সুদীপ্ত ভট্টাচার্য: লাদাখ নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে শুধু পাহাড়, প্যাংগং লেক। সংবাদ মাধ্যমের খবরে লাদাখ উঠে আসে প্রায়ই। কেননা সীমান্তবর্তী এই পাহাড়ি রাজ্য মাঝে মাঝে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোলা-বারুদ, মর্টার আর সেনাবাহিনীর ভারি বুটের শব্দে।
এতসবের মধ্যে এবার এই পাহাড়ি রাজ্যটিও নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে ফুটবলকে আঁকড়ে ধরে। আর এর মূল কারিগরই হচ্ছেন একজন মহিলা। তাঁর নাম সেরিং আংমো। ফুটবলকে আংমো ভালোবেসেছিলেন কবে তার দিনক্ষণ ঠিক মনে নেই। তবে ফুটবল যে তাঁর প্রিয় খেলা সেটা জানাতে ভুললেন না সেরিং। বৃহস্পতিবার দুপুরে যখন তাঁকে প্রথম ফোনে যোগাযোগ করি, তখন সেরিং ব্যস্ত ছিলেন একটি জরুরি মিটিং-য়ে। তবুও তারই মাঝে শুধু বললেন, দাদা প্লিজ বিকেলে ফোন করুন কথা হবে।
ঘড়ির কাঁটা তখন প্রায় চারটের ঘর অতিক্রম করে ছুটে চলেছে পাঁচটার দিকে। ফের ফোনে যোগাযোগ করলাম সেরিং-এর সঙ্গে। ফুটবলের প্রতি এত আগ্রহ কিসের টানে? প্রথম আলাপেই এইরকম প্রশ্ন শুনে রেগে না গিয়ে সেরিং বলেন, ফুটবলই তো পারে ভেদাভেদ, হানাহানি, শান্তি সবকিছু দিতে। তাই ফুটবলকে ভালোবাসা। ফুটবলের জন্য এতকিছু করা।
আমি ভারতবর্ষের অন্য রাজ্যগুলির মতো পাহাড় ঘেরা এই সুন্দর রাজ্যটিও ফুটবল খেলুক। এখান থেকেও কোনও মহিলা কিংবা পুরুষ কোনও ফুটবলার ভারতের জার্সি গায়ে দাপিয়ে বেড়াক। সেইদিন হয়তো আমার এই প্রচেষ্টা স্বার্থক রূপ পাবে। আমার রাজ্য সন্তোষ ট্রফি খেলবে। সবাই জানবে লাদাখেও ফুটবল খেলার প্রসার ঘটছে ধীরে ধীরে। এতেই আমার শান্তি।
সেরিং থামলেন না বললেন, মাত্র ১০-১৫ দিন হল আমি আমার নতুন ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছি। এই ক্লাবের নাম দিয়েছি ওয়ান লাদাখ এফসি। এই অ্যাকাডেমি থেকেই ভবিষ্যতের তারকা তৈরির স্বপ্ন দেখছেন সেরিং। ইতিমধ্যেই লাদাখে তৈরি হয়েছে ফুটবল স্টেডিয়াম। যেখানে ৩০ হাজার দর্শক বসে থেলা দেখতে পারবেন। প্রসঙ্গটা তুলতেই সেরিং বলেন, একদম ঠিক, তবে একটা স্টেডিয়াম আপাতত তৈরি হলেও পরবর্তীকালে আরও বেশি স্টেডিয়াম তৈরি করার পরিকল্পনা আছে।
সবশেষে সেরিং-কাছে জানতে চেয়েছিলাম অ্যাকাডেমি তৈরি করলেই শুধু হবে না, সেখানে যে সমস্ত শিশুরা কোচিং করবেন তাঁদের উন্নতমানের কোচের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। থাকতে হবে পরিকাঠামোও। ফোনের ওপার থেকে কথাগুলি শুনে সেরিং-এর স্পষ্ট উত্তর অফকোর্স। তারজন্য আমার অ্যাকাডেমি তৈরি আছে। ইতিমধ্যেই অ্যাকাডেমির কোচের পদে নিযুক্ত হচ্ছেন স্টিভ মার্শেলার মতো কোচ।
সুতরাং সেরিং স্বপ্ন দেখতেই পারেন। এটাই স্বাভাবিক। আমরাও তাঁর সাফল্য কামনা করি।