নিজস্ব প্রতিনিধি: এ যেন মেঘ না চাইতেই জল। যাকে নিয়ে প্রশ্ন, তিনি বলছেন আমি বিজেপিতেই আছি। অথচ তৃণমূল(TMC) জানিয়ে দিল তিনি এবার জেলা সভাপতি হচ্ছেন। তিনি যদি দলবদল না করে থাকেন তাহলে তৃণমূল কী তাঁকে জেলা সভাপতি বানাতো? তিনি যে দল বদল করেছেন এর থেকে বড় প্রমাণ আর কিছু হতেই পারে না। কার্যত এই যুক্তি তুলে ধরেই এবার বাগদার(Bagda) বিধায়ক(MLA) বিশ্বজিৎ দাসের(Biswajit Das) বিধায়ক পদ খারিজের জন্য কলকাতা হাইকোর্টে(Calcutta High Court) মামলা দায়ের করতে চলেছে বঙ্গ বিজেপি(BJP)। আর সেই মামলায় বিশ্বজিতের দলবদলের মক্ষম প্রমাণ হিসাবে তাঁরা তৃণমূলের দলীয় ঘোষণাপত্রকেই আদালতে পেশ করতে চলেছে। কেননা সেখানেই বিশ্বজিতের নাম জ্বলজ্বল করছে। সূত্রে খবর তৃণমূলের এই ঘোষণায় বিজেপি যতটা খুশি ঠিক ততটাই বেকাদায় পড়ে গিয়েছজেন বিশ্বজিৎ নিজে। কেননা তাঁর বুধায়ক পদ নিয়ে আগেই টানাটানি পড়ে গিয়েছিল, এবার কার্যত তা হারানোর মুখে এসে দাঁড়ালেন তিনি।
তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে বিশ্বজিৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গী। আগে কংগ্রেসে থাকলেও মমতার হাত ধরেই তিনি কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দেন তৃণমূলে। তার আগে ছিলেন কংগ্রেসে। তৃণমূলে যোগ দিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিতে বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষও হয়েছিলেন। ২০১১ সালে মমতা তাঁকে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী করেন বনগাঁ উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে। সেই ভোটে পরিবর্তনের হাওয়ায় ভর দিয়ে জিতেও যান বিশ্বজিৎ। ২০১৬ সালের ভোটেও জেতেন তিনি। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ কেন্দ্রে বিজেপি জিতে যাওয়ার পর থেকেই তৃণমূলে কোনঠাসা হয়ে পড়েন বিশ্বজিৎ। সেই বছরই মুকুল রায়ের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। সেটাও দিল্লিতে গিয়ে। তার জেরে পেয়ে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তাও। কিন্তু বিশ্বজিতের বিজেপিতে যোগদান মেনে নিতে পারেননি বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। মূলত তাঁর জন্যই বিশ্বজিৎ ফের তৃণমূল মুখো হন। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই জল্পনা ছড়িয়েছিল তিনি হয়তো তৃণমূলে ফিরে আসবেন। কেননা সেই নির্বাচনের ঠিক আগেই রাজ্য বিধানসভার শেষ অধিবেশনের শেষ দিনেই বিধানসভার অলিন্দে মুখ্যমন্ত্রী মমআত বন্দ্যোপাধ্যায়কে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে সবাইকে চমকে দেন বিশ্বজিৎ।
সেই সব দেখেও বিজেপি বাগদা থেকে বিশ্বজিৎকে প্রার্থী করে এবং সেই ভোটে জিতেও যান বিশ্বজিৎ। সেই জয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই বিশ্বজিৎ ফিরে আসেন তৃণমূলে। তার জেরে বিজেপি তাঁর বিধায়ক পদ খারিজের দাবি তোলে। যদিও বিশ্বজিৎ বার বার একই কথা জানিয়েছেন যে, ‘বিজেপি-র টিকিটে জিতেছি। আমি বিজেপি-র বিধায়ক। বিজেপিতেই আছি।’ কিন্তু এদিন তৃণমূল তাঁকে দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি করেছে। কার্যত বনগাঁর দায়িত্ব এবার বিশ্বজিতের হাতেই তুলে দিলেন মমতা। আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, বিশ্বজিৎ দল্বদল করে তৃণমূলে যোগ না দিলে কী মমতা তাঁকে দলের সাংগঠনিক জেলার সভাপতির পদে আনতেন? এর থেকে বড় প্রমাণই বা আর কী হতে পারে। কার্যত এই যুক্তিকেই তুলে ধরে এবার কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করতে চলেছে বিজেপি। অন্যদিকে তৃণমূল সূত্রে খবর, বিশ্বজিতের যদি বিধায়ক পদ খারিজও হয় তাহলেও চিন্তা নেই। কেননা তৃণমূলের হিসাব বলছে বিশ্বজিতের বিধায়ক পদ খারিজ হলে সেখানে উপনির্বাচন করাতে হবে। সেই নির্বাচনে দল তাঁকেই প্রার্থী করতে পারে।