নিজস্ব প্রতিনিধি: বউ যাতে চাকরি পায় তার জন্য ঘুষ(Bribery) দিতে পিছু পা হননি শাসক দলের নেতা। তাও এক আধ টাকা নয়, দিয়েছেন পুরো ২০ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু চাকরি মেলেনি। চাকরি না মেলার শোকে বউ মানসিক রোগের শিকার হয়ে মারা গিয়েছেন। তারপরে পরেই নেতাবাবু অভিযোগ তুলেছেন তিনি বউয়ের চাকরির জন্য ঘুষ দিয়েছিলেন রাজ্য ভূমি দফতরের রাজস্ব আধিকারিককে(Land and Revenue Officer)। সেই টাকা বার বার চেয়েও ফেরত পাননি তিনি। শেষে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হয়েছে। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে, ঘুষ নেওয়া যেমন অপরাধ তেমনি তা দেওয়াও। তাহলে শাসক দলের ওই নেতাকে গ্রেফতার করা হবে না কেন? প্রশ্ন উঠেছে, ২০ লক্ষ টাকার উৎস কী? সব থেকে বড় কথা এই ঘটনা সামনে চলে আসায় এবার বিরোধীরা দাবি করতে শুরু করেছেন পরিবর্তনের পরে এভাবেই কী ঘুষ দিয়ে শাসক দলের নেতা থেকে আত্মীয়স্বজন, পরিজন, বন্ধুবান্ধব, পরিচিতরা চাকরি পাচ্ছেন!
যে ঘটনার জেরে এই বিতর্ক তৈরি হয়েছে তা পূর্ব মেদিনীপুর(Purba Midnapur) জেলার। যিনি ভূমি দফতরের রাজস্ব আধিকারিককে ২০ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তাঁর নাম স্বপন পাত্র। বাড়ি জেলার সদর মহকুমার নন্দকুমার(Nandakumar) ব্লকের বাসুদেবপুর গ্রামে। তিনি আবার সেই গ্রামের তৃণমূল(TMC) বুথ সভাপতি। তাঁর অভিযোগ, তিনি তাঁর স্ত্রী চন্দনা পাত্রের চাকরির জন্য পাশের গ্রাম কুমোরআড়ার বাসিন্দা তথা ভূমি দফতরের রাজস্ব আধিকারিক প্রশান্ত সাহুকে ঘুষ দিয়েছিলেন। কিন্তু চন্দনার চাকরি হয়নি, ঘুষের টাকা ফেরত চেয়েও তা ফেরত পাননি স্বপনবাবু। আর তার জেরে নন্দকুমার থানায় তিনি গোটা বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু সেই অভিযোগের জেরেই এখন এলাকায় প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে শাসক দল।
স্বপনবাবুর দাবি, যেহেতু প্রশান্তবাবু তাঁর পূর্ব পরিচিত তাই নিশ্চিত মনেই সেই টাকা তিনি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই চাকরি হননি। ২০১০ ও ২০১১ সালে দুই দফায় তিনি প্রশান্তবাবুকে ১৮ লক্ষ তাকা দেন। পরে ২০১২ সালে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে আরও ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেন। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষা করেও চাকরি হয়নি চন্দনা দেবীর। শেষে চাকরি না হওয়ার শোকে তিনি মানসিক রোগীতে পরিণত হন এবং মারাও যান। আর চাকরি না হওয়ায় ঘুষের টাকা বার বার প্রশান্তবাবুকে ফেরত চেয়েও ১ পয়াসাও পাননি স্বপনবাবু। বিষয়টি জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের নজরে আনেন স্বপনবাবু। তার জেরে একবার প্রশান্তবাবু তাঁকে বেশ কয়েকটি চেকে ২০ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ফেরত দেন। কিন্তু সেই চেক ভাঙাতে গিয়ে স্বপনবাবু জানতে পারেন, সবকটি বাউন্স চেক। অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত ব্যালান্সই নেই। শেষে এপ্রিল মাসে তিনি প্রশান্তবাবুর বিরুদ্ধে নন্দকুমার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এই বিষয়ে নন্দকুমার থানার ওসি মনোজ ঝা জানিয়েছেন, ‘ওই রেভিনিউ ইন্সপেক্টর এখন পটাশপুরে কর্মরত। তাঁর বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’