নিজস্ব প্রতিনিধি: বয়স্ক মানুষেরা প্রায়ই একটি কথা বলেন, ‘ফুর্তিতে প্রাণ গড়ের মাঠ’। অর্থাৎ গড়ের মাঠ যেমন বিশাল ও খোলামেলা, মানুষের মনে ফুর্তিও সেরকম হওয়া উচিৎ। কিন্তু সব ক্ষেত্রে এই ধরণের ফুর্তি ভালো নয়, বরং বিপদ ডেকে আনে সেটাও জানা উচিৎ। এই যেমন বর্তমান সময়, অতি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে মানব সমাজ। একদিকে করোনার উর্ধ্বমুখী গ্রাফ ও অন্যদিকে করোনার ভয়ানক প্রজাতি ওমিক্রনের বাড়বাড়ন্ত। এই সময়ও মানুষের মনের ফুর্তি যেন শেষ হচ্ছে না।
ডিসেম্বর মাসের শেষ লগ্নে যেমন বড়দিন আসে তেমনই পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে আমরা নতুন বছরকে বরণ করে নিতে তৈরি হই। ফলে মানুষের মনে শীতের রোদ গায়ে মেখে এদিক-ওদিক ঘুরে বেরানোর ফুর্তি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে এই সময়টা। কিন্তু সময়টা এখন ভালো যাচ্ছে না। অতিমারী করোনাভাইরাস আবার ভিড়ভাট্টা পছন্দ করে। জনসমাগম, গাদাগাদি ভিড় হলেই তো করোনার বাড়বাড়ন্ত। বিগত দুই বছর ধরে এই বিষয়গুলি আমাদের গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। এই দুই বছরে আমরা বেশ কয়েকটি নতুন শব্দ শিখেছি। যেমন, লকডাউন, কনটেনমেন্ট জোন, আইসোলেশন। আবার নতুন কয়েকটি জিনিসকে আমাদের জীবনের অঙ্গ হিসেবে বরণ করে নিয়েছি। যেমন, মাস্ক, স্যানিটাইজার, ফেসশিল্ড, অক্সিমিটার প্রমুখ। কিন্তু আমাদের শিক্ষা হয়েছে কতটা? এই প্রশ্নই ঘুরে ফিরে আসছে বিগত কয়েকদিনের লাগামছাড়া ভিড় দেখে।
২৫ ডিসেম্বর, কলকাতা দেখল এক অভুতপূর্ব দৃশ্য। বিকেল থেকেই ভিড় জমল পার্কস্ট্রিটে। রাত যত বাড়ল ততই ভিড় বাড়ল, মধ্যরাতে পার্কস্ট্রিট তো জনসমুদ্রে পরিনত হল। যা দেখে চমকে উঠলেন চিকিৎসক মহল ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন ফের করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাবে কলকাতায়। আর হলও তাই, দুই-তিন দিনের মধ্যেই করোনা সংক্রমণ দ্বিগুণ, তিনগুণ হারে বাড়ল। শুক্রবার রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের জারি করা করোনা বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৪৫১ জন। এরমধ্যে শুধুমাত্র কলকাতাতেই আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৯৫৪ জন।
প্রতিদিনই সংখ্যাটা ১ হাজারের বেশি বাড়ছে। তবে বড়দিনে শুধু কলকাতায় ভিড় হলেও বর্ষশেষের রাতে ভিড়টা কিন্তু রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়েছে। যেমন, দিঘা-মন্দারমনি, বকখালি, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া হয়ে ডুয়ার্স বা পাহাড়। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ বেরিয়ে পড়েছেন বাইরে। চারিদিকে থিকথিক করছে ভিড়। ফলে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা আগামীদিনে কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটা নিয়েই রাতের ঘুম ছুটেছে চিকিৎসক মহলের। কারণ ইতিমধ্যেই রাজ্যের প্রায় ৬০ জনের বেশি চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত। শেষ বেলায় বলি, চুলোয় যাক করোনা, সাধারণ মানুষের তাতে কী এসে যায়? ফুর্তিতে প্রাণ গড়ের মাঠ যে।