নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: এক যুগের অবসান। এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের আকস্মিক পতন। স্বাধীনতা দিবসেই না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন ‘সুলভ শৌচালয়ের’ প্রতিষ্ঠাতা তথা বিশিষ্ট সমাজকর্মী বিন্ধেশ্বর পাঠক। মঙ্গলবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে পতাকা উত্তোলন করার সময়েই আচমকাই অসুস্থবোধ করেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করা হয় দিল্লির এইমসে। চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টা ব্যর্থ করে চির ঘুমের দেশে ঢলে পড়েন অশীতিপর সমাজকর্মী।
১৯৪৩ সালের ২ এপ্রিল বিহারের হাজিপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিন্ধেশ্বর পাঠক। বেণারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও পটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রজীবন থেকে সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখতেন বিন্ধেশ্বর পাঠক। ১৯৬৮ সালে বিহার সরকারের পক্ষ থেকে গান্ধি জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে এক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটির সদস্য হিসেবে মেথরদের জীবনের অসহনীয় যন্ত্রণা সম্পর্কে সম্যক অবহিত হন। প্রকাশ্যে শৌচকর্ম বন্ধে অর্থাৎ প্রকাশ্যস্থানে মল-মূত্র ত্যাগ বন্ধের উদ্দেশে ১৯৭০ সালে গড়ে তোলেন সুলভ আন্তর্জাতিক সমাজসেবা সংস্থা। আর ওই সংস্থার উদ্যোগেই ১৯৭৩ সালে বিহারের আরা পুরসভায় প্রথম তৈরি হয়েছিল সুলভ শৌচালয়। ওই শৌচালয় গড়তে বিন্ধেশ্বর পাঠককে মাত্র ৫০০ টাকা বরাদ্দ করেছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ।
বিহারের আরা পুরসভার সুলভ শৌচালয়ের কথা ক্রমেই ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা দেশে। গত পাঁচ দশকে দেশের প্রতিটি কোণে গড়ে উঠেছে সুলভ শৌচালয়। প্রায় ১৫ লক্ষ সুলভ শৌচালয় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে দেশজুড়ে। খোলা জায়গায় শৌচকর্ম বন্ধে তাঁর উদ্যোগ গোটা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছিল। রেলের স্বচ্ছ মিশন অভিযানেরও অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন বিন্ধেশ্বর পাঠক। সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৩ সালে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে পদ্মবিভূষণ সম্মান দেওয়া হয়।