17ºc, Mist
Thursday, 2nd February, 2023 4:42 am
নিজস্ব প্রতিনিধি: জীবিতকালে কোনও স্বীকৃতি পাননি। কিন্তু মৃত্যুর পরে জুটল স্বীকৃতি। কলেরা ও ডায়েরিয়া রোগ থেকে বাঁচাতে অব্যর্থ দাওয়াই ওআরএসের স্রষ্টা প্রয়াত চিকিৎসক তথা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ দিলীপ মহলানবিশকে চলতি বছর মরণোত্তর পদ্মবিভুষণ পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় সরকার। বুধবার রাতে সমাজে বিশিষ্ট অবদানের জন্য যে ২৬ জনকে পদ্ম পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে সেই তালিকায় রয়েছে বঙ্গ সন্তানেরও নাম।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বনগাঁ সীমান্ত থেকে এপারে আসা লক্ষ লক্ষ মানুষের চিকিৎসার জন্য ছুটে গিয়েছিলেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ দিলীপ মহলানবিশ। কলেরা ও ডায়েরিয়া আক্রান্ত মানুষগুলিকে বাঁচাতে যখন চিকিৎসকরা হিমশিম খাচ্ছেন, স্যালাইনের সূঁচ ফোঁটাতে-ফোঁটাতে ক্লান্ত চিকিৎসক কর্মীরা, তখনই দিলীপ মহালনবিশের উপস্থিত বুদ্ধিতে নুন-চিনি-বেকিং সোডার জলের তৈরি বিশেষ স্যালাইন খাওয়ানো হয়। বেঁচে যায় হাজার-হাজার মানুষের জীবন। ওআরএস ব্যবহারের ফলে দুই সপ্তাহের মধ্যে তাঁর তত্ত্বাবধানে থাকা শিবিরগুলিতে মৃত্যুর হার ৩০ শতাংশ থেকে ৩.৬ শতাংশে নেমে এসেছিল। কীভাবে ওআরএস তৈরি করা হয় তা প্রচার করা হয়েছিল স্বাধিন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। ওপার বাংলাতেও বহু মানুষ কলেরা ও ডায়েরিয়া থেকে বাঁচতে দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি করেছিলেন বিশেষ স্যালাইন। অথচ তখনও ওআরএসের প্রয়োগে স্বীকৃতিই দেয়নি বিশ্ব চিকিৎসার নিয়ামক সংস্থা। ঝুঁকি নিয়েই কাজ করেছিলেন চিকিৎসক। পরে দিলীপ মহলানবিশের তৈরি ওআরএসকে স্বীকৃতি দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
আজ বহু দেশেই মানুষের শরীরে জলের পরিমাণ কমে গেলে নুন-চিনির ঘাটতি পূরণে ব্যবহার করা হয় বঙ্গ সন্তানের তৈরি করা ওআরএস। যদিও জীবিতকালে খুব একটা স্বীকৃতি পাননি। গত বছরের ১৬ অক্টোবর ৮৮ বছর বয়সে কলকাতার এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে পাড়ি দেন দিলীপ মহলানবিশ। নীরবেই চলে যান তিনি। মৃত্যুর পরে পেলেন যোগ্য স্বীকৃতি। হায়রে ভারতবর্ষ!