নিজস্ব প্রতিনিধি: বঙ্গ সিপিএম(Bengal CPIM) এখন ঠিক কোন পথে হাঁটা দিয়েছে? গেরুয়া থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে নাকি তাকে কাছে টেনে নেবে? প্রশ্নটা আবারও উঠে গিয়েছে বঙ্গ রাজনীতিতে। নেপথ্যে দুটি ঘটনা। একদিকে সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র(Suryakanta Mishra) চোখ রাঙিয়ে বলছেন, ‘কেউ যদি মনে করেন, বিজেপিতে গিয়ে তৃণমূলকে ঠেকানো যাবে বা তৃণমূলে গিয়ে বিজেপিকে হঠানো যাবে, তাঁদেরকে বলছি লাল ঝান্ডার পার্টিতে তাঁর জায়গা নেই।’ অন্যদিকে সিপিএমের মুখপত্র ‘গণশক্তি’(Ganashakti) পত্রিকায় রেলের বিজ্ঞাপণ ছাপ্পা হচ্ছে যেখানে জ্বলজ্বল করছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) ছবি, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari), রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার এবং রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বিধায়ক পার্থ সারথী চট্টোপাধ্যায়ের নাম। আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কী বঙ্গ সিপিএম দুমুখো নীতি নিয়ে চলছে?
আরও পড়ুন বঙ্গে আবারও পাথর নিশানায় বন্দে ভারত এক্সপ্রেস
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তলে তলে সিপিএম-বিজেপি জোট হয়েছে, এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। বাম সমর্থকরা তৃণমূলের বিরোধিতা করতে গিয়ে নাকি কেন্দ্রবিশেষে বিজেপিতে ভোট দিয়েছেন। দু, একবার দেখা গিয়েছে, বিজেপির মিছিলে লাল কাস্তে-হাতুড়ি-তারা পতাকা। বামেদের ভোটে রামের দলে গিয়েছে, সেকথা সম্প্রতি প্রকাশ্যে আনেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর কথায়, নন্দীগ্রামে বামপন্থীদের ভোটেই তিনি জিতেছিলেন। দিন দুই আগে বাম-রামের এই ‘অশুভ আঁতাঁত’ নিয়ে কার্যত বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি করেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর মুখে বামেদের ভূয়সী প্রশংসাও শোনা যায়। দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘এদের (তৃণমূলের) থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল বামফ্রন্ট। এদের থেকে অনেক বড় সংগঠন ছিল সিপিএমের। ৩৪ বছর ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু সব বামপন্থী খারাপ নন। অনেক বামপন্থীই আমাদের সঙ্গে এসেছেন। নন্দীগ্রামে একটা বড় অংশ যাঁরা হিন্দু, তাঁরা ভোট দিয়েছেন বলে আমি জিতেছি। আমি তা অকপটে স্বীকার করি।’ শুভেন্দুর এহেন স্বীকারোক্তির পরে রাজ্য রাজনীতিতে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল তাহলে কী এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের বিরোধিতা করতে রাম-বামকে বাংলার বুকেই জোট গড়তে দেখা যাবে?
আরও পড়ুন ১০০ দিনের শূন্যস্থান পূরণ মমতার ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্পে
সেই প্রশ্নের উত্তরেই হয়তো সূর্যকান্তবাবু কিছুটা কড়া বার্তা দিয়েছিলেন। রবিবার শুভেন্দুর নিজ জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘায় দাঁড়িয়েই কার্যত তিনি বার্তা দেন, ‘তৃণমূল দলে সবাই চোর নয়, সবাই খারাপ নয়, ভাল মানুষ আছেন। আবার একইভাবে সব বিজেপি দাঙ্গাবাজ নয়, বিজেপি করেন এমন ভাল লোকজনও আছেন। কেউ বিজেপিকে হারাবার জন্য তৃণমূলে গিয়েছেন, কেউ তৃণমূলকে হারানোর জন্য বিজেপিতে গিয়েছেন। কিছু লোকজন আছেন সরকারের থেকে কিছু সুযোগসুবিধা নেবেন, তাই দলবদল করেছেন। কেউ যদি মনে করেন, বিজেপিতে গিয়ে তৃণমূলকে ঠেকানো যাবে। আবার উলটোদিক থেকেও কেউ যদি মনে করেন, তৃণমূলে গিয়ে বিজেপিকে হঠানো যাবে, এরকম কেউ থাকলে লাল ঝান্ডার পার্টিতে তাঁর জায়গা নেই। জায়গা থাকবে না। এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে সব জায়গায়।’
আরও পড়ুন হোমগার্ড নিয়োগে শুভেন্দু’র ‘সম্ভবত’ তত্ত্ব, ‘মানসিক রোগী’ বলে কটাক্ষ কুণালের
কিন্তু সূর্যকান্তবাবুর এই কড়া বার্তার পরে দেখা যাচ্ছে ঠিক তার উল্টো ছবি ‘গণশক্তি’র পাতায়। সোমবার ‘গণশক্তি’তে ৩ নম্বর পাতায় ভারতীয় রেলের একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে রানাঘাট-বনগাঁ নতুন ইএমএউ ট্রেনের যাত্রার সূচনার কথা প্রচার করা হয়েছে। ওই বিজ্ঞাপনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবির সঙ্গে রয়েছে তাঁর বার্তা। বার্তাটি হচ্ছে, ‘ভারত কীভাবে বদলে যাচ্ছে, কীভাবে সফল হচ্ছে স্বপ্ন, তারই এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত ভারতীয় রেল’। শুধু তাই নয়, বিজ্ঞাপনে নাম রয়েছে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। নাম রয়েছে রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার এবং রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বিধায়ক পার্থ সারথী চট্টোপাধ্যায়ের। ফলে, রেলের বিজ্ঞাপনে রাজনীতির রং দেখছেন অনেকে। বিশ্লেষকদের একাংশ আবার মনে করছেন, বিজ্ঞাপনের অছিলায় টাকার বিনিময়ে বাম কর্মীদের মধ্যে নিজেদের ভাবধারা প্রচার করছে গেরুয়া শিবির। আর সব জেনেও চুপ আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। আর এদেকেই তৃণমূলের দাবি, আসলে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে মরিয়া বাম-বিজেপি একে অপরের হাত ধরছে বাংলার নানা জায়গায়। কিন্তু সেটা লুকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টাও চলছে। যদিও সব ‘সমঝোতা’ আর লুকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। বাংলার মানুষ সব কিছু দেখতে পাচ্ছেন বুঝতেও পারছেন। সিপিমের এহেন দুমুখো নীতি প্রক্ক্রিত বামপন্থীরা সবার আগে প্রত্যাখান করবেন।