নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: কবি শ্রীজাত লিখেছিলেন, ‘মানুষ থেকেই মানুষ আসে। বিরুদ্ধতার ভিড় বাড়ায়. আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ। তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।’ অবসরের পরে কিছু পাওয়ার লোভে গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তিরা কেন্দ্রের শাসকদলের লেজুড়বৃত্তিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। অথচ সেই ধান্ধাবাজির যুগেও নিজেদের শিরদাঁড়া সোজা রাখলেন দেশের তিন হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি। মোদি সরকারের ‘এক দেশ, এক ভোট’ এর সরাসরি বিরোধিতা করেছেন। ওই তিন প্রাক্তন বিচারপতি হলেন সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়, গিরিশ চন্দ্র গুপ্ত ও এ পি শাহ। তিনজনেই স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, ‘এক দেশ, এক ভোট’ দেশের সংবিধানের মূলেই কুঠারাঘাত করবে।
বৃহস্পতিবারই ‘এক দেশ, এক ভোট’ নিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে ১৮ হাজার পাতার রিপোর্ট তুলে দিয়েছে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন কমিটি। ওই রিপোর্টে জানানো হয়েছে, দেশের প্রাক্তন চার প্রধান বিচারপতি এবং ১২টি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির মতামত নেওয়া হয়েছিল। দেশের চার প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, রঞ্জন গগৈ, শরদ আনন্দ বোবদে এবং ইউইউ ললিত (চার জনেই ‘বিজেপিপন্থী’ হিসেবে পরিচিত আইনজীবী মহলে) ‘এক দেশ, এক ভোট’ এর পক্ষে মত দিয়েছেন। চার প্রধান বিচারপতির পাশাপাশি ১২ হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতিরও মতামত নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ৯ জন দেশজুড়ে একই সঙ্গে বিধানসভা-লোকসভা এবং পঞ্চায়েত-পুরসভার ভোটের পক্ষে মত দিয়েছেন। তিন জন বিরোধিতা করেছেন।’
কারা বিরোধিতা করেছেন? কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিরোধিতাকারী তিন জন হলেন মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়, দিল্লি হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এ পি শাহ ও কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি গিরিশ চন্দ্র গুপ্ত। এদের মধ্যে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘এক দেশ, এক ভোট’ দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী।’ বিচারপতি গিরিশ চন্দ্র গুপ্তের অভিমত, ‘গণতন্ত্রের মূলধারার সঙ্গে ‘এক দেশ, এক নীতি’ কখনই মানানসই নয়।’