নিজস্ব প্রতিনিধি: তিনি দুই দফার বঙ্গ বিজেপির(Bengal BJP) সভাপতি। দলের সাংসদ। অথচ তিনিই কী না ডাক পেলেন না বাংলার বুকে ২৪’র ভোটের(General Election 2024) প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম নির্বাচনী প্রচারের জনসভায়! ভাবা যায়! আসলে পদ্ম শিবিরের গোষ্ঠীকোন্দল কোন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে তা এখন আর প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে সভা করিয়েও ঢেকে রাখা যাচ্ছে না। বাইরে বেড়িয়ে চলে আসছে দলের কঙ্কাল। লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও ঘোষিত হয়নি। কিন্তু এদিন অর্থাৎ ১ মার্চ শুক্রবার থেকেই বাংলায় কার্যত নির্বাচনী জনসভা করা শুরু করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি(Narendra Modi)। কেননা তাঁর লক্ষ্য সংসদের নিম্নকক্ষ বা লোকসভায় এনডিএ শিবিরকে ৪০০’র বেশি আসন পাইয়ে দেওয়া। নিজে মুখেই তাই সংসদে দাঁড়িয়েই শ্লোগান তুলেছেন, ‘আবকে বার ৪০০ পার’। সেই সূত্রেই বাংলা থেকে মোদির লক্ষ্য ৩৫জন সাংসদকে জিতিয়ে দিল্লি নিয়ে যাওয়া। যদিও এই ৩৫জনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিয়েছে তাঁর সেনাপতি তথে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। অথচ প্রধানমন্ত্রীর সেই আরামবাগের সভাতেই গরহাজির বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ(Dilip Ghosh)।
আরামবাগ(Aarambag) দীর্ঘদিন বাম দুর্গ হিসাবেই পরিচিতি পেয়েছিল। পরিবর্তনের পরেও যে সেখানে বাম প্রভাব বেশ ভালই রয়ে গিয়েছে সেটা টের পাওয়া গিয়েছিল উনিশের লোকসভা ভোটে। সেই নির্বাচনে আরামবাগ তৃণমূলের দখলে গেলেও বিজেপি প্রার্থীর সঙ্গে ভোটের ব্যবধান ছিল দেড় হাজারেরও কম। আর তাই এবার মোদিকে দিয়ে আরামবাগ থেকেই সভা শুরু করে বাংলার ৩৫ আসন নিশ্চিত করার পথে হেঁটেছিল পদ্মশিবির। কিন্তু বিধি বাম। কেননা সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই সভা সফল করে তুলতে সব রকমের পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, দলের গোষ্ঠী কোন্দল মেটানোর কোনও পদক্ষেপই করা হয়নি। মোদির সভায় নাকি ডাক পাননি বঙ্গ বিজেপির দুই প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও রাহুল সিনহা। দুইজনই এই নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও ঘনিষ্ঠদের মধ্যে নিজেদের ক্ষোভের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। সভামঞ্চেও মোদির সঙ্গে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে দেখে গেলেও দেখা যায়নি রাহুল ও দিলীপকে। তবে ছিলেন হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়।
দিলীপ নিজে এদিন ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতনে। সেই এলাকাটি তাঁর সংসদীয় কেন্দ্র মেদিনীপুরের মধ্যেই পড়ে। দিলীপ এদিন নিজেই তাঁর ফেসবুক পেজে ছবি দিয়ে জানিয়েছেন, দাঁতন বাজারে চা-চক্র এবং জন সংযোগ কার্যক্রম সেরেছেন তিনি এদিন। সেই সঙ্গে হনুমানদেরও সেবা করেছেন। ছবি দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আজ সকালে দাঁতন বাজারে প্রভুর ভক্তদের সঙ্গে দেখা। খাবার নিয়ে ওদের দিকে এগিয়ে যেতে ওরাও যত্ন করে হাত থেকে নিয়ে খেল। কথায় বলে শ্রী রাম চন্দ্রের সেবা করার থেকেও বেশি তাঁর শ্রেষ্ট ভক্ত হনুমানের সেবা করলে বেশি খুশি হন প্রভু। আপনারাও যেখানে হনুমান দেখবেন নিজের সাধ্য মত কিছু করার চেষ্টা করবেন ওদের জন্য।’ পরে দাঁতন মানব কল্যাণ কেন্দ্রে বিশেষ ভাবে সক্ষম বাচ্চাদের সঙ্গেও সময় কাটিয়েছেন তিনি। দিলীপ মোদির সভা নিয়ে মুখ না খুললেও তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, তাঁকে আরামবাগের সভায় আমন্ত্রণই জানানো হয়নি দলের তরফে। তাই তিনি জাননি। মজার কথা মোদির সভায় এদিনে যেমন সেভাবে ভিড় হয়নি, মেরেকেটে হাজার ৫০ লোক গিয়েছিলেন, তেমনি এটাও ধরা পড়েছে মোদির সেই ক্রেজ আর নেই বঙ্গে। দিলীপ সেই সভা থেকেও দূরে রয়ে গেলেন।