নিজস্ব প্রতিনিধি: শিলিগুড়ি, নিছক নয় মহকুমা শহর। কার্যত গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার এই শহর। শিলিগুড়িকে না ছুঁয়ে আপনি স্থলমাধ্যমে সড়ক বা রেলপথে আপনি না যেতে পারবেন সিকিম না যেতে পারবেন অসম বা ত্রিপু্রা। সেই শহরই উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র। বাম জমানায় এই শহর ছিল রীতিমত বামদুর্গ। পরিবর্তনের পরে সেই দুর্গের রাশ আলগা অবশ্যই হয়েছে, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে শিলিগুড়ি থেকে বিজেপি জয়ীও হয়েছে, কিন্তু সামগ্রিক ভাবে এই শহর এখনও তার চিরাচরিত বামপন্থাকে হারিয়ে ফেলেনি। বরঞ্চ শহরের অন্তরে তা ধরা রয়েছে অলিগলিতে, পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায়। এবার সেই শহরেই ফের লালঝড় তোলার বার্তা দিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আর সেই বার্তা তিনি দিলেন এই শহর থেকে বার বার বিধানসভা নির্বাচনে জিতে আসা রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যকে। সেই বার্তার খবর ছড়িয়ে পড়তেই শিলিগুড়ির ভোট ময়দান রীতিমত জমজমাট হয়ে উঠেছে।
ঘটনাচক্রে অশোকবাবু শুধুই রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীই নন, তিনি শিলিগুড়ি পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়রও। সিপিএম সূত্রের খবর, রবিবার সকালে অশোকবাবুকে ফোন করেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সেই সময়েই তিনি অশোকবাবুকে শিলিগুড়িতে আবার বামফ্রন্টের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা বলেন। অশোকবাবুও পরে জানান, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ফোন করেছিলেন এবং পুরভোটে লড়ার পাশাপাশি শিলিগুড়িতে দলকে জেতানোর কথাও বলেছেন। যদিও এই ফোনের আগের ছবিটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। শিলিগুড়ির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য একুশের বিধানসভা নির্বাচনে পরাস্ত হয়েছেন বিজেপির শঙ্কর ঘোষকে। এই শঙ্করই কিন্তু একসময়ে অশোকবাবুর ডান হাত ছিল। আদতে শিলিগুড়ির বাম ভোট ব্যাঙ্ক আর বাম সংগঠনের একটা বড় অংশই ঝুঁকে পড়েছে বিজেপির দিকে। বাম ভোট রামে চলে যাওয়াতে সেখানে শুধু অশোকবাবুই হেরেছেন তাই নয়, তৃণমূলকেও হারতে হয়েছে। জিতেছে বিজেপি। কিন্তু রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই সেই ছবিটা কিন্তু দ্রুত হারে বদলাতে শুরু করে দিয়েছে। কলকাতার পুরভোটের ফলাফল বলে দিচ্ছে বিজেপি এখন শুধু রাজ্যের এক প্রান্তিক রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হওয়া শুধুই সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
এই অবস্থায় শিলিগুড়িতে বামেরা ফের গড় দখলের স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু অশোকবাবু ছাড়া সেখানে এমন কোনও মুখ নেই যার কথা সবাই এক বাক্যে মেনে নেবেন। এদিকে একুশের ভোট যুদ্ধে পরাস্ত হওয়ার পরে পরেই অশোকবাবু জানিয়ে দেন তিনি রাজনীতি থেকে বিরতি নিচ্ছেন। কিছুদিন আগে তাঁর স্ত্রী রত্না ভট্টাচার্য প্রয়াত হয়েছেন। বয়স-নীতির কারণে জেলা কমিটি থেকে অব্যাহতিও নিয়েছেন। দলের হইয়ে এখনও কাজ করলেও আগের চেয়ে দৌড়ঝাঁপও কমিয়ে দিয়েছেন। এমনকি তিনি এটাও জানিয়ে দেন, এবারের পুরভোটে তিনি আর লড়াই করতে চান না। বরঞ্চ ‘নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন’ হিসেবে পরামর্শদাতার ভূমিকায় থাকতে চান। কিন্তু বুদ্ধবাবুর ফোন সব হিসাব গুলিয়ে দিয়েছে। রবি সকালের সেই ফোনের পরে পরেই শিলিগুড়ির বাম নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছে, অশোকবাবু তাঁর পুরাতন ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকেই ফের প্রার্থী হচ্ছেন। আর এই আবহেই শিলিগুড়ির ভোট জমে গিয়েছে। কেননা বিধানসভা নির্বাচনে শিলিগুড়ি থেকে জয়ী হয়ে এবার বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই বঙ্গ বিজেপিকে রীতিমত কঠোর নির্দেশ দিয়েছে শিলিগুড়ির দখল নিতেই হবে। সেই দখলের পথে বিজেপির মুখ শঙ্কর ঘোষ। তাঁকেই কার্যত মেয়র পদপ্রার্থী হিসাবে তুলে ধরে ভোটে যেতে চাইছে বিজেপি। আবার তৃণমূলও কোমর বাঁধছে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেবকে সামনে রেখে। গৌতমবাবুই এখন শিলিগুড়ি পুরবোর্ডের পুরপ্রশাসক হিসাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই অবস্থায় অশোকবাবুর মাঠে নামা শিলিগুড়ির পুরনির্বাচনকে এক অন্যমাত্রা দিতে চলেছে।