নিজস্ব প্রতিনিধি: অরাজনৈতিক বোধবুদ্ধিহীণ মানুষদের রাজনীতির ময়দানে নামিয়ে দিলে দলকে কত বড় বিড়াম্বনার মধ্যে পড়তে হয় সেটাই কার্যত রুটিন করে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন মনোরঞ্জন ব্যাপারী(Monoranjan Bapari)। হুগলি জেলার বলাগড়ের(Balagarh) এই বিধায়ক দলিত সাহিত্যিক হওয়ার সুবাদে মুখ্যমন্ত্রীর নেক নজরে পড়েছিলেন। সেই সূত্রেই খোদ মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে দলের প্রার্থী করেন বলাগড় থেকে। কিন্তু জেতার পর থেকে হেন কোনও মাস নেই যে মাসে তিনি দলকে বা দলের নেতৃত্বকে চরম অস্বস্তিতে ফেলে দেননি। শনিবার যেটা করলেন সেটা তো আরও মারাত্মক। বাঙালির অহংকার, বাংলার গর্ব, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে(Sourav Gangully) নিয়েই কদর্য ভাষায় আক্রমণ শানলেন তিনি, যা গোটা রাজ্যবাসীকেই ক্ষিপ্ত করে তুলেছে। এরপরেও তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না করলে কার্যত গণরোষের মুখে তাঁদেরকেই যে পড়তে হবে সেটা নানান মহল থেকেই শোনা যাচ্ছে।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে প্রচার করতে নেমে রিক্সা চালিয়ে বলাগড়ে আমজনতার ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন মনোরঞ্জন। সেই সময় আমজনতার একাংশ বেশ ক্ষোভের সঙ্গেই জানিয়েছিল, ‘রিক্সাওয়ালাকে কে ভোট দেবে।’ তা নিয়ে নানান সংবাদমাধ্যমেও খবর হয়। ভোটের পর প্রায় নিয়ম করেই দলেরই নেতাদের বিরুদ্ধে লাগাতার ফেরবুক পোস্ট(Facebook Post) করে গিয়েছেন তিনি। তাঁর পোস্টের বিড়াম্বনায় অতিষ্ট হয়ে দল তাঁকে এই ধরনের পোস্ট থেকে বিরত থাকতেও বলে। তার জেরে কয়েকমাস চুপচাপই ছিলেন। শনি সকালে তিনি আবার বিতর্কিত পোস্ট করা শুরু করে দিলেন নিজের ফেসবুকে। আর তাও যাকে তাকে নিয়ে পোস্ট করেননি মনোরঞ্জন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের(Amit Shah) নৈশভোজে যাওয়া নিয়ে কার্যত চূড়ান্ত কদর্যা ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছেন মনোরঞ্জন।
নিজের ফেসবুক পোস্টে বলাগড়ের বিধায়ক(TMC MLA) লিখেছেন, ‘সৌরভকে নিয়ে আমার কোনও দিন তেমন কোনও উন্মাদনা কোনও কালে ছিল না। আলালের ঘরের দুলাল। ব্যাট দিয়ে ভাল বল ঠুকতে পারে। সে নিয়ে আর যাই হোক দেশ, জাতি, মানুষের কোনও হিত-মঙ্গল হয় না। মাত্র সে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিতে পারে। তাই সৌরভকে নিয়ে আমার কোনও আবেগ ছিল না। কিন্তু আজকের যখন সে এক চরম বাঙালী বিদ্বেষী বাংলা ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি বিরোধী- বাংলা ভাগের চক্রান্তকারী ব্যাক্তিকে আদর আপ্যায়ন করে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ভুরিভোজ করায় – সৌরভকে নয়, যারা তাকে বাঙালির আইকন বলে ধেই ধেই নাঁচে তাদের দেখে করুনা হয়।’
অমিত শাহ বা বিজেপি কতটা বাংলা বা বাঙালি বিরোধী সেটা সম্পর্কে রাজ্যবাসী চূড়ান্ত ওয়াকিবহাল। সেই জন্যই রাজ্যবাসী একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির দৌড় ৭৭ আসনেই থামিয়ে দিয়েছে। আগামী দিনে বিজেপি আবারও বড় ধাক্কা খাবে এই বাংলার মাটি থেকে। কিন্তু যেখানে খোদ দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন থেকে সৌরভকে বার্তা দিচ্ছেন এই কথা বলে যে, ‘সৌরভকে বলব ওকে মিষ্টি দই খাওয়াতে’, তখন দলেরই এক বিধায়ক কীভাবে ফেসবুকে সৌরভের বিরুদ্ধে কদর্য আক্রমণ শানেন! এই আক্রমণ শুধু যে সৌরভকে তা তো নয়, কার্যত সমগ্র বাংলা ও বাঙালির প্রতি আক্রমণ। এখন তাই বলাগড়বাসীর একাংশ বেশ ক্ষোভের সুরেই জানিয়ে দিচ্ছেন, ‘শিক্ষাদীক্ষাহীণ রুচিবোধহীণ রিক্সাওয়ালাকে বিধায়ক করে দিলে এই অবস্থাই হবে। দলের টিকিট দেওয়ার আগে এটা তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের ভেবে দেখার প্রয়োজন ছিল। সৌরভকে এই কদর্যা ভাষায় আক্রমণ বাঙালি মুখ বুজে মেনে নেবে না। শাসক দল এখনও যদি মনোরঞ্জনের প্রশ্নে পদক্ষেপ না নেয় তাহলে তাঁদেরকেই না পঞ্চায়েত নির্বাচনে দাম গুণতে হয়।’