এই মুহূর্তে

WEB Ad Valentine 3

WEB Ad_Valentine

শীতের ভ্রমণ: টেরাকোটার সন্ধানে মন্দিরনগরী বিষ্ণুপুরে

নিজস্ব প্রতিনিধি: শীত এসে গিয়েছে বাঙালির দোরগোড়ায়। আর শীতের রোদ গায়ে মেখে অনেকেই প্ল্যান করছেন কাছেপিঠে কোথাও ঘুরে আসবেন। এই করোনা ভাইরাস, লকডাউনের আতঙ্ক কাটিয়ে এখন অনেকেই টিকার একটি বা দুটি ডোজ নিয়ে নিয়েছেন। ফলে সরকারি বিধিনিষেধও কমেছে অনেক। সবমিলিয়ে এটাই ব্যাগ গুছিয়ে বেড়িয়ে পড়ার সেরা সময়। তবে করোনা এথনও নির্মূল হয়নি। তাই বেশি দূরে বা ভিড়ভাট্টার মধ্যে না যাওয়াই ভালো। আজ আপনাদের বলবো এই বাংলার ঐতিহ্যের একটি প্রাচীন শহর এবং অপরূপ এক লেকের গল্প। আপনারাও জেনে বুঝে নিয়ে শীতের রোদ গায়ে মেখে বেড়িয়ে পড়ুন বাঁকুড়ার উদ্দেশ্যে।

লাল মাটির কাঁকুরে পথ, চারিদিকে গাছগাছালি আর দূরে ছোট পাহাড়। এই নিয়েই বাঁকুড়া। পর্যটকদের জন্য বাঁকুড়ায় অনেক জায়গা আছে। কিন্তু যে নামটা সবার আগে আসে সেটা হল বাংলার মন্দির নগরী বা টেরাকোটার সাম্রাজ্য বিষ্ণুপুরের নাম। বাঁকুড়া গেলে বিষ্ণুপুর, জয়রামবাটী আর মুকুটমণিপুর অবশ্যই ঘুরে আসবেন। পৃথিবী বিখ্যাত লাল পোড়ামাটির সৃষ্টি টেরাকোটার অপরূপ বাহার এই বিষ্ণুপুরেই দেখতে পাবেন। যা আপনার চোখ জুড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। পোড়ামাটির ভাস্কর্যে সজ্জিত বিষ্ণুপুরের মন্দিরগুলি তৈরি হয়েছে মূলত তিনটি আঙ্গিকে। তা হল দেউল, চালা ও রত্ন শৈলী। বিষ্ণুপুরের মন্দিরের গায়ে দেখবেন রামায়ণ, কৃষ্ণলীলার বিভিন্ন আখ্যান, ফুল, ফল, লতাপাতা, পশুপাখি শিকারের মোটিভ। সবটাই পোড়ামাটির তৈরি।

বিষ্ণুপুরের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ ও প্রাচীন। মল্ল রাজাদের আমলেই বিষ্ণুপুর শিল্প ও সংস্কৃতির শিখরে উঠেছিল। রাজা আদি মল্ল এই মল্ল রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর দশম মল্ল রাজা জগত মল্ল তাঁর রাজ্য বিষ্ণুপুরে স্থানান্তরিত করেছিলেন। সেসময় থেকেই বিষ্ণুপুরের মন্দিরগুলি তৈরি হতে শুরু হতে শুরু করে। ঐতিহাসিকদের মতে, বাংলায় পাথরের অভাবের কারণেই তিনি বিকল্প কিছুর সন্ধান করছিলেন। আর পোড়ামাটির বিষয়টি আবিস্কার করেন। যা ‘টেরাকোটা’ নামে পরিচিত। এখানকার বিভিন্ন মন্দির আপনাকে ফিসফিসিয়ে ইতিহাসের গল্প শোনাবে। তাই বিষ্ণুপুরে ঘুরতে হলে একজন প্রশিক্ষিত গাইড অবশ্যই নেবেন। চার্জ পড়বে ৩৫০-৪০০ টাকা।

