নিজস্ব প্রতিনিধি: বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী এবং মতুয়াদের ধর্মসমাজের প্রাণকেন্দ্র ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ির বড় ছেলে শান্তনু ঠাকুর(Shantanu Thakur) রীতিমত ডিগবাজি খেয়েছেন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে। সাধারণ মানুষ এই আইনকে Citizenship Amendment Act বা CAA নামেই বেশি চেনেন। সেই CAA নিয়ে শান্তনুর ডিগবাজিতে নিজেদের লাভই দেখছে তৃণমূল(TMC)। এক সপ্তাহের মধ্যে CAA নিয়ে শান্তনুর সুর বদলকে হাতিয়ার করে এবার মতুয়াদের মাঝে প্রচারে নামছে বাংলার শাসক দল। সেই সঙ্গে তুলে ধরা হবে মতুয়াদের জন্য করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকারের উন্নয়নও।
এক সপ্তাহ আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির নিশ্চিন্তপুরে সভায় শান্তনু বলেছিলেন, ‘যারা ১৯৭১ সালের পরে এসেছেন তাঁদের নাগরিকত্ব দরকার। কারণ, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করতে হবে। বিজেপি সরকার CAA চালু করলে আর কোনও সরকারের ক্ষমতা নেই, আমাদের যখন খুশি ঘাড়ধাক্কা দিয়ে দেশ থেকে বার করে দেয়। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার CAA চালু করবে।’ কিন্তু গতকাল উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা থানা এলাকার কুঠিবাড়িতে মতুয়া মহাসংঘের একটি অনুষ্ঠানে তিনি জানান, ‘আমি তো বলেছি, আমার একটা জিনিসে বলায় ভুল হয়েছিল। প্রসেসিংটা চলছে। আমি বলতে চেয়েছিলাম, সাত দিনের মধ্যে প্রসেসিংটা হয়ে যাবে। ওটা আমার মুখ ফস্কে বেরিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই আপনারা দেখবেন, সিএএ হচ্ছে। আমি এখনও বলছি গ্য়ারান্টি দিয়ে, সিএএ হচ্ছে। এটা আমার গ্যারান্টি নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গ্যারান্টি।’ শান্তনুর এই ভোলবদলই এখন তৃণমূলের কাছে বড় অস্ত্র হয়ে গিয়েছে। তাঁরা এবার মতুয়াদের মধ্যে প্রচার শুরু করতে চলেছে যে, শান্তনু এবং বিজেপি উভয়ই মতুয়াদের আগাগোড়া প্রতারণাই করছে।
ইতিমধ্যেই শান্তনুর এই ডিগবাজি নিয়ে দলের তরফে মুখ খুলেছেন কুণাল ঘোষ। জানিয়েছেন, ‘ওটা স্লিপ অফ টাং নয়। মিথ্যা বলতে বলতে এ ভাবে এক দিন জিভটাই খসে পড়বে। ওর নাকি আত্মবিশ্বাস আছে। আসলে তাঁরই আত্মবিশ্বাস নেই। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, CAA’র প্রয়োজন নেই। CAA বাংলায় হবে না। যাদেরকে ওরা নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলছেন, তাঁরা ইতিমধ্যেই দেশের নাগরিক। তাঁরা রেশন পাচ্ছেন, ভোট দিচ্ছেন, সরকারি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন। সুখে আছেন, শান্তিতে আছেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন। প্রতি বার নির্বাচন এলেই যদি আপনি মনে করেন, CAA তুলে আলোড়ন তৈরি করবেন, অরাজকতা তৈরি করবেন, সেটা আর হবে না। বাংলার মানুষ এ সবে আর বিশ্বাস করবেন না।’
তবে শুধু এই দাবি করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না তৃণমূল। বরঞ্চ তাঁরা এবার মাঠে নামছে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে মতুয়া সমাজের বড় অংশের সমর্থন যাতে তৃণমূলের দিকেই থাকে সেটা নিশ্চিত করতে চাইছে জোড়াফুল শিবির। রাজ্যের মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ এবং নদিয়া জেলার রানাঘাট ও কল্যাণী মহকুমা মতুয়া অধ্যুষিত। এছাড়াপ উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ছড়িয়ে আছে মতুয়া ভোট। সেই মতুয়া সমাজের উন্নয়নের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কী কী করেছে তা এবার তুলে ধরে প্রচারে নামছে তৃণমূল। নাগরিকত্বের নাম করে বিজেপির বৈষম্যের রাজনীতির বিরুদ্ধে উন্নয়নই হবে মতুয়া অধ্যুষিত এলাকায় তৃণমূলের প্রচারের ঢাল। উনিশের লোকসভা এবং একুশের বিধানসভায় মতুয়া ভোট বিজেপি(BJP) দিকে থাকলেও গতবছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনে দেখা যায় মতুয়া ভোট তৃণমূলের দিকে ফের ফিরতে শুরু করেছে। এবার সেই সূত্রেই মতুয়া ভোটের সিংহভাগ নিজেদের ঘরে তুলে বিজেপিকে ধাক্কা দিতে চাইছে তৃণমূল।