও প্রশ্ন করেন। বিচারপতির প্রশ্নের জবাবে এজি জানান, জরুরি পরিষেবা সব চলছে। সেখানে কোনও অসুবিধা নেই। সব দফতরে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরা গ্রহণের ব্যবস্থা নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা বিচারাধীন। কর্মচারী সংগঠনগুলি তার জন্য অপেক্ষা করতে পারছে না? এখনই কেন কর্মবিরতির মতো পদক্ষেপ?’ মামলাকারীর দাবি, ‘কর্মবিরতির ফলে ৪৩৬ কোটি টাকার ক্ষতি হবে। এটা তো ভাবার বিষয়। এর জন্য অবিলম্বে সমাধান প্রয়োজন। ১৫ দিন পর আবার এমন পদক্ষেপ করলে তখন কী হবে?’
আরও পড়ুন ঝাঁঝ কমছে DA আন্দোলনের, গুরুত্ব পাচ্ছে না কর্মবিরতি
কর্মচারী সংগঠনের আইনজীবীর সওয়াল, এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী বেশ কিছু ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করেছেন। তার প্রতিবাদেই বৃহস্পতিবার কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জানান, কর্মবিরতির পথে না হেঁটে অন্য আইনি পদক্ষেপ করা যেত। এই কথোপকথনের পরেই রাজ্য সরকারকে কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এদিকে সরকারি কর্মচারীদের যৌথমঞ্চের তরফে জানানো হয়েছে তাঁরা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। তিনি সময় দিয়েছেন। তাঁদের প্রতিনিধিরা রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন ও পরিস্থিতি তুলে ধরবেন। সেই সঙ্গে তাঁরা ওইসময় দিল্লিতে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের সঙ্গেও দেখা করে ডেপুটেশন দেবেন।