নিজস্ব প্রতিনিধি: মল্লভূমের মাটিতে পর্যটনের আকর্ষণ আরও বেড়ে গেল। মন্দির, পাহাড়, বালুচুরি, পোড়ামাটি তো ছিলই সেখানকার আকর্ষণ হয়ে, এবার সেই আকর্ষণে যোগ হল আরও এক আকর্ষণ। আদিম মানুষের গুহা(Cave)। বাঁকুড়া(Bankura) জেলার খাতড়া(Khatra) থানার পোড়াপাহাড়ে(Poropahar) ওই গুহার সন্ধান মিলেছে। তবে একে গুহা বলা উচিত নাকি সুড়ঙ্গ বলা উচিত তা নিয়ে ভাবছেন গবেষক মধুসূদন মাহাতো(Madhusudhan Mahato)। খাতড়ার বাসিন্দা এই লোকগবেষকই পোড়াপাহাড়ের মাঝমাঝি এলাকায় এই গুহার আবিষ্কারক। এই গুহায় যে আদিম মানুষ বসবাস করত তা নিয়ে তাঁর মনে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই মানুষেরা আজ থেকে ঠিক কত বছর আগে সেখানে থাকত, তাঁদের জীবনধারণের পদ্ধতি কী ছিল তা জানতে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলেই মনে করছেন মধুসূধনবাবু।
জানা গিয়েছে, পোড়াপাহাড়ের মাঝমাঝি এলাকায় যে গুহা আবিষ্কৃত হয়েছে তার মুখ পাহাড়ের উত্তর দিকে। গুহার উচ্চতা ৬ ফুট। চওড়ায় ৪-৫ ফুট। কিছু দূর গিয়ে ওই গুহা ভাগ হয়ে গিয়েছে দুই দিকে। ডান দিকে সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০ ফুট। তার পর সুড়ঙ্গের ওই অংশ চলে গিয়েছে পাহাড়ের ভিন্ন প্রান্তে। সে দিকেও একটি মুখ রয়েছে গুহাটির। কিন্তু বাঁ দিকের অংশটি প্রায় ২০০ ফুট দীর্ঘ। সুড়ঙ্গের এই অংশে দু’দিকে মোট সাতটি কুঠুরির সন্ধানও পাওয়া গিয়েছে। যা লম্বা এবং চওড়ায় যথাক্রমে ২০ ফুট ও ৭ ফুট। এই অংশেই মানুষ বসবাস করত বলে মনে করছেন মধুসূধনবাবু। এই গবেষকের ধারনা, গুহাটি নিজে থেকে তৈরি হয়নি, বরঞ্চ তা পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে। আদিম মানুষই নিজেদের বসবাসের জন্য এই গুহা তৈরি করেছিল। সম্ভবত সেই সময় পরিবার তৈরি হচ্ছিল। তাই গুহার ভিতরে আলাদা আলাদা কুঠুরিতে আলাদা আলাদা পরিবার থাকত। তবে তাঁরা সমাজবদ্ধ হয়েই থাকত।
মধুসূধনবাবু চাইছেন অবিলম্বে এই গুহা সংরক্ষিত করা হোক। তাঁর মতে, ‘এই সুড়ঙ্গ সংরক্ষণ করা উচিত। এর সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা আছে। এই সুড়ঙ্গ গুহাবাসী আদিম মানুষের তৈরি করা হতে পারে।’ যদিও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বহু কাল ধরেই ওই গুহার খোঁজ জানতেন এলাকার মানুষেরা। কিন্তু বিষয়টি দিন কয়েক আগে জানতে পারেন মধুসূধনবাবু। স্থানীয় ইতিহাস নিয়ে চর্চা করার দৌলতেই তিনি এই গুহার সন্ধান পান। সেই সূত্র ধরেই প্রকাশ্যে এসেছে ওই সুড়ঙ্গের কথা। তবে, গুহাটি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে আসার আগে তা নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে বলেই মনে করছেন মধুসূধনবাবু। পাথর কেটে এই গুহা কে বা কারা তৈরি করেছিল, কতদিন আগে তা তৈরি হয়েছিল, সেখানকার মানুষেরা কেমন ছিল এই সবেরই উত্তর মিলতে পারে গবেষণায়।