এই মুহূর্তে




জানুন জগন্নাথ-বলরাম ও সুভদ্রার বড় বড় চোখের রহস্য




পৃথ্বীজিৎ চট্টোপাধ্যায়: বৃহৎ শ্বেতপদ্মের মত গোলাকার চক্ষুদ্বয়, মুখে মধুর হাসি, দু-বাহু বর্ধিত করে আলিঙ্গনের ভঙ্গিতে তিনি রয়েছেন। তিনিই শঙ্খ চক্র ধারী লীলাপুরুষোত্তম মহাপ্রভু শ্রী জগন্নাথ। তিনি দয়া ও ভক্তির সাগর। তাঁর সাথে রয়েছেন ঘোর নয়না শ্বেতাঙ্গ বলভদ্র ও পীতবর্ণা ভুবনেশ্বরী স্বরূপা দেবী সুভদ্রা। তবে সকল স্থানেই তাঁদের তিনজনের এমন গোল গোল বড় বড় চোখে দেখা যায়।  কিন্তু, কেন ? সত্যিই কী শ্রীকৃষ্ণ, বলরাম ও সুভদ্রার চোখ বড় বড় হয়ে গিয়েছিল ?

পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, একবার দ্বারকায় জগৎপালক শ্রীকৃষ্ণ নিজ গৃহে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। ঘুমের ঘোরে হঠাৎ তিনি বারবার “শ্রী রাধিকা, শ্রী রাধিকা…” বলে ডাকতে শুরু করেন। শ্রীকৃষ্ণের এই অস্বাভাবিক আচরণ দেখে তাঁর অষ্টমহিষী – রুক্মিণী, সত্যভামা, জাম্ববতী, মিত্রবৃন্দা, নগ্নজিতী, যমুনা, লক্ষ্ণণা ও ভদ্রা গভীর দুশ্চিন্তায় পড়েন। তাঁরা অবাক হয়ে ভাবতে লাগলেন, কে এই রাধিকা? কেন কৃষ্ণ স্বপ্নে তাঁর নাম নিচ্ছেন? কৃষ্ণের এই অষ্টমহিষীর কেউই আসলে রাধার কথা জানতেন না, শোনেনওনি কখনও।

কৌতূহল মেটাতে তাঁরা ছুটে গেলেন শ্রীকৃষ্ণের মা রোহিণীর কাছে। অষ্টমহিষীরা অনুরোধ জানালেন, রাধিকা কে, কেন কৃষ্ণ তাঁর নাম বারবার নিচ্ছেন – এই রহস্য তাঁদের জানাতেই হবে। কিন্তু রাধাকৃষ্ণের প্রেমমাধুর্য, তাঁদের অন্তর্লীলার কথা অতি গোপন ও গভীর তত্ত্ব; এ কথা সাধারণের জানার বিষয় নয়। তবু অষ্টমহিষীর আকুলতা দেখে মা রোহিণী সম্মত হলেন তাঁদের রাধাকৃষ্ণের প্রেমকথা শোনাতে।

এদিকে মা রোহিণী বুঝতে পারলেন, এই গোপন লীলা বর্ণনার সময় কেউ যেন হঠাৎ এসে না পড়ে। তাই তিনি কৃষ্ণের ছোট বোন সুভদ্রাকে দরজায় পাহারায় বসালেন। শর্ত দিলেন, কেউ যেন কক্ষে প্রবেশ করতে না পারে। মা রোহিণী তখন শুরু করলেন রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা বর্ণনা। দরজার বাইরে দাঁড়িয়েই কথাগুলি শুনতে লাগলেন সুভদ্রা। এমন সময় সেখানে চলে আসেন কৃষ্ণ ও বলরাম। দু’জনেই জানার আগ্রহে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সুভদ্রার সাথে শুনতে লাগলেন মায়ের মুখে শ্রী রাধাকৃষ্ণের অপার প্রেমের কাহিনি।

