নিজস্ব প্রতিনিধি: বর কোটিপতি ব্যবসায়ী। ৩ তলা বাড়ি, তাও কৈখালী এলাকায়। ৪টে গাড়ি। সেই বাড়ির বউ করেছে ‘রূপশ্রী’(Rupasree)র জন্য আবেদন। শুধু আবেদন করাই নয়, ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পের ২৫ হাজার টাকা পেতে বিয়ের নকল কার্ডও বানিয়ে ফেলেছে ওই মহিলা। আর এহেন ঘটনা সামনে আসতেই কার্যত চোখ কপালে উঠেছে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের(Bidhannagar Police) আধিকারিক থেকে কর্মীদের। শুধু এই ১টিই ঘটনা নয়, কার্যত এইরকম ভুরি ভুরি ঘটনা ঘটছে বাংলা জুড়ে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) মেয়েদের বিয়ের জন্য যে ‘রূপশ্রী’ প্রকল্প চালু করেছেন সেই প্রকল্পের টাকা পেতে শুধু যে ধনী পরিবারের মেয়েরাই আবেদন করছে তাই নয়, আবেদন করছে বিবাহিত মহিলারাও। খাস বিধাননগর পুরনিগম এলাকাতেই এই রকম গোটা ৩০ ঘটনা ঘটেছে। আর তা দেখা কার্যত তাজ্জব পুলিশ আধিকারিকেরা। মানুষের লোভ কোন জায়গায় পৌঁছালে এই ঘটনা ঘটে তা ভেবে মাথায় হাত দিচ্ছেন তাঁরা।
বাংলার গরিব-দুঃস্থ পরিবারের মেয়েদের বিয়ের সময় এককালীন ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সুবিধা দিতে ‘রূপশ্রী’ প্রকল্প চালু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে সব পরিবারের আয় বছরে দেড় লক্ষ টাকার কম, কেবলমাত্র তাঁরাই প্রথম বিয়ের ক্ষেত্রে এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে পাত্র ও পাত্রী দু’জনকেই বিবাহযোগ্য হতে হবে। আবেদনের সময় তাঁদের বিয়ের কার্ডও জমা দিতে হবে। আবেদনপত্র জমা পড়লে প্রশাসনের তরফে খতিয়ে দেখা হয় সবকিছু। সব ঠিক থাকলে পাত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা ঢোকে। বিয়ের এক থেকে দু’মাস আগে আবেদন করা যায়। চলতি বছরের এপ্রিল, মে আর জুন মাসে বিধাননগর পুরনিগম এলাকা থেকে শতাধিক রূপশ্রীর আবেদন জমা পড়েছে। সেই সব আবেদন খতিয়ে দেখতে গিয়েই কার্যত মাথায় হাত পড়ছে পুলিশের। দেখা যাচ্ছে, যারা নিত্যদিন থানার সামনে এসে হাতজোড় করে বলছেন, ‘স্যার, আমরা খুবই গরিব, একটু দেখবেন প্লিজ’, তাঁরা আদতে কোটিপতি বাড়ির বউ। নয় নয় করেও অন্তত জন ২০ এইরকম আবেদনকারীর সন্ধান পেয়েছে পুলিশ।
আরও তাজ্জব করে দেওয়ার বিষয় যারা ওই সব আবেদন করেছেন তাঁরা কেউ ৩ বাচ্চার মা তো কেউ ২ বাচ্চার মা। কেউ কেউ মা না হলেও রীতিমত বিবাহিত। তারপরেও তাঁরা ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পের জন্য আবেদন করে বসে আছে। শুধুমাত্র ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পের ২৫ হাজার টাকা হাতাতেই বিয়ের ভুয়ো কার্ড ছাপিয়ে আবেদন করেছেন এরা। ধরা পড়ে কেউ বলছেন পুজোর শাড়ি কেনার জন্য আবেদন করেছিলেন, কেউ বা বলছেন পুজোর আগে রূপচর্চার জন্য ওই আবেদন করছেন। কেউ কেউ আবার ধরা পড়ে রীতিমত জানাচ্ছেন, পুজোর সময় হাতখরচ জোগাতে ওই আবেদন করেছেন। যদিও পুলিশের ধারনা এই ঘটনা আদতে হিমশৈলের চূড়ামাত্র এবং এটা এলাকাভেদে রীতিমত চক্র আকারে চলছে আর তা চালাচ্ছেন স্থানীয় তৃণমূল(TMC) কর্মীরাই। বিনিময়ে সম্ভবত তাঁরা কাটমানি(Cutmoney) পাচ্ছেন। যদিও এই বিষয়ে সুস্পষ্ট ভাবে পুলিশের কাছে কেউ কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি। আর তাই কাউকে চট করে ধরতেও পাচ্ছে না পুলিশ।