নিজস্ব প্রতিনিধি: পথে আর দেরী নয়। ভোটগ্রহণের দিনও এক থাকবে, অর্থাৎ ৮ জুলাই শনিবার। কার্যত রাত পোহালেই রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের(Panchayat Election) ভোটগ্রহণ। আদালতও জানিয়ে দিয়েছে ১ দফাতেই ভোট হবে। তাই ভোট পিছোনোর কোনও সম্ভাবনা নেই। তা সে পথে যত বাধাই আসুক না কেন। এমনকি প্রয়োজনে বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী(Central Para Military Force) ছাড়াই ভোটগ্রহণ করা হবে। কার্যত সেই প্রস্তুতিই সেরে রাখছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন কেননা একদম শেষ মুহুর্তে এসে বেঁকে বসেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তাঁদের দাবি, বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর একজন মাত্র জওয়ান রাখা যাবে না। নূন্যতম ৪জন জওয়ান রাখতে হবে প্রতিটি বুথে। অথচ সেই দাবি মানতে গেলে যে বিশাল কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন তা না কেন্দ্রের হাতে আছে না আদালত তা পাঠাবার নির্দেশ দিয়েছে। তাই রাজ্য নির্বাচন কমিশনও(West Bengal State Election Commission) ঠিক করে ফেলেছে প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়াই ভোটগ্রহণ করা হবে প্রতিটি বুথে। সেক্ষেত্রে বাড়বে লাঠিধারী সিভিক ভলেন্টিয়ার এবং সশস্ত্র পুলিশের সংখ্যা। খবর সূত্রে।
আরও পড়ুন ‘আদালতকে ধন্যবাদ দেব কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়ার জন্য’: অভিষেক
কলকাতা হাইকোর্ট(Calcutta High Court) নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্যে ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এনে প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে পঞ্চায়েতের ভোটগ্রহণ করতে হবে। এমনকি সেই বাহিনীর খরচ বহণ করতে হবে কেন্দ্র সরকারকে। দীর্ঘ টালবাহানার পরে কেন্দ্র সরকার ৮২২ কোম্পানি বাহিনী পাঠানোর সায় দিলেও এখনও অর্ধেক বাহিনী বাংলায় এসে পৌঁছায়নি। এদিকে আগামিকালই ভোটগ্রহণ। আদালতের নির্দেশ মেনে রাজ্য নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, প্রতিটি বুথে ১জন করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান, একজন করে রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র কর্মী এবং ভোটারদের লাইন ঠিক করার জন্য ১জন করে লাঠিধারী সিভিক ভলেন্টিয়ার থাকবে। কিন্তু কমিশনের এই হিসাবে বেঁকে বসেছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর আধিকারিকেরা। তাঁদের দাবি, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যেরা রাজ্যের কোনও বুথে একক ভাবে কাজ করতে চাইছেন না। ‘বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের(West Bengal) যা অবস্থা’ তাতে জওয়ানদেরও ‘প্রাণহানির আশঙ্কা’ রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। এই মর্মে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোঅর্ডিনেটর।
আরও পড়ুন পঞ্চায়েত ভোটে কোন জেলায় কত কেন্দ্রীয় বাহিনী, জেনে নিন
জানা গিয়েছে, সেই চিঠি পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফেই যোগাযোগ করা হয় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে। তারপর রাতেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোঅর্ডিনেটর আইজি (বিএসএফ)-র সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহ। কিন্তু সেই বৈঠকে কোনও সুরাহা হয়নি। কেন্দ্রীয় বাহিনীর আধিকারিকদের দাবি, কোনও জায়গায় এক সেকশনের কমে বাহিনী থাকতে পারে না। এক সেকশনের জওয়ান সংখ্যা ১১ জন। শুধুমাত্র ভোটের ক্ষেত্রে কোনও বুথে ‘হাফ’ সেকশন বাহিনী থাকতে পারে। ‘হাফ’ সেকশন বাহিনীতে সক্রিয় থাকেন ৪ জন জওয়ান। পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে হিংসা, বুথ দখলের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। রাজ্যে বুথের সংখ্যা ৬১ হাজার ৬৩৬। ৫২৮টি বুথে ভোট হচ্ছে না। বাকি ৬১ হাজার ১০৮টি বুথের প্রত্যেকটিতে যদি ‘হাফ’ সেকশন অর্থাৎ চার জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান মোতায়েন করা হয়, তা হলে অন্তত ২ লক্ষ ৪৫ হাজারের কাছাকাছি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানের প্রয়োজন। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে রাজ্যে মোতায়েন করা হচ্ছে ৮২২ কোম্পানি। অর্থাৎ ৮২ হাজার থেকে খুব জোর ১ লক্ষ জওয়ান। এ থেকে স্পষ্ট যে, সব বুথে কোনও মতেই ৪ জন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান মোতায়েন সম্ভব নয়। তাই কমিশনও বিকল্প পথ ভেবে রাখছে।
আরও পড়ুন শুভেন্দুকে নোটিস ধরাল কাঁথির পুলিশ, নিয়ন্ত্রণে গতিবিধি
একই সঙ্গে ৮২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর যে অংশ এখনও বাংলায় এসে পৌঁছায়নি তা যে শনিবারের আগে পুরোপুরি রাজ্যে এসে পৌঁছতে পারবে, তারও নিশ্চয়তা নেই। হিসাবমতো এখনও ৪৮৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে পৌঁছয়নি রাজ্যে। প্রশ্ন উঠছে, শনিবার, ভোটের আগে সেই বাহিনী কি আদৌ পৌঁছতে পারবে রাজ্যে? যদি পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী পাওয়াই না যায় তাহলে কী হবে? সেক্ষেত্রেই রাজ্য নির্বাচন কমিশন রাজ্য পুলিশের সশদত্র কর্মী ও সিভিক ভলেন্টিয়ার দিয়েই ভোট করাতে বাধ্য হবে। ভোটগ্রহণের দিন কোনওমতেই আর পিছোনো হবে না। তবে এটাও ঘটনা যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের ভয় পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠছে, হাশাসি হচ্ছে। অনেকে এর পিছনে গেরুয়া রাজনীতিও দেখতে পাচ্ছেন। যাদের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র তাঁরা কিনা ভয় পাচ্ছে বুথে ডিউটি করতে, তাও যেখানে একজন রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র পুলিশ থাকছে! এই দাবি কী আদৌ সত্যি? নাকি বাংলার ভাবমূর্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে খারাপ করতে ও রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য সরকারকে হেয় করতেও এইসব আজব হাস্যখারক যুক্তি তুলে ধরা হচ্ছে!