নিজস্ব প্রতিনিধি: বহু ভাষাভাষীর এই দেশের সংবিধানে(Constitution of India) কোথাও বলা হয়নি রাষ্ট্রীয় ভাষা(National Language) হিন্দি। কার্যত কোনও ভাষাকেই সেখানে রাষ্ট্রীয় ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। অথচ গেরুয়া ব্রিগেডের তরফ থেকে দেশের সব রাজ্যেই জোর করে হিন্দি(Hindi) ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে কয়েক দশক ধরেই। নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) জমানায় সেই প্রবণতা যা আরও বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে তাই নয়, আঞ্চলিক ভাষাগুলিকে যতটা সম্ভব খাটো করা হচ্ছে গেরুয়া ব্রিগেডের তরফে। এই বাংলার বুকেই একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময় যেমন গেরুয়া মঞ্চ থেকে ধেয়ে এসেছিল, ‘বাংলা ধ্রুপদ ভাষা নয়’ তেমনি সাম্প্রতিক কালে এই রাজ্যেরই একটি কেন্দ্রীয় স্কুলে সেখানকার প্রিন্সিপাল বাংলার শিক্ষিকাকে কাজ থেকে ছাঁটাই করার কারণ হিসাবে তুলে ধরেছিলেন যে বাংলা নাকি একটি বিলুপ্ত ভাষা। সেই ভাষায় নাকি কেউ কথা বলেন না, কেউ পড়াশোনা করতেও চান না। এই সবের ওপর এবার মক্ষোম জবাব ছুঁড়ে দিলেন বাংলার অগ্নিকন্যা তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। তাঁর নির্দেশে এবার থেকে WBCS পরীক্ষায় বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হল ৩০০ নম্বরের বাংলা Paper।
আরও পড়ুন মুখ্যমন্ত্রীর কড়া পদক্ষেপে রাজ্যে কমল প্রসূতি মৃত্যুর সংখ্যা
দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যে দাবি উঠেছিল যে WBCS পরীক্ষায় বাধ্যতামূলক ভাবে বাংলা ভাষার Paper রাখা হোক। বাংলা পক্ষ(Bangla Pakkha) নামের একটি সংগঠন এই দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে চলেছে। অবশেষে রাজ্য সরকার এই দাবি মেনে নিয়েছে এবং সেই মর্মে গেজেট বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে। এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরে বাংলা পক্ষের তরফে Public Service Commission বা PSC কার্যালয়ের সামনে রীতিমত মিষ্টি বিলি করে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে। সংগঠনের বক্তব্য, বাংলা আবশ্যিক হওয়ায় ভিন রাজ্যের কেউ এই পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। আর বসতে হলেও তাঁকে বাংলা শিখতেই হবে। এটা একটা প্রাপ্তি। এর ফলে ভূমিপুত্রদের অধিকার সংরক্ষিত হবে। যারা বাংলা ভাষার অপমান করে চলেছেন, পদে পদে বাংলা ভাষাকে খাটো করে দেখতে চাইছেন, জোর করে বাংলা ভাষার মানুষদের ওপর হিন্দি ভাষাকে চাপিয়ে দিতে চাইছেন তাঁদের সবাইকে এটা মক্ষোম জবাব। আর এর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অশেষ ধন্যবাদ।
আরও পড়ুন ৩ সপ্তাহের মধ্যে ভাড়া না বাড়ালে রাস্তা থেকে বাস উধাও
রাজ্য সরকার যে গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, WBCS পরীক্ষায় Paper A-তে ৩০০ নম্বর রয়েছে। তার উত্তর দিতে হবে বাংলা অথবা নেপালিতে। প্রার্থীরা সেই পেপারে বাংলা অথবা নেপালিতে চিঠি বা সংবাদ প্রতিবেদন লিখবেন। এছাড়াও থাকবে সারসংক্ষেপ, অনুধাবনমূলক পাঠ্যাংশ, ইংরেজি থেকে বাংলা বা নেপালিতে অনুবাদ এবং ছোট প্রবন্ধ। Paper B-তে থাকবে ইংরেজি। বাংলা এবং ইংরেজি দু’টিই আবশ্যিক পত্র। এতে যাঁরা ৩০ শতাংশ বা তার বেশি পাবেন, তাঁদেরই পরবর্তী পেপারের নম্বর গ্রাহ্য হবে। Paper A এবং Paper B-তে পাশ করা আবশ্যিক হলেও তা মেধা তালিকায় প্রভাব ফেলবে না। এই দু’টি ভাষার প্রশ্ন হবে মাধ্যমিক বা সমতুল পর্যায়ের।