কৌশিক দে সরকার: আলিপুরদুয়ার(Alipurduyar)। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা বিজেপি সাংসদ জন বার্লার(John Barla) জেলা। দীর্ঘদিন ধরেই আলিপুরদুয়ারের মানুষের দাবি ছিল পৃথক জেলার। জলপাইগুড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন করে সেই পৃথক জেলা গড়ে দিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। কিন্তু আলিপুরদুয়ার জেলার মানুষ সেই পৃথক জেলা গঠনের উদ্যোগকে কোনও দামই দেননি। উনিশের লোকসভা ভোটে আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্র থেকেই জয়ী হয় বিজেপি(BJP)। জেতেন জন বার্লা। পরে হন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। একুশের ভোটেও আলিপুরদুয়ার জেলার জনতা ছিল বিজেপির সঙ্গেই। রাজ্যের মধ্যে একমাত্র এই জেলারই সব আসনে জয়ী হয় বিজেপি। এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের পালা। কার্যত বার্লার অগ্নিপরীক্ষা। কেননা জেলায় বহু যোজন পিছিয়ে তৃণমূল(TMC)। তারপরেও যদি বিজেপি জেলা পরিষদ ও জেলার ৬টি পঞ্চায়েত সমিতি দখল করতে না পারে তাহলে বলার কিছু থাকবে না।
আরও পড়ুন বিজেপি যোগ ফাঁস হতেই সুর বদল নওশদের, সরছেন সমর্থকেরা
আলিপুরদুয়ার জেলায় ব্লকের সংখ্যা মাত্র ৬টি। মাদারিহাট, কুমারগ্রাম, কালচিনি, ফালাকাটা এবং আলিপুরদুয়ার-১ ও আলিপুরদুয়ার-২। প্রতিটি ব্লক থেকে জেলা পরিষদের আসন সংখ্যা রয়েছে ৩টি করে। ১৮ আসনের পরিষদে মাত্র ১০টি আসন জিতলেই বোর্ড গড়তে পারবে যে কেউ। একুশের ভোটের পরিসংখ্যান বলছে, জেলা পরিষদের ১৬টি আসনেই এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। তৃণমূল মাত্র ২টিতে। সেই হিসাবে বিজেপির এবার ঢ্যাং ঢ্যাং করে জেলা পরিষদ দখল করার কথা। শুধু জেলা পরিষদই নয়, জেলার ৬টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ৫টিই বিজেপি দখলে যাওয়া উচিত। জেলার ৬৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যেও ৫০টিতে ক্ষমতা দখল করার মতো অবস্থায় আছে গেরুয়া শিবির। দীর্ঘদিন ধরেই এই জেলায় বিজেপি ভাল ভোট ও সংগঠন রয়েছে। কিন্তু সেই ভোট কোনওদিন বিজেপিকে জয়ের মুখ দেখাতে পারেনি ২০১৯ সালের আগে। উনিশের লোকসভা ভোট এবং একুশের বিধানসভা ভোট, এই দুই নির্বাচনেই আলিপুরদুয়ার জেলার যাবতীয় তৃণমূল বিরোধী ভোট গিয়ে জমেছিল বিজেপির বাক্সে। তার জেরে দুই নির্বাচনেই সেখানে বড় জয়ের মুখ দেখছিল বিজেপি। এখনও সেই পরিস্থিতির খুব একটা বদল ঘটায়নি।
আরও পড়ুন আরাবুলকে ঝেড়ে ফেলছে তৃণমূল, দায়ের খুনের অভিযোগ
এতটা এগিয়ে থেকেও বিজেপির অন্দরেই চোরাস্রোত বয়ে চলেছে। অনেকেই তৃণমূলের দিকে পা বাড়িয়ে বসে আছেন। বিজেপির হয়ে যারা ভোটে লড়াই করছেন, জেতার পরে তাঁরা যে সবাই বিজেপিতেই থাকবেন তার নিশ্চয়তা নেই। তারপর আছে পদ্মশিবিরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। কিন্তু সব থেকে বড় প্রশ্ন হিসাবে সেখানে উঠে এসেছে বিজেপিকে ভোট দিয়ে লাভ কী হবে? কেননা উনিশ ও একুশ, দুই ভোটে জিতেও বিজেপির থেকে জেলাবাসীর প্রাপ্তি শূণ্য। না জেলার সাংসদের কাছ থেকে তাঁরা কিছু পেয়েছেন, না মোদি সরকার তাঁদের কিছু দিয়েছে। এটাই ভাবাচ্ছে বিজেপিকে। আর এই ভাবনাকেই হাতিয়ার করে তৃণমূল পাল্টা ফিরিস্তি দিচ্ছে আমজনতাকে।
আরও পড়ুন সাড়া দেননি শাহ, কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা চেয়ে হাইকোর্টে নওশদ
লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, জয় জোহর, জমির পাট্টা, চা-সুন্দরী – এইসব কিছু দিয়েই জেলাবাসীকে জীবনের দৌড়ে এগিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কার্যত রাজ্য সরকারের আর্থসামাজিক প্রকল্পগুলিকেই এবারে পঞ্চায়েত ভোটের ময়দানে হাজির করেছে তৃণমূল। এই একটি জায়গাতেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বিজেপি। কেননা তাঁদের প্রতিশ্রুতি ভিন্ন আর কিছুই দেওয়ার নেই। আর বিজেপি প্রতিশ্রুতি কী জিনিস সেটা বাংলা কেন গোতা ভারতের মানুষই জানেন। তবুও বলতে হয় এই প্রথমবার জেলা পরিষদ দখলের দোরে হাজির হয়েছে বিজেপি। কিন্তু দোর থেকে চেয়ার দখলের বাকি কাজটা জন বার্লাকেই করতে হবে। কেননা জেলায় বিজেপির মুখ তিনিই। সফল হলে তিনি ইতিহাস গড়বেন, নাহলে তৃণমূলই ঘুরে দাঁড়াবে যা চব্বিশের ভোটে বার্লার মাথাব্যাথা বাড়াবে।