ধিকি ধিকি কয়লার কাছে বসে আছে নানা আর নাতি। চৈত্রের রোদে তেতে গেছে মাথা। তামাটে মুখে বলিরেখা দিয়ে ঝরে পড়ে ঘাম। আসর, তাই গাঁজা বেশি হয়ে গেছে। তুরীয় মৌজের মুঠো হাতে ঢিলে হয়ে যায় বাঁশি। চটের ফাঁকে জেগে থাকে প্রেমতক্তি-রতন কাটারি- সাফি।
দূরে মরা পোড়ে। ডোম- সাধকের ঝিম ধরা চোখ বলে, বড় শুভদিনে গেছে। ধোঁয়ার সীমানা ঘেঁষে ভক্তা জমায়েত। সিদ্ধির আনন্দে দেহ ফোঁড়া গোঙানি ম্লান হয়ে আসে।
জল-মধু-দুধে স্নান করে শিব। গহ্বরে জমা হয় ফল-ফুল-পাতা। গর্ভগৃহ জুড়ে কত অনু-অভিযোগ। সারি সারি জড়ো হাত।
মুখোশ জমা হয় বুঢ়্যা শিব চাতালে। পড়ে আছে রংচটা জটা, মলিন কাপড়ের নাক সিঁটকানো বাঘছাল খানি। কালিকা (kali) শুয়ে আছে কোলে। মুখে লেগে আছে বাসি মুড়ি আর বোঁদে।
ভাগচাষী বলদ নিয়ে আসে ছুটে, বট কোটরে রাখা আছে ছোট কলকে খানি। ভাগ পাবে শুধু শিব । জিলাপিও আছে।
এখানে দুঃখের বিলাসিতা হয়। বাখান-ও হয়ে যায় স্তুতি। সঙেরা জেগে ওঠে। ঢোলের তালে আদিদেব-ও বন্ধু হয়ে জোটে। তামাশা জমে ওঠে ধোঁয়া আর বাদ্যির সুখে। বাবুরা দ্যাশে আসি বুঢ়্যা শিব (Shiva) দ্যাখে, লুটাপাটি খায়। বড় রাগ হয়। দূর থেকে ভেসে আসে ধম্মরাজ সুর।
ভাঙামেলায় সকলেই চাপা পড়ে ঘোরানো ধোঁয়ার চাদরে। ভেসে আসে তৃপ্তি জড়ানো সমবেত গলা…
– নিসর্গ নির্যাস মাহাতো
ছবি: দেবরাজ দাস
(গ্রাম বাংলার চিত্র। অতি আধুনিকতার দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে চেনা চড়ক (Charak) উৎসবের সেই ছবি।)
সতর্কীকরণ: গাঁজা বেআইনি মাদকদ্রব্য।