নিজস্ব প্রতিনিধিঃ শেষবার এসেছিলেন ভাইফোঁটার ছুটিতে। বেশ কয়েকদিন পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন কাজে। পরেরবার আরও কিছুদিন বেশী থাকবেন কথা দিয়েও গিয়েছিলেন। কিন্তু কে জানত এই যাওয়াই শেষ যাওয়া। আর কোনও দিনই সদাহাস্য সৎপালের সঙ্গে দেখা হবে না তাঁর পরিবার পরিজনদের। তামিলনাড়ুর কুন্নুরের যে ভয়ঙ্কর কপ্টার দুর্ঘটনায় সস্ত্রীক মৃত্যু হয়েছে সিডিএস বিপিন রাওয়াতের সেই একই দুর্ঘটনাতে প্রাণ হারিয়েছেন দার্জিলিংয়ের সৎপাল রাই। তিনিই ছিলেন বিপিন রাওয়াতের সবথেকে কাছের লোক, তাঁর দেহরক্ষী। হাবিলদার সৎপাল রাইকে ছাড়া কোথাও যেতেন না তিনি। আর তাই সৎপাল অবসর নেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করলে বিপিন রাওয়াতই তাঁকে আটকেছিলেন। দুজনের ইচ্ছা ছিল একসঙ্গে ২০২৪-এ অবসর নেওয়ার। কিন্তু তা আর হল কৈ? বিধাতার লিখনে সৎপালকে সঙ্গে নিয়েই না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন ভারতীয় সেনার সর্বাধিনায়ক।
গত বুধবার তামিলনাড়ুর কেন্নুরে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াতের সঙ্গেই দার্জিলিংয়ের তাকদার বাসিন্দা সতপাল রাইয়ের মৃত্যু হয়। এই দুর্ঘটনায় কয়েকজনের দেহ এতটাই ঝলসে গিয়েছিল যে তাঁদের চিনতে যথেষ্ট অসুবিধা হচ্ছিল। সৎপাল রাইয়ের ছেলে নিক্কল দেহ শানাক্ত করার জন্য ডিএনএ টেস্টের আবেদন করেন। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে সৎপাল রাইয়ের বাড়ি থেকে সেনাবাহিনী রক্ত সংগ্রহ করে দিল্লি পাঠায়। অবশেষে শনিবার রাতে সেই ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট আসার পর রবিবার দুপুরে বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে করে সৎপালের দেহ দিল্লি থেকে বাগডোগরা হয়ে তাকদা পৌঁছচ্ছে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সৎপালের অন্ত্যেষ্টি আগামীকাল সম্পন্ন হবে।
দার্জিলিং পাহাড়ের তাকদার এক অজানা ছোট্ট গ্রাম গ্লেনর্বানে ১৯৭৮ সালে জন্ম সৎপালের। ২০০০ সালে সৎপাল সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। গত ২১ শে নভেম্বরই বেশ কয়েকদিন ছুটি কাটিয়ে ফের তিনি দিল্লিতে ফিরেছেন। তাঁর ছেলেও সেনাবাহিনীতে কর্মরত। খেলাধুলোর প্রতি বরাবরই আগ্রহ ছিল সৎপালের। তাই সেনাবাহিনীর ডাক পেয়ে হাসতে হাসতে দিল্লি পাড়ি দিয়েছিলেন। তাকদার সেই ছোট্ট গ্রাম গ্লেনবার্নে খেলাধুলা করে বেড়ানো ছেলেটিরই নিথর দেহ অবশেষে রবিবার কফিন বন্দী হয়ে বাড়ি ফিরল।
এদিন দুপুরে বাগডোগরাতে বিমানে করে সৎপালের দেহ নিয়ে আসার পরে প্রথমে ব্যাঙডুবি সেনা ছাউনিতে তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান তাঁর স্ত্রী মন্দিরা রাই,ছেলে বিকল রাই দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তা , শিলিগুড়ি পুরনিগমের প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান গৌতম দেব, শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক শ্রীনিবাস ভেঙ্কটরাও পাটিল সহ সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ আধিকারীরকরা। এরপর তাঁর পার্থিব দেহ নিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যরা দার্জিলিংয়ের তাকদার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সোমবার সেখানেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।