নিজস্ব প্রতিনিধি: জোড়াফুল শিবিরের জেলা স্তরে সাংগঠনিক রদবদলে এক ধাক্কায় আট জেলায় সভাপতি বদলানো হয়েছে। অনেক জেলায় বদলেছেন চেয়ারম্যানও। নতুন যাদের পদপ্রাপ্তি ঘটেছে তাঁদের সকলকেই দলের তরফে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, পদে বসলে কাজ করতে হবে। পদ ধরে রাখতে হলেও কাজ করতে হবে। শুধু তাই নয়, জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, এক বছর অন্তর তাঁদের কাজের মূল্যায়ণ বা Performance Review করা হবে এবং প্রত্যাশিত কাজ করতে না পারলে তাঁকে পদ থেকে সরেও যেতে হতে পারে। এখন জানা যাচ্ছে, এই নিয়ম শুধু ওপরতলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হচ্ছে তাই নয়, এই মডেলে দলের শাখা সংগঠনেও লাগু হতে চলেছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়(Abhishek Banerjee) তৃণমূলের(TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই সাংগঠনিক রদবদলের এই নতুন ধারা যুক্ত হয়েছে।
তৃণমূলের নেতারা অতীতে বছরের পর বছর জেলা সভাপতির দায়িত্বে থাকতেন। যেমন, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দীর্ঘকাল গোটা উত্তর ২৪ পরগনার সভাপতি ছিলেন। অনুব্রত মণ্ডল এক দশকের বেশি সময় বীরভূমের জেলা সভাপতি থেকেছেন। বাম জমানা থেকেই তপন দাশগুপ্ত হুগলির সভাপতি। অরূপ রায়ও বাম আমলে শুরু করে তৃণমূল জমানারও বেশ ক’বছর হওড়া জেলার সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন। অধিকারী পরিবার দীর্ঘ সময় ধরে পূর্ব মেদিনীপুরে নেতৃত্ব দিয়েছে। অভিষেক সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর এই ট্র্যাডিশন ভেঙে নতুন পথ ধরেছে জোড়াফুল শিবির। কোনও কোনও জেলা ভেঙে একাধিক সাংগঠনিক জেলাও গঠিত হয়েছে। বস্তুত, অভিষেক দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজ্যে ৩৫টি সাংগঠনিক জেলা গড়ে তোলা হয় আড়াই বছর আগে। এখন দেখা যাচ্ছে সেই সময় যাঁদের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি নেতানেত্রী এখন আর সে দায়িত্বে নেই।
সাংগঠনিক জেলা তৈরির পর যাঁরা সভাপতি হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে আলিপুরদুয়ারে প্রকাশ চিক বরাইক, জলপাইগুড়িতে মহুয়া গোপ, উত্তর দিনাজপুরে কানাইয়ালাল আগরওয়াল, জঙ্গিপুরে খলিলুর রহমান, পূর্ব বর্ধমানে রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, হাওড়া গ্রামীণে অরুণাভ সেন, দক্ষিণ কলকাতায় দেবাশিস কুমার, আরামবাগে রামেন্দু সিংহ রায়, যাদবপুর-ডায়মন্ড হারবারে শুভাশিস চক্রবর্তীরা এ বারও সভাপতি হয়েছেন। এঁদের বাদ দিলে বাকি সব সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পদেই এসেছে বদল। দলের নেতাদের দাবি, এখন পারফর্ম করতে পারলে তবেই পদ থাকবে। মোটামুটি এক বছর অন্তর জেলা সভাপতি, ব্লক সভাপতিদের কাজের রিভিউ হচ্ছে।
২০২২-এর অগস্টে জেলাস্তরে এমন সাংগঠনিক রদবদল হয়েছিল। এ বছর পঞ্চায়েতে ভোটের পরই জেলা নেতৃত্বের পারফর্ম্যান্সের রিভিউ হয়। তার ভিত্তিতে নতুন জেলা নেতৃত্বের তালিকা বেরিয়েছে। দলের গঠনতন্ত্র মেনে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) অনুমোদনেই তৃণমূলের সাংগঠনিক রদবদল হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নেতা-কর্মীদের কাজকর্মে নিরন্তর নজর রাখেন। আবার এটাও জানা যাচ্ছে, সাংগঠনিক নেতাদের কাজের রিভিউয়ে একটি ভোটকুশলী সংস্থার পরামর্শও নেওয়া হচ্ছে। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন(General Election 2024) মিটে গেলে ফের জেলা স্তরে নেতৃত্বের কাজের রিভিউ হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে।