নিজস্ব প্রতিনিধি: কংগ্রেসের(INC) নেতা রাহুল গান্ধি যখন দেশ জোড়ার পদযাত্রা করছেন তখন বাংলার বুকে তাঁরই দলের এক নেত্রী পুলিশকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়ার নিদান দিচ্ছেন। এই চরম বৈপরিত্য রীতিমত অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে বাংলার বুকে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে বীরভূমেরই(Birbhum) পাড়ুই(Parui) থানা এলাকার কসবা এলাকায় একটি প্রকাশ্য সভা থেকে পুলিশের উপরে ‘বোমা’ মারা এবং নির্দল প্রার্থীদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের(TMC) জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের(Anubrata Mondol) বিরুদ্ধে। সেই কেষ্টগড়ের দাঁড়িয়েই পুলিশকে(Police) গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়ার বার্তা দিয়েছেন প্রদেশ মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী সুব্রতা দত্ত(Subrata Dutta)। যে অনুষ্ঠানে সুব্রতা এই বার্তা দিয়েছেন সেটাও রাহুল গান্ধির ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র অঙ্গ ছিল। স্বাভাবিক ভাবেই ঘটনাটি ঘিরে অস্বস্তি ছড়িয়েছে প্রদেশ কংগ্রেসের অন্দরে। তবে সুব্রতার বক্তব্য যে দল সমর্থন করে না তা বীরভূম জেলা কংগ্রেসের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার জেরে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, তিনি এই ঘটনার জেরে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
আরও পড়ুন তিক্ততা কাটিয়ে উঠতে চায় শান্তিকুঞ্জ, যেতে পারেন মমতাও
বীরভূম জেলার রামপুরহাট মহকুমার হাসন(Hasan) বিধানসভা কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরেই কংগ্রেসের গড় হিসাবে পরিচিত জেলার রাজনীতিতে। তবে এখন সেখানে তৃণমূলেরই আধিপত্য। সেখানেই শুক্রবার ‘ভারত জোড়ো’ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন সুব্রতা। নিজের বক্তব্য রাখার সময়ে সুব্রতা বলেন, ‘পুলিশকে একদম ভয় করবেন না। পুলিশকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাবেন। বলবেন, আমাদের এখানে রুখছে, আমাদের সঙ্গে সন্ত্রাস করছে। তোমরা এখানে দাঁড়াও। একদম করবেন এটা। সকলে একসঙ্গে যাবেন। তার পর দেখবেন কী করে ওরা। দরকার পড়লে বোম মারতে হবে। যদি ভাইপো বলতে পারে, পুলিশ মাথায় গুলি করবে, তা হলে আমরাও কংগ্রেস বলছি, পুলিশের সারা বডিতে গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেব। এ জন্য আমাদের না হয় দু’চারটে লাশ পড়বে। আমরা এই ভাবেই চলব। আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে। দেওয়ালটা ভেঙে গিয়েছে। আমরা আর সইব না।’ সুব্রতার এই বক্তব্য নিয়েই এখন বিতর্ক শুরু হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সংবাদমাধ্যম সর্বত্র ভাইরাল হয়েছে সেই ভিডিও।
আরও পড়ুন রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রাই বদলে দিল মোদি-মমতার রসায়ন
সুব্রতার এই মন্তব্যের জেরে তাঁর ও কংগ্রেসের তীব্র সমালোচনা শুরু করেছে তৃণমূল ও বিজেপি। যদিও বামেরা এখনও সেভাবে মুখ খোলেনি। সুব্রতার বক্তব্য নিয়ে বীরভূমে তৃণমূলের সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘এখন বিরোধীরা এমন গরমাগরম বক্তৃতা করে বাজার গরম করার চেষ্টা করছে। কংগ্রেসের কিছুই নেই। তাই এ সব বলে প্রচারের আলোয় আসার চেষ্টা করছে। সব সন্ত্রাসের জবাব মানুষ আগেও দিয়েছে। আবার দেবে।’ বিজেপির বীরভূম জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা জানিয়েছেন, ‘কংগ্রেসের এখানে আর কিছু নেই। তাই তাঁরা এ সব বলছে। মানুষ ওদের প্রত্যাখ্যান করেছে। আগামী দিনেও করবে।’ ঘটনার জেরে ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, ‘এই ভাষা রাস্তার সমাজবিরোধীদের ভাষা। একজন নেত্রী একথা বলতে পারেন না। পুলিশকে ধন্যবাদ দেব যে তাঁরা এটা সহ্য করেছেন। তবে আমি পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’ ঘটনার জেরে মুখ খুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীও। তিনি জানিয়েছেন, ‘দল ওনার বক্তব্যের সঙ্গে সহমত নয়। দল এই মন্তব্য সমর্থন করেও না। ওনার মন্তব্যের দায় ওনাকেই নিতে হবে। দল এই মন্তব্যের দায় নেবে না।’