নিজস্ব প্রতিনিধি: জেলায় এসে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। সাফ জানিয়েছিলেন, ‘গদ্দারদের মহিলা ঘটিত ঘটনা মিডিয়া দেখতে পায় না। আমি কিন্তু সময় হলেই সব ফাঁস করে দেব। ঠিক সময়ে মানুষের সামনে নিয়ে আসব। আমি কাউকে টাচ করছি না। কিন্তু আজকে আমি টাচ করছি না বলে মাথাকে আমি কোনওদিন টাচ করব না… (সেটা ভাববেন না)। আমায় অতটা বিশ্বাস করবেন না।’ সেই বক্তব্যের পিছনে ছিল পূর্ব মেদিনীপুর(Purba Midnapur) জেলার বিজেপির(BJP) তমলুক সাংগঠনিক জেলার মহিলা শাখার সদস্যা অসীমা প্রামাণিকের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা। তাঁর অভিযোগ ছিল, দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক দেবকমল দাস বিয়ের প্রতিশ্রুতি ও গুরুত্বপূর্ণ পদ পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে তাঁর সঙ্গে একবছর ধরে সহবাস করে এসেছেন। এরপর বিয়ের জন্য চাপ দিতেই দেবকমল তাঁকে বেধড়ক মারধর করে। সেই ঘটনায় তার সঙ্গ দিয়েছিল বেশ কিছু বিজেপি নেতা। মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের পরে পরেই সেই সব অভিযুক্ত বিজেপি নেতাদের মধ্যে ৩জনকে নদিয়া জেলা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরা হল – সমরেশ ধাড়া, স্বরূপ ভৌমিক ও শঙ্কর জানা। শনিবার তাদের তমলুক জেলা আদালতে তোলা হয়।
অসীমা গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তমলুক থানায় দেবকমল সহ বেশ কিছু বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। সেই ঘটনা নজরে এসেছিল মুখ্যমন্ত্রীর। তমলুকের নিমতৌড়িতে তিনি কিছুদিন আগেই গিয়ে প্রশাসনিক সভা করেছিলেন। সেই সভা থেকে অধিকারীদের নিশানা বানানোর পাশাপাশি গেরুয়া শিবিরের নারী ঘটিত কেলেঙ্কারি নিয়েও সরব হয়েছিলেন। আর তারপরে পরেই বিজেপির ৩ নেতার গ্রেফতারি তাৎপর্যপূর্ণ বইকি। তবে ঘটনা হচ্ছে, অসীমার পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগের পরে পরেই দেবকমল দলের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেয় এবং সেই থেকে সে ফেরার। একই সঙ্গে গা ঘাকা দিয়েছে আরও কিছু বিজেপি নেতা। দেবকমল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর(Suvendu Adhikari) রীতিমত ঘনিষ্ঠ হিসাবেই পরিচিত। অসীমার অভিযোগ অনুযায়ী তাঁকে মারধর করা হয়েছিল গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সরস্বতী পুজোর দিন। কার্যত দেবকমল ও অসীমার সম্পর্কের বহু ভিডিও ও ছবি ছিল অসীমার মোবাইলে। সেই সব প্রমাণ নষ্ট করার লক্ষ্যেই সেই মারধরের ঘটনা ঘটেছিল। অসীমা তার জেরেই দেবকম সহ মোট ৬জনের নামে FIR দায়ের করেন।
সেই হিসাবে ৬ জনের মধ্যে ৩জন ধরা পড়লেও এখনও দেবকমল সহ আরও ২ অভিযুক্ত ফেরার হয়েই রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তমলুকে এসে এই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রকাশ্যে জানানোয়, পুলিশের কাছে এদের ধরা কার্যত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই চ্যালেঞ্জের অর্ধেক পূর্ণ হলেও বাকি অর্ধেক এখনও বাকি। তবে এই ঘটনায় চাপে পড়ে গিয়েছে বিজেপি। চাপ দুই দিক থেকে। এক, সামনেই লোকসভা নির্বাচন(General Election 2024)। এই ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এবং দুই, শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে আসা নেতাকর্মীদের ওপর লাগাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত। এরা দলে এসে কার্যত যা খুশি করে চলেছে শুভেন্দুর নাম করে। তাতে দলের বদনাম হচ্ছে। এই ঘটনা ঠেকাতে এবার কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে পদ্মশিবিরও। এর প্রমাণ মিলেছে এদিনই। শুভেন্দুর বিধানসভা কেন্দ্র নন্দীগ্রামে এদিন ২ বিজেপি নেতাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে ২জন তৃণমূল কর্মীকে বিনা কারণে মারধর করার জন্য।