নিজস্ব প্রতিনিধি: খাস কলকাতার(Kolkata) বুকে ধর্মতলায় সুপারডুপার ফ্লপ হয়েছে শাহি সভা। তার পরে পরেই দেশের ৩ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বড় জয়ের মুখ দেখেছিল পদ্মশিবির। সেই জয়ের মধ্যে দিয়েই শাহি সভার ফ্লপের হতাশা কাটিয়ে উঠতে চাইছিল বঙ্গ বিজেপি(Bengal BJP)। কার্যত বাংলার রাজনীতির উঠোনে অক্সিজেন খুঁজতে নেমে পড়েছিল তাঁরা। কিন্তু গত ৪ ডিসেম্বর রাজ্য বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তাঁদের দিকে বাউন্সার ছুঁড়ে দিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। তিনি সাফ জানিয়েছিলেন, ‘মাত্র একটা নির্বাচনে জিতে বাবুদের কী অবস্থা! বিধানসভার বাইরে লাড্ডু বিলোচ্ছে! আমি বলব, পারলে তিন দিন ধরে লাড্ডু বিলাও। বেল পাকলে কাকের কী? ওটা কংগ্রেসের পরাজয়, মানুষের পরাজয় নয়। আমি দুর্বল নই। লোকসভা ভোটে বাংলায় বিজেপি আগে ৫টি আসন পেয়ে দেখাক!’ সেই থেকে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে জোর চর্চা চলছিল মুখ্যমন্ত্রীর সেই দাবিকে ঘিরেই। সবার একটাই জিজ্ঞাস্য, ‘সত্যিই কী ৫টাও মিলবে না’। এবার সেই দাবিকেই মান্যতা দিল মুম্বইকেন্দ্রিক ভোট-কুশলী সংস্থা Jarvis Technology and Consulting Private Limited।
২৪’র ভোটের(General Election 2024) আগে বঙ্গ বিজেপির দুই বড় মাথা সুকান্ত মজুমদার আর শুভেন্দু অধিকারী দুইজনেরই ওপর থেকে বল-ভরসা হারিয়ে ফেলেছে পদ্মের শীর্ষ নেতৃত্ব। আর তাই তাঁরা বঙ্গ বিজেপির নির্বাচনী ব্যাটন তুলে দিতে চলেছেন Jarvis’র হাতে। ইতিমধ্যেই কলকাতা-সহ জেলায় জেলায় এই সংস্থা তাঁদের কাজ শুরুও করে দিয়েছে। এবার তাঁরাই একটি সমীক্ষার রিপোর্ট তুলে দিয়েছে বাংলা সফরে আসা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ(Amit Shah) ও বিজেপির সভাপতি জে পি নাড্ডার(J P Nadda) হাতে। যদিও সেই রিপোর্ট তাঁরা দিয়েছেন দিল্লিতে। সেই রিপোর্ট পড়েই তড়িঘড়ি করে বাংলায় ছুটে এসেছেন শাহ-নাড্ডা। কেননা Jarvis’র রিপোর্টে মমতার দাবিকেই মান্যতা দেওয়া হয়েছে। ২৪’র ভোটে বাংলায় বিজেপি ৫টি আসনও পাওয়ার জায়গায় নেই। আর তার জেরে মনে করা হচ্ছে, রাজ্যনেতাদের ভুলভাল রিপোর্টিং এবং পারফরম্যান্স নিয়ে বিরক্তি ও ক্ষোভ এদিনের দুটি বৈঠকে উগরে দিতে পারেন শাহ—নাড্ডা দু’জনেই। একই সঙ্গে এদিন দু’টি সাংগঠনিক বৈঠকে দলের কোন্দল, রাজ্য নেতৃত্বের ব্যর্থতা, সমস্ত নিয়েই বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে আন্দোলনের রূপরেখা ও রণকৌশল নিয়েও একাধিক নির্দেশও দিয়ে যাবেন শাহ-নাড্ডারা।
শাহ আগে বঙ্গ বিজেপির কাছে ২৪’র ভোটের জন্য ৩৫টি আসনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে দলের সমীক্ষায় এবং সঙ্ঘের রিপোর্টে উঠে আসে, রাজ্যের অর্ধেক আসনে লড়াই করার মতো জায়গাতেই নেই বিজেপি। এই অবস্থায় ২৪’র ভোটের জন্য ২৪টি আসনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁদে দেওয়া হয় বঙ্গ বিজেপির কাছে। কিন্তু এবার বাংলাজুড়ে সমীক্ষা চালিয়ে Jarvis স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বাংলায় এবারে ৫টি আসনও জয়ের অবস্থায় নেই বিজেপি। কেন এই হাল? সেটাও জানিয়েছে Jarvis। সূত্রে জানা গিয়েছে, Jarvis’র রিপোর্টে বাংলার মাটিতে এই দুর্দশার জন্য বেশ কিছু কারণ তুলে ধরা হয়েছে।
বলা হয়েছে বাংলার বুকে রাজ্য সরকার যে আর্থসামাজিক প্রকল্পগুলি চালু রেখেছে তাতে রাজ্যের ৬ কোটি মানুষ উপকৃত হয়েছেন। তাঁরা কোনও ভাবেই চান না এই সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ হয়ে যাক। নিজেদের স্বার্থেই তাঁরা বিজেপির দিক থেকে মুখ ঘুরিয়েছেন। এই অবস্থায় পরিস্থিতি আরও খারাপ করে দিয়েছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা আটকে রাখার ঘটনা। মানুষ বিজেপির ওপর চরম ক্ষুব্ধ। পাশাপাশি Jarvis এটাও জানিয়েছে, বাংলায় মমতা ম্যানিয়ার বিকল্প কিছু নেই। তাঁর যোগ্য বিকল্প বিজেপির কাছে কিছু নেই। তৃণমূলের মতো সংগঠন বিজেপিরও নেই। শুধু ধর্মের ভোকাল টনিক দিয়ে বাংলায় জয়ের মুখ দেখা সম্ভব নয়।