রাসমঞ্চ

বিষ্ণুুপুর ভ্রমণ শুরু হয় এই রাসমঞ্চ থেকেই। এখানেই সমস্ত দর্শণীয় স্থানের টিকিট এবং প্রতিক্ষিত গাইড পেয়ে যাবেন। প্রাচীনতম এই মন্দিরটি রাজা হাম্বির ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রাসমঞ্চে বাংলার সনাতন মন্দির স্থাপত্যের সঙ্গে মিশে গিয়েছে মিশরীয় পিরামিড ও ইসলামী স্থাপত্যশৈলী। ফলে গোটা ভারতেই এই ধরণের দ্বিতীয় স্থাপত্য পাওয়া যায় না। রাসমঞ্চটি একটি প্রশস্ত ভিত্তিবেদীর উপর প্রতিষ্ঠিত। বেদীটি নির্মিত হয়েছে ঝামাপাথর বা ল্যাটেরাইট পাথরে। তাকে চারপাশে ঘিরে আছে তিন প্রস্থ খিলানযুক্ত দেওয়াল। মূল বেদীটি বর্গাকার এবং এর উচ্চতা ১.৬ মিটার, প্রস্থ ২৪.৬ মিটার। পুরো মন্দিরটির উচ্চতা ১০.৭ মিটার। মাথাটি একটি স্বল্পপরিসর ছাদের আকারবিশিষ্ট। চূড়াটি মিশরের পিরামিডের আকার-বিশিষ্ট। চূড়ার পাদদেশে চারটি করে দোচালা ও প্রত্যেক কোণে একটি করে চারচালা নির্মিত হয়েছে। এখানে একটি পোড়ামাটির পদ্ম মোটিফ সহ রহস্যময় খিলান আপনাকে রোমাঞ্চিচত করবেই।

জোড়বাংলা মন্দির

মন্দিরটি মল্ল রাজা রঘুনাথ সিংহ ১৬৫৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি পশ্চিমবঙ্গের পোড়ামাটির শিল্পের অন্যতম ব্যতিক্রমী উদাহরণ হিসেবে ধরা হয়। মন্দিরটির দোচালা আকারের জন্য একে জোড়াবাংলা মন্দির বলা হয়। দেখতে দুটি মন্দির মনে হলেও এটি আসলে একটিই মন্দির। পোড়ামাটির ভাষ্কর্যে মহাভারত, রামায়ণ, কৃষ্ণের বাল্যকালের একাধিক দৃশ্য চিত্রিত আছে মন্দিরগাত্রে।

মৃন্ময়ী মন্দির

বিষ্ণুপুরের প্রাচীনতম মন্দির হল এই মৃন্ময়ী মন্দির। রাজা জগৎ মল্ল ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কথিত আছে, মা মৃন্ময়ী রাজাকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে এই মন্দির নির্মানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। দেবী দুর্গা এখানে মা মৃন্ময়ী হিসাবে পূজিত হন। যা বাংলার প্রাচীনতম দুর্গাপুজো।

শ্যাম রায় মন্দির

শ্যাম রায় মন্দিরটি পাঁচ-চুড়া মন্দির নামে পরিচিত। যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মন্দিরটি ১৬৪৩ সালে রাজা রঘুনাথ সিংহ দ্বারা। মন্দিরটি চারপাশে তিন তোরণযুক্ত পথ বেশ সুন্দর। মন্দিরটির ভিতরে এবং বাইরে পোড়ামাটির শিল্প-রূপগুলির জন্য এটি বিষ্ণুপুরের অন্যতম আকর্ষণীয় দর্শণীয় স্থাপত্য। এই মন্দিরে পোড়ামাটির শিল্পকর্ম বা টেরাকোটার কাজ অত্যন্ত দর্শণীয়। ‘ঐরাবতের উপর বসে ইন্দ্রের যুদ্ধ’, ‘রাম ও রাবনের কাহিনী’, ‘কৃষ্ণ লীলার দৃশ্য’, ‘রাধা-কৃষ্ণের প্রেম’, ‘পুরানো সমাজের শিকারের পরিস্থিতি’ ইত্যাদি ধর্মীয় গল্পের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে পোড়ামাটির স্থাপত্যগুলি।

মদনমোহন মন্দির

আপনি যখন বিষ্ণুপুরে যাবেন, তখন এই ‘বিষ্ণু’ মন্দিরটি অবশ্যই দেখবেন। মল্ল রাজা দুর্জন ​​সিংহ দেব ১৬৯৪ সালে ভগবান মদন মোহনের এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। কাঠামোগতভাবে এই মন্দিরের গঠনশৈলী এবং পোড়ামাটির শিল্পকর্ম অত্যন্ত উন্নতমানের।

গর দারজা

বিষ্ণুপুরে দুর্গের দু’টি দুর্দান্ত প্রবেশদ্বার রয়েছে। স্থানীয় লোকেরা তাদেরকে ‘গড় দরজা’ বলে সম্বোধন করেন। বিষ্ণুপুর দুর্গকে সুরক্ষিত রাখতেই এই দরজা নির্মান করা হয়েছিল। এখানে একটি বিশাল ছাদ এবং গোপন কক্ষ রয়েছে।

