নিজস্ব প্রতিনিধি, বোলপুর: মোদি ভজনা করেও বিশ্বভারতীর উপাচার্যের ‘কুর্সি’তে দ্বিতীয়বার বসা হলো না ‘বিতর্কিত’ বিদ্যুৎ (নিন্দুকরা বলেন বজ্রবিদ্যুৎ) চক্রবর্তীর। বুধবারই বিশ্বভারতীর মতো স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে গেরুয়া রাজনীতির পীঠস্থান বানিয়ে তোলায় অভিযুক্ত ‘গেরুয়া চোলাধারী’ বিদ্যুতের বিদায় ঘন্টা বেজেছে। তার জায়গায় ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়েছেন সঞ্জয়কুমার মল্লিক। বর্তমানে কলাভবনের অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি। উপাচার্যের পদ থেকে বিদ্যুতের বিদায়ের খবরের পরেই উৎসবে মেতেছেন বিশ্বভারতীর শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শুরু করে পড়ুয়ারা। মিষ্টি বিলিও শুরু হয়েছে।
বিজেপি সমর্থক হওয়ার সুবাদেই একাধিক অভিযোগ থাকা সত্বেও বিশ্বভারতীর মতো ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপাচার্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বিদ্যুৎকে বসিয়েছিল মোদি সরকার। আর দায়িত্ব নিয়ে বোলপুরে আসার পরেই স্বেচ্ছাচারিতা চালানো শুরু করেছিলেন। সরাসরিই বিশ্বভারতীকে বিজেপির শাখা অফিসে পরিণত করার মতো বিস্ফোরক অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই পৌষ মেলা, বসন্ত উৎসব বন্ধ করে দেন বিদ্যুৎ।
শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক প্রভুদের (পড়ুন বিজেপি নেতৃত্বকে) সন্তুষ্ট রাখতে শিষ্টাচার ডিঙিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও কুৎসিত ভাষায় রাজনৈতিক আক্রমণ করেছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য। সারা বিশ্বে যিনি সম্মানিত সেই নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ তুলে উচ্ছেদ অভিযানেও নেমে পড়েছিলেন। একাধিক অধ্যাপক ও পড়ুয়াকে অকারণে সাসপেন্ড করেছিলেন। কলকাতা হাইকোর্টের তিন বিচারপতি খোলামেলাভাবেই উপাচার্য পদে বিদ্যুতের থাকার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
বিদ্যুৎ আর উপাচার্য থাকছেন না, তা জানার পরেই বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের মিষ্টিমুখ করতে দেখা যায়। মিষ্টি মুখ করেন ‘বিদ্যুৎ-বিরোধী’ হিসাবে পরিচিত অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য এবং অধ্যাপক সংগঠন ভিভিইউফার সদস্যরা। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ‘বেশ কয়েক বছর বাদে রাহুমুক্ত হল বোলপুর। ফের শান্তিতে বসবাস করা যাবে।’ গত কয়েক বছরে বিদ্যুতের নানা অপকর্মের সঙ্গীদের অবশ্য এদিন ম্রিয়মানই দেখিয়েছে। বেশ কয়েকজন ‘বস’ (পড়ুন বিদ্যুৎ) এতটাই মনমরা যে, বোলপুর ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন।