নিজস্ব প্রতিনিধিঃ কথায় আছে, ‘যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে’। বহু প্রাচীন এবং বহুল প্রচলিত এই প্রবাদ বাক্যটি যে কোনও শতাব্দীর এবং সমাজের যে কোনও স্তরের নারীদের জন্য যে ঠিক কতটা যথাযথ সেটা এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে যদি মনে করে থাকেন যে, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আজকের নারীরাই কেবলমাত্র আধুনিক হয়েছেন, সংসারের পাশাপাশি সমাজের এক একটি গুরুদায়িত্ব নির্দ্বিধায় তুলে নিয়েছেন নিজেদের কাঁধে তাহলে কিন্তু খুব ভুল করবেন। নারী বরাবরই প্রগতিশীল। কারণ নারী সমাজ, সভ্যতাকে আলোর দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম রাস্তা। বিশ্ব ইতিহাসের যে কোনও স্মরণীয় ঘটনাতেই নারীদের অবদান যোগ করেছে আলাদা মাত্রা। পুরুষের স্মঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিপ্লব এনেছেন তাঁরা। কিন্তু আজও বহুক্ষেত্রে নারীদের এই অবদান অগ্রহণযোগ্য, আজও নারীদের বহুক্ষেত্রেই বাইরের জগত থকে আলাদা রেখে কি অবলীলায় তাঁদের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হয় সংসারের দায়িত্ব। আর তাই সমাজের সর্বস্তরে লিঙ্গ বৈষম্য ঘুচিয়ে নারীদের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে এই লড়াই শুরু হয় আজ থেকে প্রায় ১০৪ বছর আগে উনবিংশ শতাব্দীতে। ১৯১৭ সাল থেকে ৮ মার্চের এই বিশেষ দিনটি নারী দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। উৎপত্তিস্থল রাশিয়া। তবে তারও প্রায় ৮ বছর আগে থেকে আমেরিকায় কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছে নারী দিবস উদযাপন।
এবার একটু জেনে নেওয়া যাক এই নারী দিবসের ইতিহাস। সালটা ১৯০৯, সেই সময়ে যখন শ্রমিক আন্দোলনে উত্তাল সমগ্র উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপ নারী দিবস উদযাপনের চিন্তাভাবনা শুরু হয় ঠিক সেই সময় থেকেই। আমেরিকার সোশ্যালিস্ট পার্টির আহ্বানে আমেরিকা এবং ইউরোপের কলকারখানার মহিলা কর্মচারীরাও পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যখন উনিশ শতকের ওই শ্রমিক আন্দোলনে যোগদান করেছিল তখন তাঁদের সম্মান জানাতেই ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্বে প্রথম পালিত হল জাতীয় নারী দিবস। এরপর তার ঠিক ৮ বছর বাদে ১৯১৭ সালে রাশিয়ান মহিলারা, নারী দিবসে ‘রুটি ও শান্তি’র দাবিতে ধর্মঘট করার সিদ্ধান্ত নেন। ইউরোপের নারীরাও ওই ৮ মার্চের শান্তি বিষয়ক কার্যক্রমকে সমর্থন করে মিছিল করেন। সেই থেকেই পথচলা শুরু আন্তর্জাতিক নারী দিবসের। তার বহু বছর বাদে এই নারী দিবস ১৯৭৫ সালে পায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, যখন জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালের ৮ মার্চ দিনটিকেই আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
বর্তমানে সমগ্র বিশ্বজুড়ে আজকের এই দিনেই পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই দিনটি পালন করার মূল উদ্দেশ্য হল শিল্প এবং সাহিত্যসহ সমাজের সর্বস্তরে নারীদের অবাধ বিচরণকে সম্মান জানানো এবং স্বীকৃতি দেওয়া। সেই সঙ্গে লিঙ্গবৈষম্যের বিরোধ। নারীদের কাজের অধিকার, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং কাজের বৈষম্যের অবসান করতেই এই দিনটি পালিত হয়। প্রতি বছরই এই দিনের একটি বিশেষ থিম থাকে। এবারের থিম হল ‘Gender equality today for a sustainable tomorrow’। অর্থাৎ আগামীকে আরও সুন্দর করতে লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠা।