কৌশিক দে সরকার: দক্ষিণবঙ্গের(South Bengal) মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছিলেন বর্ধমান(Burdhwan) ও খড়গপুরের(Kharagpur) মধ্যে লোকাল ট্রেন পরিষেবা চালু করতে। কেননা এই দুই শহর তথা রেলের দুটি গুরুত্বপূর্ণ জংশনের মধ্যে চলাচলকারী সরাসরি কোনও ট্রেন(Direct Train Service) নেই। একই রকম ভাবে ব্যান্ডেল(Bandel) থেকেও খড়গপুর যাওয়ার সরাসরি কোনও ট্রেন নেই। বর্ধমান বা ব্যান্ডেল থেকে খড়গপুর যেতে হলে হাওড়ায়(Howrah) এসে ট্রেন বদলে যেতে হয়। খড়গপুরের দিক থেকেই ব্যান্ডেল বা বর্ধমানের দিকে আসতে গেলে হাওড়ায় এসে ট্রেন বদল করে যেতে হয়। আর এই ট্রেন বদলের ক্ষেত্রে অনেক যাত্রীকেই চূড়ান্ত ভোগান্তির মুখে পড়তে হয় হাওড়া স্টেশনে। লটবহর নিয়ে বা প্রবীণ মানুষ কিংবা বাচ্চাদের নিয়ে হাওড়া স্টেশনের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত যেতে গিয়ে তাঁরা কার্যত চূড়ান্ত ভাবে নাজেহাল হন। এই জায়গা থেকেই কয়েক দশক ধরে দাবি উঠছিল বর্ধমান ও খড়গপুরের মধ্যে সরাসরি ট্রেন পরিষেবা চালু করা হোক। সেই দাবি সামনের আর্থিক বর্ষের রেলবাজেটে পূরণ হতে পারে বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন জাকিরের ডেরা থেকে উদ্ধার ১৫ কোটি টাকা
দীর্ঘদিন ধরে দাবি থাকলেও খড়গপুর ও বর্ধমানের মধ্যে সরাসরি ট্রেন পরিষেবা না থাকার অন্যতম কারণ ছিল দুটি স্টেশন সম্পূর্ণ দুটি আলাদা রেলের আওতায় রয়েছে। খড়গপুর রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের অধীনে এবং বর্ধমান রয়েছে পূর্ব রেলের অধীনে। তাই কোন রেল এই ট্রেন পরিষেবা চালাবে তা নিয়েই বার বার দ্বন্দ্ব লাগায় এই বিষয়ে কোনও রেলমন্ত্রীও সেভাবে আগ্রহ দেখাননি। এমনকি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২ দফায় দেশের রেলমন্ত্রী হিসাবে কাজ করার সময়েই এই পরিষেবা চালুর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও শেষ পরররযন্ত তা চালু হয়নি। এখন নতুন করে বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। সূত্রে জানা গিয়েছে খড়গপুর থেকে হাওড়া ও ব্যান্ডেল হয়ে বর্ধমান পর্যন্ত আপাতত একটি ডেমু রেক দিয়ে এই পরিষেবা চালু হতে পারে চলতি বছরের জুন মাস থেকে। ট্রেনটি সকালে খড়গপুর থেকে ছেড়ে হাওড়া ও ব্যান্ডেল হয়ে বর্ধমান যাবে। ফিরতি পথে তা দুপুরবেলা বর্ধমান থেকে ছাড়বে ও ব্যান্ডেল ও হাওড়া হয়ে খড়গপুর ফিরবে বলে জানা গিয়েছে। তবে এই ট্রেনের সময়সীমা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
আরও পড়ুন বাজেয়াপ্ত টাকা শ্রমিকদের বেতনের টাকা, দাবি জাকিরের
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ডেমু পরিষেবায় ব্যবহৃত ট্রেনটি অবশ্য সব স্টেশনে দাঁড়াবে না। খড়গপুর থেকে ট্রেনটি ছেড়ে বালিচক, পাঁশকুড়া, মেচেদা, বাগনান, উলুবেড়িয়া, সাঁকরাইল, সাঁতরাগাছিতে স্টপেজ দিয়ে হাওড়ায় এসে থামবে। সেখান থেকে অন্তত ২০ মিনিট বাদে ট্রেনটি ব্যান্ডেলের পথে রওয়ানা দেবে। পথে স্টপেজ থাকবে বালি, শ্রীরামপুর, শেওরাফুলি, চন্দননগর ও চুঁচুড়া। ব্যান্ডেলে ট্রেনটি মিনিট পাঁচেক থামবে। তারপর সেখান থেকে রওয়ানা দেবে বর্ধমানের পথে। এই যাত্রায় ট্রেনটি স্টপেজ দেবে মগরা, পাণ্ডুয়া, মেমারি ও শক্তিগড় স্টেশনে। সব মিলিয়ে খড়গপুর থেকে বর্ধমান পর্যন্ত ট্রেনটি মোট ২০টি স্টেশনে স্টপেজ দেবে। তাই এই ট্রেনটি চালু হয়ে গেলে একটিকিট ও এক ট্রেনেই খড়গপুর থেকে বর্ধমান বা ব্যান্ডেলে চলে আসা যাবে। হাওড়া স্টেশনে নেমে ট্রেন পরিবর্তনের ঝামেলা আর থাকবে না। এই পরিষেবা কতটা জনপ্রিয় হচ্ছে তা দেখে পরবর্তীকালে এই পরিষবা বাড়ানোর কথা ভাবা হবে বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে।