নিজস্ব প্রতিনিধি: পৃথিবীর বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্ক ভারতেই রয়েছে। প্রায় ১ লক্ষ ১৫ হাজার কিলোমিটার রেললাইন পাতা হয়েছে ভারতে। সাত হাজারের বেশি স্টেশনে রোজ ২৫ মিলিয়ন মানুষ যাতায়াত করেন ট্রেনে চেপে। এই বিশাল ভারতবর্ষে কোন ট্রেনটি সবচেয়ে লম্বা বা দীর্ঘ যাত্রা পূরণ করে সেটা নিশ্চই জানতে ইচ্ছে করে? ভারতে যেমন ১০-২০ কিলোমিটার দুরত্বের জন্য ট্রেন আছে তেমনই কয়েকটি ট্রেন পারি দেয় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত। আসুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক সেরকমই তিনটি দূরপাল্লার যাত্রীবাহী ট্রেন সম্পর্কে যাতে ভারতের দীর্ঘতম রেলযাত্রার মজা নেওয়া যায়।
১৫৯০৫/১৫৯০৬ বিবেক এক্সপ্রেস-
ভরতের দক্ষিণতম শহর কন্যাকুমারী থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের ডিব্রুগড় পর্যন্ত চলাচল করে বিবেক এক্সপ্রেসই ভারতের দীর্ঘতম যাত্রীবাহী ট্রেন। যা পাড়ি দেয় ৪,২৮৩ কিলোমিটার। ভাবতে পারছেন, এই ট্রেনটি যাত্রাকালে পেড়িয়ে যায় ৯টি রাজ্য। অসমের ডিব্রুগড় স্টেশন থেকে ছেড়ে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী পৌঁছতে ট্রেনটি সময় নেয় ৮০ ঘণ্টা, অর্থাৎ প্রায় সাড়ে তিনদিন। পথে বিবেক এক্সপ্রেস ৫৬টি স্টেশনে দাঁড়ায়। যে ৯ টি রাজ্যের ওপর এই ট্রেনটি চলাচল করে সেগুলি হল – অসম, নাগাল্যান্ড, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল ও তামিলনাড়ু। ১৫৯০৫ আপ বিবেক এক্সপ্রেস কন্যাকুমারী থেকে ছাড়ে প্রতি বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় এবং সোমবার সকাল ৬.৪০ মিনিটে ডিব্রুগড় এসে পৌঁছয়।
অপরদিকে ১৫৯০৬ ডাউন বিবেক এক্সপ্রেস প্রতি শনিবার রাত ১১টা ০৫ মিনিটে ছেড়ে বুধবার সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে ডিব্রুগড় পৌঁছয়। আর পথমধ্যে ট্রেনটি যে গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলি পেরিয়ে যায় বা দাঁড়ায় সেগুলি হল ডিব্রুগড় (অসম), ডিমাপুর (নাগাল্যান্ড), গুয়াহাটি (অসম), শিলিগুড়ি (পশ্চিমবঙ্গ), কিষাণগঞ্জ (বিহার), মালদা টাউন-রামপুরহাট-দুর্গাপুর-আসানসোল-আদ্রা-বাঁকুড়া-মেদিনীপুর-হিজলি (পশ্চিমবঙ্গ), বালাসোর-কটক-ভুবনেশ্বর (ওড়িশা), বিশাখাপত্তনম-রাজামুন্দ্রি-বিজয়ওয়াড়া (অন্ধ্রপ্রদেশ), সালেম-কোয়েম্বাটুর (তামিলনাড়ু), এর্ণাকুলাম-কোট্টায়াম-তিরুবনন্তপুরম (কেরল) এবং কন্যাকুমারী (তামিলনাড়ু)।
১২৫০৭/১২৫০৮ অরোনাই সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস-
১২৫০৭/১২৫০৮ অরোনাই সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ভারতের দ্বিতীয় দীর্ঘতম ট্রেন। আর সুপারফাস্ট ট্রেনগুলির মধ্যে দীর্ঘতম। এটি দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কেরলের থিরুবন্তপুরণ সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য অসমের শিলচর পর্যন্ত চলাচল করে। পথে ট্রেনটি মোট ৩,৯৩২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। পথমধ্যে ট্রেনটি মোট ৮টি রাজ্য কেরল, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওডিশা, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও অসম রাজ্য়ে অতিক্রম করে। সময় লাগে মোট ৭৪ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট।
মোট চারবার ট্রেনটির ইঞ্জিন রিভার্স করতে হয়, অর্থাৎ চারটি স্টেশনে ট্রেনটি বিপরীত দিকে যাত্রা করে। সেগুলি হল বদরপুর জংশন, লামডিং জংশন, হাওড়া ও বিশাখাপত্তনম স্টেশন। ১২৫০৭ অরোনাই সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস প্রতি মঙ্গলবার থিরুবন্তপুরণ সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে বিকেল ৪টে ৫৫ মিনিটে ছেড়ে শুক্রবার সন্ধ্যে ৭টায় শিলচর পৌঁছয়। আর ডাউনে ১২৫০৮ অরোনাই সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস প্রতি বৃহস্পতিবার রাত ৮টা ০৫ মিনিটে শিলচর থেকে ছেড়ে রবিবার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে থিরুবন্তপুরণ সেন্ট্রাল স্টেশনে ঢোকে। পথমধ্যে ট্রেনটি ৫৪টি স্টেশনে দাঁড়ায়।
১৬৩১৭/১৬৩১৮ হিমসাগর এক্সপ্রেস-
এটিই একসময় ভারতের দীর্ঘতম ট্রেন হিসেবে চলাচল করতো। ১৬৩১৭/১৬৩১৮ হিমসাগর এক্সপ্রেস ভারতের দক্ষিণতম শহর কন্যাকুমারী থেকে উত্তরতম রেল স্টেশন মাতা বৈষ্ণদেবী কাটরা পর্যন্ত চলাচল করে। যাত্রাপথের মোট দুরত্ব ৩৭৮২ কিলোমিটার। মজার বিষয় হিমসাগর এক্সপ্রেস পথমধ্যে মোট ১২টি রাজ্য ছুঁয়ে যায়। পুরো দুরত্ব অতিক্রম করতে হিমসাগর এক্সপ্রেস সময় নেয় ৭১ ঘণ্টা ১০ মিনিট। এবং মোট ৭১টি স্টেশনে দাঁড়ায়। ১৬৩১৭ আপ হিমসাগর এক্সপ্রেস কন্যাকুমারী স্টেশন থেকে প্রতি শুক্রবার দুপুর ২টো ১৫ মিনিটে ছেড়ে পরের সোমবার বেলা ১২টা ৫৫ মিনিটে জম্মু-কাশ্মীরের মাতা বৈষ্ণদেবী কাটরা স্টেশনে পৌঁছয়।
অপরদিকে ১৬৩১৮ ডাউন হিমসাগর এক্সপ্রেস মাতা বৈষ্ণদেবী কাটরা স্টেশন থেকে প্রতি সোমবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে পরের বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ২৫ মিনিটে কন্যাকুমারী পৌঁছয়। জেনে রাখুন জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল ও তামিলনাড়ুর মধ্যে দিয়ে যায় হিমসাগর এক্সপ্রেস।