নিজস্ব প্রতিনিধি: একুশের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বিজেপির সুর বেঁধে দিয়েছিলেন দলের নম্বর টু নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ(Amit Shah)। বেঁধে দিয়েছিলেন শ্লোগান, ‘আব কে বার ২০০ পার’। কিন্তু ভোটের ফল বার হতে দেখা যায় ২০০ তো বহু দূর তার অর্ধেক ১০০ আসনও পায়নি পদ্মপার্টি। মাত্র ৭৭ আসন পেয়েই তাঁদের যাত্রা থেমে গিয়েছিল। এরপর সময় যতই এগিয়েছে ততই দলের অন্দরে রক্তক্ষরণ ক্রমশই বেড়ে চলেছে। নিত্যদিন দল ছাড়ছেন নেতা থেকে কর্মীরা। মাঝে মধ্যে দল ছাড়তে দেখা যাচ্ছে দলের সাংসদ ও বিধায়কদেরও। উনিশের ভোটে বিজেপি(BJP) বাংলা(Bengal) থেকে ১৮জন সাংসদ(MP) পেলেও এখন তা নেমে এসে দাঁড়িয়েছে ১৬। আরও ৬ জন আসব আসব করছেন। একুশের ভোটে দল পেয়েছিল ৭৭জন বিধায়ক(MLA)। সেটাই এবার নেমে এসেছে ৬৯-এ। সর্বশেষ যিনি দল ছাড়লেন তিনি উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল(Suman Kanjilal)। এবার তাঁকেই চিঠি দিতে চলেছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। সেই চিঠিতে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান জানতে চাইবেন বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব।
আরও পড়ুন GST আদায় ও বৃদ্ধির নিরিখেও দেশের সেরা বাংলা
বঙ্গ বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেওয়া আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলালের বিরুদ্ধে দলত্যাগ আইনে বিধায়ক পদ খারিজের বিষয়ে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি পরিষদীয় দল। তার আগে উত্তরবঙ্গের এই দলবদলু বিধায়কের কাছে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান জানতে চেয়ে চিঠি দিতে চলেছে বিজেপি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই চিঠিটি পাঠানো হবে। সেই চিঠিতে সুমনকে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান জানাতে বলবে বিজেপি বিধায়ক দল। বিজেপি পরিষদীয় দলের তরফে এই চিঠিটি পাঠাবেন মুখ্য সচেতক মনোজ টিগগা। যেহেতু সুমন দলত্যাগ করেছেন, তাই তাঁকে তাঁর অবস্থান জানানোর সুযোগ দেওয়া হবে। তাঁর দিক থেকে কোন উত্তর পেলে বা উত্তর না পেলে উভয় অবস্থাতেই স্পিকারের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে বিধায়ক পদ খারিজের দাবি জানাবে বিজেপি। এমনকি এটাও জানা গিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে বাজেট অধিবেশন চলাকালীনই স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হবে বিজেপি। আবেদনে সুমনের তৃণমূলে যোগদানের যাবতীয় প্রমাণ স্পিকারের দফতরে জমা দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন শিল্পের জন্য পতিত জমি ফেরাতে নির্দেশ নবান্নের, ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সমীক্ষা
সুমনের দলবদলের প্রমাণ হিসেবে তৃণমূলের ভেরিফায়েড টুইটার হ্যান্ডলে প্রকাশিত সুমনের যোগদান সংক্রান্ত যাবতীয় পোস্টের স্ক্রিন শট দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে তৃণমূলে যোগদানের পর সুমন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে কী কী বলেছেন, তা-ও প্রমাণ আকারে দেওয়া হবে স্পিকারের দফতরে। তাঁর যোগদানের যে সমস্ত ছবি এবং ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে এসেছে, সেই ছবিও জমা দেবে বিজেপি পরিষদীয় দল। ইতিমধ্যে এই বিষয়ে প্রমাণ সংগ্রহ করার কাজ শেষ করে ফেলেছে তাঁরা। বাজেট অধিবেশন শুরুর আগেই বুধবার বিজেপি পরিষদীয় দলের একটি বৈঠক হবে। সেই বৈঠকেই এই সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়বে। তার পরেই চিঠি পাঠানো হবে সুমনকে। কিন্তু এই বিষয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে, এর আগেই একাধিক বিজেপি বিধায়ক নিজেদের জার্সি বদল করেছেন। তাঁদের মধ্যে যেমন মুকুল রায় আছেন, কৃষ্ণ কল্যাণী আছেন, তেমনই আছেন সৌমেন রায় ও বিশ্বজিৎ দাসের মতো বিধায়কেরাও। এদের সকলের বিরুদ্ধেই বিজেপির তরফে দল বদল আইনে পদক্ষেপ করতে অনুরোধ করা হয়েছে বিধানসভার স্পিকারকে। কিন্তু সেরকম কোনও পদক্ষেপই হয়নি। সকলেই ভাল তবিয়তেই আছেন। সুমনও থাকবেন।