নিজস্ব প্রতিনিধি: কথাতেই আছে, বাংলা(Bengal) আজ যা ভাবে তা কাল ভারত ভাববে। এবার সেটাই দেখা যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) বাংলায়। তাঁর দেখানো পথ ধরেই হাঁটতে চাইছেন দেশের(India) একের পর এক রাজ্য। মমতার শস্যবিমা প্রকল্প(Bangla Shasya Bima Yojna) এক নয়া রেকর্ড তৈরি করেছে। এবছর মোট ৭৪ লক্ষ ৩৮ হাজার ৪৫৮ জন কৃষক বিমা করেছেন। এত বেশি কৃষক এর আগে এই প্রকল্পে উৎসাহ দেখাননি। একই সঙ্গে রাজ্যের মোট ২০ লক্ষ ৯৫ হাজার ৮১৬ হেক্টর জমি শস্যবিমার আওতায় চলে এসেছে। আর তাই এই প্রকল্প দেশের অন্য রাজ্যগুলির কাছেও মডেল(Model) হয়ে উঠেছে। বিহার, ওড়িশা সহ বিভিন্ন রাজ্যের কৃষিদফতরের আধিকারিকেরা বাংলায় এসে এই শস্যবিমা প্রকল্প নিয়ে খোঁজখবর নিয়ে গিয়েছেন। আর সেটাই বলে দিচ্ছে, এই প্রকল্প অন্য রাজ্যের কাছে মডেল হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে পরিষেবা না দেওয়ায় ১০ কোটির বেশি জরিমানা ৫৩ হাসপাতালকে
রাজ্যের কৃষিদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদ জেলায় সবচেয়ে বেশি শস্যবিমা হয়েছে। ওই জেলার ৭ লক্ষ ২২ হাজার ৬৩৩ জন কৃষক শস্যবিমা করেছেন। দ্বিতীয় স্থানে আছে পূর্ব বর্ধমান জেলা। এই জেলার ৭ লক্ষ ১৫ হাজার ১১ জন কৃষক বিমার জন্য আবেদন করেছেন। পূর্ব মেদিনীপুরের ৭ লক্ষ ২ হাজার ৩৭১, নদীয়ায় ৬ লক্ষ ২ হাজার ৪৩৬ জন কৃষক বিমার আওতায় এসেছেন। শস্যের হিসাব দেখলে দেখা যাচ্ছে সারা রাজ্যের মধ্যে ৩৫ লক্ষ ৮০ হাজার ১৫২ জন কৃষক বোরো ধানের জন্য মোট ১০ লক্ষ ৩৬ হাজার ৪৪৩ হেক্টর জমিতে এই শস্যবিমা করেছেন। ২ লক্ষ ৮০ হাজার ৭৮১ জন চাষি আলুর বিমা করেছেন। এদের মধ্যে বাঁকুড়ায় ৩৭ হাজার ৭৫৭ জন, পূর্ব বর্ধমানে ১৪ হাজার ৭৬৫ জন এবং সব থেকে বেশি হুগলি জেলায় ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৩৪৯ জন কৃষক আলুর জন্য শস্যবিমা করেছেন। অথচ কয়েক বছর আগেও আলুর বিমা করার ক্ষেত্রে চাষিরা তেমন উৎসাহ দেখাতেন না। গতবছর অতিবৃষ্টির জন্য আলু চাষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেবার কৃষিদফতর বিমা করানোর জন্য বিশেষ অভিযান চালায়। তার প্রেই এই বছর এই সাফল্য উঠে এসেছে। একই সঙ্গে এটাও জানা গিয়েছে রাজ্যে ১৭ লক্ষ ৬৮ হাজার ৯১১ জন কৃষক তাঁদের জমিতে সর্ষে চাষের ক্ষেত্রে বিমা করেছেন। গম চাষের জন্য আবার ২ লক্ষ ২৫ হাজার ৩০৪ জন কৃষক বিমা করিয়েছেন।
আরও পড়ুন ‘জনমুখী’ এবং ‘জীবিকানির্ভর’ প্রকল্পগুলিতে বিশেষ গুরুত্ব রাজ্য বাজেটে
একই সঙ্গে রাজ্যের কৃষিদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বিমা দেওয়ার ক্ষেত্রে কয়েক বছর ধরে স্যাটেলাইটের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু তা নিয়ে গতবছর ক্ষোভ দেখা যায়। সেই কারণে এবার কর্প কাটিংও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এবছর প্রথম থেকেই বিমা করানোর দিকে জোর দেওয়া হয়েছিল রাজ্যের প্রতিটি জেলায়। প্রতিটি ব্লকেই ক্যাম্প করা হয়েছিল। পঞ্চায়েতগুলির সহযোগিতাও নেওয়া হয়েছিল। তার জেরে দেখা যাচ্ছে চলতি বছরে বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুরের বহু কৃষক বিমা করিয়েছেন। আগে ফসল ক্ষতি হলে বাংলার চাষিদের কপাল চাপড়ানো ছাড়া আর কিছুই করার থাকত না। কিন্তু এখন অতিবৃষ্টি, খরা বা পোকার আক্রমণে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে চাষিরা বিমার টাকা পাচ্ছেন। সেই কারণেই বাংলার শস্যবিমা প্রকল্পে দেশের কাছে আজ মডেল হয়ে উঠেছে। অবিজেপি শাসিত রাজ্যের কৃষি আধিকারিকেরা এখন বাংলায় এসে এই শস্যবিমা প্রকল্প কীভাবে রূপায়িত হচ্ছে তা দেখে নিজেদের রাজ্যে চালু করার চেষ্টা করছেন।