এই প্রেমগাথার গভীরতা, রহস্যময়তা ও মহিমা শুনতে শুনতে তিন ভাই-বোনই এক অদ্ভুত অনুভূতিতে নিমগ্ন হয়ে পড়েন। তাঁদের দেহের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কুঁকড়ে যায়, হাত-পা সংকুচিত হয়ে যায় আর চোখ বড় বড় হয়ে চকচক করতে থাকে। এই অবস্থাতেই তাঁরা স্থির হয়ে যান – যার নাম ‘চকাডোলা’ রূপ। পুরীর শ্রীমন্দিরে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার দারু মূর্তির বিশেষ বৈশিষ্ট্য এই রূপ থেকেই উদ্ভূত।

শ্রী মন্দিরে তাঁদের দর্শন করলে বোঝা যায়, জগন্নাথ ও বলরামের হাত থাকলেও সুভদ্রার হাতে কোনও স্পষ্টতা নেই। কারণ, সমুদ্রের প্রবল গর্জন ও জগন্নাথের প্রেমলীলা শুনে বিস্মিত ও ভীত হয়ে সুভদ্রার দুই হাত লোপ পেয়েছে বা সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল – এমন কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। মূর্তিতে মহাপ্রভু জগন্নাথের ডান হাত আর বলরামের বাঁ হাত একসাথে দেখা গেলে অনেকেই ভাবেন, হয়তো সুভদ্রার হাতও ওখানেই রয়েছে। আসলে তা নয়, বরং সুভদ্রার দুই হাত নেই বলেই তাঁর মূর্তি সম্পূর্ণ ভিন্ন আকৃতির।

পুরীর নীলাচলে অবস্থিত এই দারুময় মূর্তিত্রয় – শ্রীজগন্নাথ, শ্রীবলরাম ও দেবী সুভদ্রার রূপ স্বয়ং পরমেশ্বরের অর্চনীয় রূপ। শাস্ত্রে বলা হয়েছে, তাঁদের দর্শন করলে যাগযজ্ঞ, তীর্থস্নান, দান-ধ্যান, তপস্যা – কোনও কিছুরই আর প্রয়োজন থাকে না। তাঁদের দর্শন করলেই জীবের সমস্ত পাপ ক্ষয় হয়ে মোক্ষলাভ নিশ্চিত হয়। তাই মুক্তি পেতে হলে, মানুষের জীবনের পরম পরিণতি পেতে হলে একবার হলেও পুরুষোত্তম জগন্নাথধামে এসে এই ত্রিমূর্তি দর্শন করতেই হবে – এই বিশ্বাস জগন্নাথভক্তদের মধ্যে যুগে যুগে অটল।

এই কিংবদন্তি রাধাকৃষ্ণের প্রেমের মহিমা ও শ্রীজগন্নাথের অদ্ভুত রূপরহস্যকে এক মহৎ আধ্যাত্মিক বার্তা বহন করে – প্রেমই পরম সত্য, এবং সেই প্রেমের বোধেই নিহিত মুক্তির দ্বার। জয় জগন্নাথ।

 

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

পরিচয় ভাঁড়িয়ে ‘আব্দুল’ হয়ে গেলেন ‘নেহা’, ১০ বছর ঘাঁপটি মেরে বসবাসের পর গ্রেফতার বাংলাদেশি যুবক

ট্রাম্পের সঙ্গে বিবাদ, ফোন নম্বর বদলে ফেললেন মাস্ক

গুগলে ৫৪ লক্ষের বেতনে যোগ দিলেন জলপাইগুড়ির শ্রেয়া, গল্প শুনলে চোখে জল আসবে

লুকানো হৃদরোগ শনাক্তে কার্ডিওলজিস্টদের চেয়েও নির্ভুল এই নতুন AI টুল

জানেন কী, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে একমাত্র এই কৌরব যুদ্ধ করেছিলেন পাণ্ডবদের হয়ে?

জানেন, কেন লক্ষ্মীদেবী সবসময় ভগবান নারায়ণের পায়ের কাছে বসেন?

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