নিজস্ব প্রতিনিধি: বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের অপরাধী সাজিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল বিদ্যুতের অনুগামী প্রশাসন। কিন্তু তাঁদের ধাক্কা খেতে হল সেই হাইকোর্টেই। শুনতে হল হাইকোর্টের কড়া নির্দেশও। সব মিলিয়ে হোস্টেল(Hostel) খোলা নিয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে(Viswabharati University) পড়ুয়ারা যে আন্দোলন শুরু করেছিল সেই আন্দোলনকে কার্যত জয়ের মুখ দেখিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট(Calcutta High Court)। মঙ্গলবার বীরভূম(Birbhum) জেলার পুলিশ সুপার যে রিপোর্ট হাইকোর্টের হাতে তুলে দিলেন তা দেখেই কলকাতা হাইকোর্টের কড়া বার্তা গেল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর দিকে। সেই সঙ্গে গেল নির্দেশ, অবিলম্বে খুলে দিতে হবে হোস্টেল।
কোভিডের জেরে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল বিশ্বভারতীর স্বাভাবিক পঠনপাঠন। এখন কোভিডের জেরে রাজ্যের সব স্কুল কলেজ খুলে গিয়েছে, বিশ্বভারতীতেও পঠনপাঠন শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু খোলা হয়নি হোস্টেল। সেই হোস্টেল খোলার দাবিতেই আন্দোলন শুরু করেছিল বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা। তাঁদের ঘেরাও আন্দোলনের জেরে বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রায় ৮৫ ঘন্টা আটকে পড়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, জনসংযোগ আধিকারিক সহ বেশ কিছু কর্মী। শেষে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ঘেরাও মুক্ত হন তাঁরা। যদিও আদালত সেই সময় জানিয়ে দিয়েছিল পড়ুয়াদের আন্দোলনে তাঁরা কোনও হস্তক্ষেপ করবেন না, সেই সঙ্গে পড়ুয়াদেরও লক্ষ্য রাখতে হবে বিশ্বভারতীর স্বাভাবিক কাজকর্ম যেন ব্যাহত না হয়। কিন্তু তারপরও বিশ্বভারতীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ভবনের সব ঘরে তালা লাগিয়ে রাখা হয়েছিল। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন ও স্বাভাবিক কাজকর্ম ধাক্কা খেয়েছিল। অথচ সেই ঘটনার সঙ্গে কোনও যোগ ছিল না পড়ুয়াদের আন্দোলনের। তারপরেও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কলকাতা হাইকোর্টে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল যে পড়ুয়াদের আন্দোলনের জেরে বিশ্বভারতী স্বাভাবিক হচ্ছে না।
সেই অভিযোগের জেরেই গতকাল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজা শেখর মান্থা বীরভূম জেলার পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠীকে নির্দেশ দেন বিশ্বভারতীর পরিস্থিতিও নিয়ে মঙ্গলবার হাইকোর্টে রিপোর্ট দাখিল করতে। সেই রিপোর্ট এদিন হাইকোর্টে জমা পড়ে। তা দেখেই এদিন বিচারপতি কড়া নির্দেশ দেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে। সেই নির্দেশে বিচারপতি জানান, অবিলম্বে পড়ুয়াদের জন্য হস্টেল খুদে দিতে হবে। এতদিন ধরে অশান্তি চলছে বিশ্বভারতীতে, কেন কোনও পদক্ষেপ করছে না কর্তৃপক্ষ? অবিলম্বে ১৫ টি হস্টেলের তালা ভাঙতে হবে। সেই তালা ভাঙার সময় সেখানে উপস্থিত থাকবে বিক্ষোভকারীদের ২জন প্রতিনিধি, ২জন পুলিশকর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা। আগামী ১১ মার্চ বিশ্বভারতীতে সেমিস্টার। তার আগে পড়ুয়ারা যাতে হস্টেলে ফিরতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। পুরো বিষয়টি দেখবেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। আর তাঁকে এই বিষয়ে সাহায্য করবেন বীরভূম জেলার পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী। এরপরেও বিশ্বভারতীতে কোনও অশান্তি হলে এবার পুলিশকে সরাসরি সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ করবে। তবে সেই ঘটনার ভিডিও করতে হবে। যদি হোস্টেলের দরজা বন্ধ থাকে, তাহলে তালা ভেঙে ঢুকতে দিতে হবে। পরীক্ষা যেন সঠিকভাবে ও সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়, সেই বিষয়টির দায়িত্ব নিতে হবে প্রশাসনকে। দুটি গেটে পুলিশ থাকবে, যাঁরা দেখবেন বহিরাগতরা যেন ভিতরে না ঢুকতে পারে। পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার নির্ঘণ্ট ও সূচি অনুযায়ী ঘর বরাদ্দ করতে হবে হোস্টেলে।
এরপরেই বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে উদ্দেশ্য করে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজা শেখর মান্থা বলেন, ‘আপনি একজন প্রশাসক, দক্ষ হাতে প্রশাসন সামলাতে হবে। সব সমস্যাতেই পা ছুঁয়ে কাঁদলে হবে না।’ বিচারপতির এহেন কড়া পর্যবেক্ষণের পরে স্বাভাবিকভাবেই খুশি বিক্ষোভকারী পড়ুয়ারা। সূত্রে জানা গিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের এই কড়া নির্দেশের পরেই এদিন দুপুরেই বিশ্বভারতীতে হোস্টেল খুলে দেওয়া হয়েছে।