নিজস্ব প্রতিনিধি: ‘সাথে করে এনেছিলে মৃত্যুহীন প্রাণ, মরণেই তাহা তুমি করে গেলে দান’। বিধান চন্দ্র রায়। বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, ধন্বন্তরী চিকিৎসক, শিরদাঁড়া উঁচু করা রাজনীতিবিদ। বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান। যাকে নিয়ে অনেক গল্পগাঁথা রচিত রয়েছে। ছোটবেলা দারিদ্র্যতার নির্মম কষাঘাতে জর্জরিত মানুষটি জীবনে বহু অর্থ রোজগার করেছিলেন। কিন্তু শেষ জীবনে তাঁর ঘর থেকে কুড়িয়ে পাওয়া গিয়েছিল যে সম্পত্তি, তা শুনলে অনেকের কাছেই গল্প মনে হবে।
তাহলে খুলেই বলা যাক বিধান রায়ের সেই লড়াইয়ের গল্প। উচ্চশিক্ষার জন্য পটনার বাঁকিপুর থেকে যখন কলকাতায় পা রেখেছিলেন বিধানবাবু তখন তাঁর পকেটে ছিল মাত্র পাঁচ টাকা পঢ়চিশ পয়সা। তখনকার পাঁচ টাকা পঁচিশ পয়সার মূল্য আজ অবশ্য অনেকটাই। সেই পাঁচ টাকা পঁচিশ পয়সা পকেটে নিয়ে এসে কলকাতায় পা রেখে শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির জন্য ফর্ম ফিলাপ করলেন। মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ মিলল মেধাবী ভজনের থুড়ি বিধান রায়ের। থাকতেন ওয়াইএমসিএ হস্টেলে।
কিন্তু হাতে টাকা পয়সার ভীষণ টানাটানি। প্রিয় ছাত্রের দুর্দশা থেকে মেডিকেল কলেজের স্বনামধন্য চিকিৎসকরা অর্থ আয়ের জন্য বিধানবাবুকে ধনবান রোগীদের বাড়িতে মেল নার্স হিসেবে পাঠাতেন। বারো ঘন্টার হাড় ভাঙ্গা খাঁটুনির বিনিময়ে পারিশ্রমিক পেতেন আট টাকা। ওই টাকা দিয়েই নিজের খরচ চালাতেন। পরে অবশ্য চিকিৎসক হিসেবে প্রচুর অর্থ রোজগার করেছিলেন। দেশ স্বাধীনের পরে ১৯৪৮ সালে যখন মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তখন বিধান রায়ের মাসিক আয় ছিল ৪২,০০০ হাজার টাকা। আজকের হিসেবে তার মূল্যায়ন করলে অনেকেই ভিমরি খাবেন। কিন্তু কখনই সঞ্চয়ী মানুষ ছিলেন না। যা আয় করতেন তাই গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দিলেন। লক্ষ-লক্ষ টাকা উপার্জন করা মানুষটি যখন চির ঘুমে পাড়ি দিলেন তখন তাঁর ঘর থেকে মিলেছিল মাত্র ১১ টাকা ২৫ পয়সা। অর্থাৎ সারা জীবনে মাত্র ছয় টাকা সঞ্চয় করতে পেরেছিলেন। আজকের রাজনীতিবিদরা যা শুনলে অবশ্যই লজ্জা পাবেন।