নিজস্ব প্রতিনিধি: দল যে তাঁর পাশে নেই সেটা আগেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সাফ জানিয়েছিলেন, কেউ অন্যায় করলে, মানুষের ওপর অত্যাচার করলে তাঁকে শাস্তি পেতেই হবে। কার্যত সেই সময় থেকেই প্রহর গুণছিল বাংলা। কবে গ্রেফতার হবেন তিনি, মানে সন্দেশখালির(Sandeshkhali) শেখ শাহজাহান(Sheikh Sahajahan)! অবশেষে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিনে সেই সুখবর ভেসে উঠল সকাল হতেই। রাজ্য পুলিশের হাতেই গ্রেফতার হয়েছে শেখ শাহজাহান। এই বার্তায় সন্দেশখালিজুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে গণমহোৎসব। স্বস্তির হাওয়া ঘুরছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের(TMC) অন্দরেও। কেননা এই গ্রেফতারি বিরোধীদের যাবতীয় আক্রমণের মুখ ভোঁতা করে দিল। আর শেখ শাহজাহানকে নিয়ে লোকসভা নির্বাচনে(General Election 2024) নিজেদের ঘরে কোনও বেনিফিট তুলতে পারবে না কিবা বাম(Left), কিবা বিজেপি(BJP)। কার্যত শাহজাহানের গ্রেফতারি তাঁদের হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়েছে। বাংলাজুড়ে সন্দেশখালি নিয়ে বিরোধীদের প্রচারও এবার জনমানসে ফিকে হতে শুরু করে দেবে।
কার্যত ED’র ওপর হামলাবাজির ঘটনার পর থেকেই বিরোধীদের নিশানায় উঠে এসেছে শেখ শাহজাহান। বস্তুত শাহজাহানকে বাংলার মানুষ সেভাবে কেউ চিনতও না। কিন্তু ওই একটি হামলাবাজির ঘটনাই তাঁকে বাংলা তো বটেই জাতীয় স্তরেও পরিচিতি দিয়ে ফেলেছিল। এরপরে সময় যত এগিয়েছে সন্দেশখালিজুড়ে শাহজাহানের নিয়ন্ত্রণের রাশ ততই আলগা হয়েছে। তাঁর শাগরেদদের কুকীর্তির কথাও ততই সামনে এসেছে। একই সঙ্গে বাংলার শাসক দলের দিকে বার বার আঙুল তুলে আক্রমণের নিশানা বানিয়ে গিয়েছে বিরোধী বাম ও বিজেপি। এবার শাহজাহানের গ্রেফতারিতে সেই আক্রমণ যে রাতারাতি বন্ধ হয়ে যাবে, এমনটা মোটেও না। বরঞ্চ লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত এই আক্রমণ চালিয়ে নিয়ে যাবে বিরোধীরা। কিন্তু সেই আক্রমণের ফায়দা আর তাঁরা ভোটবাক্সে পাবে না। কেননা শাহজাহান ও তাঁর শাগরেদদের বিরুদ্ধে সন্দেশখালিজুড়ে যে গণরোষ দেখা দিয়েছিল তা স্পষ্টই বলে দিয়েছে, সেই রোষ তৃণমূলের বিরুদ্ধে নয়। সেই কারণেই সেখানে যাওয়া তৃণমূলের কোনও নেতামন্ত্রী জনরোষের মুখে পড়েননি। বিক্ষোভের মুখে পড়েননি। যারা পড়েছেন তাঁরা সকলেই স্থানীয় নেতা। এরা প্রত্যেকেই গ্রেফতার হয়েছেন।
আর এখানেই তৃণমূলের স্বস্তি। গণরোষ এবার ক্রমশ থিতু হওয়ার পথেই হাঁটা দেবে। বিরোধীরা অবশ্যই চাইবে এই রোষ জিয়ে রেখে লোকসভা নির্বাচনে তাঁর ফায়দা লুঠতে। যদিও তা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। অন্তত ওয়াকিবহাল মহলের তেমনটাই ধারনা। কেননা সন্দেশখালির ড্যামেজ কন্ট্রোলে শুধু যে শাসক দল কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে তাই নয়, নেমে পড়েছে রাজ্য সরকারও। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া আইনী পদক্ষেপ করার পাশাপাশি দলের তরফে যেমন টাকা ফেরানোর পালা শুরু হয়ে গিয়েছে ঠিক তেমনই যাদে জমি দখল করা হয়েছিল, তাঁদের জমি ফেরানোর পালা শুরু হয়ে গিয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্থ জমিতে যাতে আবারও চাষ করা যায় তার ব্যবস্থা গ্রহণও করা হচ্ছে। পাশপাশি বিক্ষোভে সামিল আমজনতাও বুঝেছেন, রাজ্য সরকার পাশে না থাকলে, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস পাশে না থাকলেও তাঁরাও ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না। আর যেহেতু ক্ষোভ তৃণমূলের বিরুদ্ধে নয়, তাই সন্দেশখালির জনতাও এখন শাসক দলের হাত ধরেই শান্তির পথে হাঁটতে চাইছেন।