নিজস্ব প্রতিনিধি: কোভিড আর লকডাউনের জোড়া ফাঁড়া কাটিয়ে গতবছর অর্থাৎ ২০২২ সালে থেকেই রাজ্যের শিল্পবন্দরনগরী(Port and Industrial Town) তথা পূর্ব মেদিনীপুর(Purba Midnapur) জেলার অন্যতম মহকুমা শহর হলদিয়ার(Haldia) বুকে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার আরাধনা পর্ব। এবার অর্থাৎ ২০২৩ সালে সেই আরাধনা আরও কিছুটা জৌলুস টেনে নিয়েছে। এদিন বিকেল থেকেই শহরে শুরু হয়ে গিয়েছে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার আরাধনা(Biswakarma Puja 2023)। হলদিয়ার বুকে এটাই সব থেকে বড় উৎসব। কার্যত দুর্গাপুজোই বলতে পারেন। অর্থের ছড়াছড়ি যেমন, থিম পুজোর জাঁকও তেমন। আর সেই পুজো দেখতে এদিন বিকাল থেকেই একের পর এক কারখানায়, মণ্ডপে মণ্ডপে উপচে পড়ছে ভিড়। কার্যত গত দুইদিনেই হলদিয়া শহর ও শিল্পাঞ্চলের বুকে বড় বড় সব পুজোর উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় হাতেগোনা কিছু পুজোর উদ্বোধন হচ্ছে। নিম্নচাপের বৃষ্টি থেমে যেতেই ছুটির দিন দুপুর থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে জনস্রোত হলদিয়ার বুকে।
হলদিয়া শহর ও শিল্পাঞ্চলের বুকে ৪ দিনের এই উৎসবে বাজেট কখনই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় না। কেননা শ্রমিকদের খুশি করতে শিল্পসংস্থাগুলিই এই পুজোতে লাখ লাখ টাকা খরচ করে। তাই হলদিয়ার বিশ্বকর্মা পুজোয় এবারে দেখা যাচ্ছে কোনও পুজোর বাজেট ২৫ লক্ষ টাকা তো কোনও পুজোর বাজেট ৩০ লক্ষ টাকা। আবার ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকার বাজেটের পুজোও আছে বিস্তর। তবে এবারে কিছুটা হলেও মূল্যবৃদ্ধির কাঁটায় বিদ্ধ হয়েছেন বিশ্বকর্মা। তার জন্য শ্রমিকেরাও যে খুব খশি মনে পুজো উপভোগ করছেন এমনটাও নয়। তবে তার মানে এই নয় যে তাঁরা পুজো থেকে দূরে। হয়তো নতুন জামাকাপড় হয়নি, কিন্তু ঘরেও বসে থাকেননি তাঁরা। হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের অনেক কারখানাতেই দীর্ঘদিন বেতন বাড়েনি শ্রমিকদের, ডিউটির সংখ্যা আগের চেয়ে কমে গিয়েছে। পকেটে টান পড়ায় মন ভাল নেই শ্রমিক কর্মচারীদের। তাঁদের মধ্যে আর উৎসাহ উদ্দীপনাও নেই আগের মতো। আর তাই হলদিয়ার বুকে বিশ্বকর্মা পুজোর পুরনো জৌলুস ফেরানো রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে পুজো কমিটিগুলির কাছে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে এবার ছোট বড় মিলিয়ে শ’দেড়েক পুজো হলেও মূল আকর্ষণ বড় বড় শিল্প সংস্থাগুলিতে তৈরি হওয়া ১৫-২০টি থিমের মণ্ডপ, প্রতিমা ও আলোর কারসাজি। দু’দিন আগে থেকেই শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানার গেট রঙিন আলোয় মুড়ে ফেলা হয়েছে। শহরের মূল সড়ক এইচপিএল লিঙ্ক রোড সহ কয়েকটি রাস্তায় রঙিন আলো জ্বালিয়েছে পেট্রকেম, ইন্দোরামা ধানসিরি সহ কয়েকটি শিল্প সংস্থা। এবার পুজোয় নজর কাড়ছে এক্সাইড, পেট্রকেম, ইন্দোরামা, মিৎস্যুবিশি, টাটা স্টিল, আইওসি রিফাইনারির পুজো মণ্ডপগুলি। এক্সাইড এবার কাঁচ ও স্টোন দিয়ে তাদের প্রতিমা তৈরি করেছে। টাটা স্টিল মাটির ভাঁড় কেটে মণ্ডপ তৈরি করেছে। শুকনো ফলের বীজ দিয়ে নির্মীত হয়েছে প্রতিমা। পেট্রকেমের প্রতিমা আবার রেশম সুতোয় তৈরি। হলদিয়া এনার্জি লিমিটেড এবার স্ক্র্যাপ মেটিরিয়াল দিয়ে পুজো মণ্ডপে তৈরি করছে চন্দ্রযান ৩। হলদিয়ার সিংহভাগ থিমের পুজোর প্রতিমা গড়েছেন মহিষাদলের ইছাপুরের শিল্পী সুভাষ জানা ও কালীপদ জানা। তাঁর কর্মশালায় তৈরি হওয়া এক একটি থিমের প্রতিমার দাম ৬০ থেকে ৭০হাজার টাকা। সুভাষের দাবি, ‘জিনিসপত্র, কারিগরদের মজুরি বাড়লেও প্রতিমার দর সেভাবে বাড়েনি।’ দুর্গাচকের আর এক শিল্পী নন্দলাল জানা জানিয়েছেন, ‘হলদিয়ায় আগের মতো তেমন বিশ্বকর্মা পুজোর জৌলুস নেই। ফলে বেশি দামের প্রতিমা বায়না দেয়নি কেউ।’