জোড় শ্রেনী মন্দির

এটি আসলে তিনটি ‘এক-রত্ন’ মন্দিরের সম্মিলিত অংশ। একই আকারের দুটি বড় মন্দির এবং একটি ছোট মন্দির মিলে মূল মন্দিরটি। এই মন্দিরগুলি মল্ল রাজা কৃষ্ণ সিংহ তৈরি করেছিলেন ১৭২৬ সালে। তিনটি মন্দিরের ছাদগুলি সাধারণ বাংলায় ‘চালা’-র মত টাওয়ার আকৃতির।

প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর

প্রাচীন ইতিহাস যদি ভালোবাসেন তবে এই যাদুঘর অবশ্যই দেখবেন। এখানে আপনি দশম-দ্বাদশ শতাব্দী থেকে প্রায় ১০০ টি ভাস্কর্য দেখতে পাবেন, প্রায় ৫০০০ পাণ্ডুলিপি, বিভিন্ন ধরণের লোককলা, ফটোগ্রাফ, টেক্সটাইলগুলির অপূরণীয় নমুনাগুলি এবং আরও অনেক প্রাচীন জিনিস।

এছাড়া বিষ্ণুপুরে অসংখ্য মন্দির রয়েছে। যেমন ষাঁড়েশ্বর এবং শৈলেশ্বর মন্দির। যেগুলি বিষ্ণুপুর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে দিহড় গ্রামে অবস্থিত। পাশাপাশি ঘুরে আসুন পাঁচমুড়া গ্রামে। এটি মূলত পোড়ামাটির শিল্পকর্মের আতুরঘর। হাতেকলমে দেখতে পাবেন কিভাবে তৈরি হচ্ছে টেরাকোটার শিল্পকর্ম। চাইলে কিনতেও পারেন ঘর সাজানোর জিনিসপত্র। অপরদিকে বাঁকুড়া জেলার বিকনা গ্রাম ডোকরা শিল্পের জন্য বিখ্য়াত। বিভিন্ন ধরণের অলংকার এবং উজ্জ্বল বাড়ির সাজানোর জিনিসপত্র ধাতব ঢালাইয়ের পদ্ধতিতে তৈরি হয়। যা ডোকরা শিল্প নামেই বিশ্ববন্দিত। বিষ্ণুপুর বালুচরি শাড়ির জন্য বিখ্যাত। বিশ্বখ্যাত বালুচরি শাড়িও বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্য। এর নকশাগুলি, মন্দিরগুলির পোড়ামাটির টালি দ্বারা অনুপ্রাণিত। পাশাপাশি বাঁকুড়ার লন্ঠনশিল্পও বিষ্ণুপুরে খুব জনপ্রিয়।

কিভাবে যাবেন কোথায় থাকবেন

কলকাতা থেকে বাঁকুড়ার রেলপথে দূরত্ব ২৩৩ কিলোমিটার। হাওড়া থেকে রূপসীবাংলা এক্সপ্রেস (১২৮৮৩), আরণ্যক এক্সপ্রেস (১২৮৮৫), কবিগুরু এক্সপ্রেস (১২৯৫০), সমরসতা এক্সপ্রেস (১২১৫২) ইত্যাদি ট্রেন পাবেন। সময় লাগবে কমবেশি সাড়ে তিনঘণ্টা। সড়কপথেও কলকাতা থেকে বাঁকুড়ার দূরত্ব প্রায় ২১২ কিলোমিটার। ধর্মতলা থেকে রাজ্য পরিবহণ নিগমের এসি ও নন এসি বাস যায় বাঁকুড়ায়।

বিষ্ণুপুরে এসে থাকতে হলে এখানে ছোট থেকে মাঝারি বিভিন্ন ধরনের হোটেল রয়েছে। ভাড়া ৪০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে। এছাড়া পাবেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ট্যুরিজম বিভাগের লজ। এই যা কলকাতা থেকেও অনলাইনে বুক করতে পারবেন। ক্লিক করুন  https://www.wbtdcl.com লিঙ্কে।

 

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

৭৬ বছর ধরে বিনা টিকিটে ভ্রমণ!জেনে নিন কোথায় চলে এই ট্রেন

রক্তাল্পতায় ভুগছেন ? জানেন কী ফলেই লুকিয়ে সমাধান?

ভ্যাপসা গরমে সুস্থ রাখবে এই খাবার ! জেনে নিন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

ঘন ঘন বুক জ্বালা অম্বল ! ভুলেও এই ৫ টি খাবার ছোঁবেন না

গরম থেকে নিস্তার পেতে এই আনাজের ওপরেই রাখুন ভরসা!

ঘুরেও তাকানো বারণ, রাজস্থানের রহস্যময় মন্দিরের কাহিনী শুনলে চমকে উঠবেন

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর