নিজস্ব প্রতিনিধি: ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ৬টা। চটকলের শ্রমিকদের একটি অংশের ডিউটি শেষ। অন্য শ্রমিকরা শিফটের কাজ বুঝে নিচ্ছেন সহকর্মীদের কাছ থেকে। সেই সময় আচমকাই বিকট শব্দে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল(Collapsed) চটকলের ছাদের একটি অংশ। তাতে বেশ কয়েক জন শ্রমিকের চাপাও পড়ে গেলেন। ঘটনাস্থল হাওড়া শহরের(Howrah City) মালিপাঁচঘড়া থানা(Malipanchghora PS) এলাকার ঘুসুড়ি(Ghusuri)। সেখানেই হনুমান জুটমিলে(Hanuman Jute Mill) এই ঘটনা ঘটে। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ভাঙা ছাদের অংশে চাপা পড়ে জুটমিলেরই ২জন শ্রমিক মারা গিয়েছেন। আরও বেশ কয়েকজন সেখানে চাপা পড়ে থাকতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। সেই হেতু মৃতের সংখ্যাও বাড়তে পারে।
জানা গিয়েছে, হনুমান জুটমিলের পুরনো নির্মাণের ওপরেই একটি নতুন নির্মাণের কাজ চলছিল। শ্রমিকদের অভিযোগ, কারখানার মেরামতি এবং সংস্কারের কাজে মিল কর্তৃপক্ষের নজর নেই। এই বিপর্যয়ের নেপথ্যে কর্তৃপক্ষের গাফিলতির দিকেই ইঙ্গিত করছেন শ্রমিকরা। যদিও এ ব্যাপারে মিল কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি। এদিন ৬টায় মর্নিং শিফট শুরু হওয়ার পরেই এই বিপর্যয় ঘটে। আচমকাই ভেঙে পড়ে জুটমিলের পাঁচিল সমেত ছাউনি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে মালিপাঁচঘড়া থানার পুলিশ। চলে আসে দমকলও। পরিস্থিতি আঁচ করে অকুস্থলে পৌঁছয় বালি এবং লিলুয়া থানার পুলিশও। হাজির হন হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার প্রবীণ ত্রিপাঠী। দমকল, বিপর্যয় মোকাবিলাবাহিনী এবং পুলিশ শুরু করে উদ্ধারকাজ। যে সব শ্রমিককে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা গিয়েছে, তাঁদের গুরুতর আহত অবস্থায় তড়িঘড়ি করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বুলডোজ়ার এনে চলতে থাকে উদ্ধারের কাজ। এই ঘটনায় মিল চত্বরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশ থেকে লোকজন ছুটে এসে উদ্ধারকাজে হাত লাগান। যদিও কর্তৃপক্ষের কারও দেখা মেলেনি।
ঘটনাস্থলে যাওয়া হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার প্রবীণ ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, ‘যে ধরনের বিপর্যয় ঘটেছে তাতে আশঙ্কা করছি ধ্বংসস্তূপের তলায় কয়েক জন চাপা পড়ে থাকতে পারেন। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ চলছে। উদ্ধারকাজ শেষ হলে বিস্তারিত জানা যাবে।’ যে ধ্বংসস্তূপের নীচে শ্রমিকেরা আটকে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে তা প্রায় ৫ হাজার বর্গ ফুট জায়গাজুড়ে রয়েছে। ব্রিটিশ আমলে তৈরি এই বিল্ডিংয়ের ওপরে নির্মিত হয়েছিল নতুন অংশ। নীচে প্রচণ্ড শব্দে কাজ করছিল ভাইব্রেটিং মেশিন। বারবার বলা সত্ত্বেও, মিল কর্তৃপক্ষ এনিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। এদিন সকালে যখন আচমকাই সেই বিল্ডিং ভেঙে পড়ে তখন বেশকিছু শ্রমিক ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে আসার কোনও পথ পাননি। অন্তত তিন থেকে চার জন ওই ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়ে থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।