নিজস্ব প্রতিনিধি: বছর ৮ আগেকার কথা। সালতা ২০১৫ সাল। পুজোর সময়। খাস কলকাতার ঘটনা। কার্যত গোটা কলকাতার(Kolkata) পুজোকে নাড়িয়ে দিয়েছিল সেই ঘটনা। দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কে(Deshapriya Park) বিশাল দুর্গাপ্রতিমা দর্শনকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার কাণ্ডে বেধে গিয়েছিল সেই বছর। সেই পুজো মণ্ডপের চতুর্দিকে ধেয়ে আসা উৎসুক মানুষের সুনামি সামাল দিতে গিয়ে নেজাহাল দশা হয় পুলিশ(Police) প্রশাসনের। শেষে কোনও উপায় না দেখে ও বড়সড় দুর্ঘটনা এড়াতে অষ্টমির বিকালে পার্কে ঢোকা ও প্রতিমা দর্শন দুটিই বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। সেই ঘটনা গড়ায় আদালত পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তার স্বার্থে কোনও অবস্থাতেই প্রতিমা-সহ মণ্ডপের উচ্চতা বা সুপার স্ট্রাকচার ৪০ ফুটের বেশি করা যাবে না বলে নির্দেশ দেয় আদালত। কিন্তু আদালতের সেই নির্দেশ না মেনেই বহাল তবিয়তে বাংলাজুড়ে কোথাও ৪০ ফুট বা কোথাও ৮০ ফুটের প্রতিমার তৈরি করে অনেকেই চমক দিচ্ছেন। সেই লড়াইয়ে এবার সামিল দেবী সরস্বতীও(Devi Saraswati)।
আরও পড়ুন সুন্দরবনের জৈব দুধ কাঁচের বোতলে ভরে বিক্রি শহরে
রাজ্যের ইস্পাতনগরী দুর্গাপুর(Durgapur)। সেখানকার স্টিলটাউনশিপ এলাকার বি-জোনে ভারতী অ্যাভেনিউয়ের নীচের দিকে ইস্পাতপল্লী এলাকায় এবারে বড় চমক দিচ্ছে সেখানকার নেতাজী ক্লাব। কেননা তাঁদের তৈরি প্রতিমার উচ্চতা ৪০ ফুট। এর আগে তাঁরা ২০ ফুট ও ৩০ ফুটের প্রতিমা তৈরি করে চমক দিয়েছে। এবারে সেই রেকর্ডকেও ছাপিয়ে যেতে চাইছে তারা। এবারে তাদের ১৩তম বর্ষের পূজো। বাজেট ৫ লক্ষ টাকা। সেই টাকার একটা বড় অংশই খরচ হচ্ছে প্রতিমা তৈরি করতে। পুজোর উদ্বোধন ২৫ জানুয়ারি। ৪দিন বাদে ২৮ তারিখ হবে নিরঞ্জন। মাঝে সব দিনই থাকছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এবারে চলে আসুন আমাদের কলকাতার পাশেই থাকা খড়দহের(Khardaha) বুকে। সেখানে সূর্য সেন পাড়ায় যে প্রতিমা নির্মাণ করা হচ্ছে বাগদেবীর তার দৈর্ঘ্য ৮০ ফুট। তবে উচ্চতা বেশি নয়, মাত্র ৫ফুট। কিন্তু সেই আধশোয়া বাগদেবীকে দেখতে কত হাজার মানুষ ভিড় করবেন সেটা ভেবেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে এলেকাবাসীর। এই পুজোর আয়োজনের দায়িত্ব আছে বালক সংঘ নামের একটি ক্লাব। এটা তাদের ৩৩ তম বছরের পুজো। অর্ধশোয়া সরস্বতী প্রতিমার দৈর্ঘ্য ৮০ ফু হলেও তাঁর পাশে থাকা বাহন হাঁস লম্বায় ৭ ফুট। তাঁরও উচ্চতা ৫ফুট।
আরও পড়ুন জিয়াগঞ্জে নেতাজির স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি সংরক্ষণের দাবি
চলে আসুন পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা(Kalna) শহরে। এই শহর বিখ্যাত সরস্বতী পুজোর(Saraswati Puja) জন্য। এবারেও সেখানে আয়োজনের অবস্থা এখন একদম শেষ মুহুর্তে এসে দাঁড়িয়েছে। শহরের বিভিন্ন ক্লাব নানা থিমের প্রতিমা এবং মণ্ডপ তৈরির কাজে নেমে পড়েছে। কোথাও সংবাদপত্র দিয়ে মণ্ডপ গড়া হচ্ছে তো কোথাও মাটির খুপরি দিয়ে। আবার কোথাও খড়, পাটকাঠি, কাপড়, তেঁতুলের ছাল, তালপাতা, পালক-সহ নানা উপকরণে মণ্ডপ সাজিয়ে তোলা হচ্ছে তো কোথাও মণ্ডপ জুড়ে পুরুলিয়ার পাহাড়, ছৌ নৃত্য-সহ নানা সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে। কোথাও আবার পরিবেশবান্ধব প্রতিমা তৈরি হচ্ছে খড় ও দড়ি দিয়ে। এমনকি প্লাই, বাঁশ, কাঠ-সহ নানা সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে শহরেরই এক কোণে পড়ে থেকে নষ্ট হতে বসা এক শিবমন্দিরের আদলে মণ্ডপ। তবে এবারের পুজোয় সব থেকে বড় আকর্ষণ হতে চলেছে ‘টুইন টাওয়ার’। পাশাপাশি নজর কাড়বে লালকেল্লা, বরফের দেশ, ডোকরা শিল্প, সুন্দরবন, সহজ পাঠের মতো নানা মন্ডপ বা থিম।