নিজস্ব প্রতিনিধি: একই পরিবারের তিনজন সদস্যের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় মঙ্গলবার সকালেই তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ল হুগলি জেলার সদর মহকুমার ধনেখালি থানার অন্তর্গত দশঘড়া এলাকায়। একই সঙ্গে ওই পরিবারের এক যুবককে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান ওই যুবকই তার বাবা-মা-বোনকে খুন করে নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। হাতের শিরা কাটা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে তার বাবা-মা ও বোনের রক্তাক্ত মৃতদেহ। পেশায় গৃহশিক্ষক ওই যুবককে পুলিশ ধনেখলি গ্রামীণ হাসপাতালে আপাতত ভর্তি করেছে। সেই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগও দায়ের করেছে। ঘটনার পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখছে ধনেখালি থানার পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, পারিবারিক অশান্তির জেরেই ওই যুবক বাবা-মা ও বোনকে খুন করে নিজে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছে।
পাড়াপ্রতিবেশী সূত্রে জানা গিয়েছে, বিগত চল্লিশ বছর ধরে অসীম ঘোষাল, তাঁর স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে নিয়ে দশঘড়ার রাজবাড়িতে ভাড়া থাকতেন। অসীমবাবুর মেয়ে পল্লবীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সে ভাইফোঁটায় বাপের বাড়ি এসেছিল। অসীমবাবুর ছেলে প্রমথেশ পেশায় গৃহশিক্ষক। রোজগার তেমন বেশি কিছু ছিল না। তাঁর নিজেরও অসুস্থতা রয়েছে। লিভারের সমস্যায় ভুগছে সে। কার্যত তার চিকিৎসাতেই রোজগারের অনেকটাই বেড়িয়ে যেত। ফলে আর্থিক টানাটানি প্রবল আকার ধারন করেছিল। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, তাঁরা মাঝে মধ্যেই ওই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ঝগড়ার আওয়াজ পেতেন। সোমবার সন্ধ্যাবেলাতেও তাঁরা ঝগড়ার আওয়াজ পান। কিন্তু এদিন ভোরে তাঁরা আর্তনাদের আওয়াজ পেতেই সেখানে গিয়ে দেখেন বাড়ির মেঝেতে চাপ চাপ রক্ত। ঘরের মধ্যে তিন জনের শরীর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কিছুটা দূরেই রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছে প্রমথেশ। তার হাতের শিরা কেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।
এরপরেই ধনেখালি থানায় খবর দেন প্রতিবেশীরা। পুলিশ এসে প্রমথেশকে আটক করার পাশাপাশি তিনজনের দেহ উদ্ধার করে তা ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। ধারালো কোনও অস্ত্র দিয়েই শিরা কাটা হয়েছে বলেই অনুমান। প্রমথেশকে পুলিশ আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ধনিয়াখালি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করায়। তাঁর অবস্থাও সঙ্কটজনক বলে চিকিত্সকরা জানিয়েছেন। তবে সে কেন বাবা-মা ও বোনকে খুন করে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছে তার কোনও ‘ক্লু’ পাননি তদন্তকারীরা। প্রমথেশ যাতে দ্রুত সুস্থ হয়, সেটাই এখন চাইছেন তদন্তকারীরা। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মূল ঘটনা জানতে চাইবে পুলিশ। মনে করা হচ্ছে, অবসাদ থেকেই এই খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে সে।